অবৈধ চক্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা,
ডাক্তারদের একাংশ
ভূতটা ঢুকে রয়েছে সর্ষের মধ্যেই!
ওষুধের গুণাগুণ বিচারের দায়িত্ব যাদের উপরে, সেই কেন্দ্রীয় ওষুধ মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিডিএসসিও-র স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ফলে বাজার থেকে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ যে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন, তা কতটা নিরাপদ, প্রশ্ন উঠে গেল তা নিয়েই।
গত মঙ্গলবার সংসদের দুই কক্ষে সংসদীয় কমিটি যে রিপোর্টটি পেশ করেছে, সেখানে এ দেশে ওষুধ নিয়ে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ওষুধের গুণাগুণ বিচার করে যে সংস্থা বাজারে ছাড়ার ছাড়পত্র দেয়, তার কর্মী-অফিসারদের একাংশ এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কোনও কোনও ওষুধ সংস্থার ‘অবৈধ চক্র’ রয়েছে বলে অভিযোগ। সিডিএসসিও-র ‘কড়া নজরদারি’ সত্ত্বেও এই চক্র যে পুরোদমে চলছে, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলেই জানিয়েছে ওই কমিটি। এই অবৈধ চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে সংসদীয় কমিটি কয়েকটি ওষুধ নির্মাতা সংস্থা এবং দেশের বিভিন্ন সরকারি ও নামকরা বেসরকারি হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসককে (যাঁরা অবৈধ ভাবে ওষুধের ছাড়পত্র দিয়েছেন বলে অভিযোগ) এ ব্যাপারে চিহ্নিত করেছে। এর সঙ্গে কমিটি ওষুধ পরীক্ষার পদ্ধতিকেও ভ্রান্ত বলায় বিভিন্ন ওষুধ কতটা নিরাপদ, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। ওষুধ সংস্থাগুলি নিজেরাই বিশেষজ্ঞদের দিয়ে নিজেদের ওষুধ সম্পর্কে শংসাপত্র লিখিয়ে তা ড্রাগ কন্ট্রোলে জমা দিচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছে সংসদীয় কমিটি।
যে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দিকে সংসদীয় কমিটি আঙুল তুলেছে, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন নামী হাসপাতালের অধ্যাপক কিংবা বিভাগীয় প্রধান। তাঁদের মধ্যে কলকাতার তিনটি মেডিক্যাল কলেজের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও রয়েছেন। যাঁরা সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ জানানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সরকারি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, ‘বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ওষুধ সংস্থাগুলিই ওষুধের গুণমান সম্পর্কে রিপোর্ট তৈরি করেছে এবং বিশেষজ্ঞরা তাতে সই করে দিয়েছেন মাত্র। তাই সেগুলির বয়ান যেমন হবহু এক, তেমন দেশের চার প্রান্ত থেকে আসা রিপোর্ট একই দিনে জমা পড়েছে দিল্লির ড্রাগ কন্ট্রোলের অফিসে। এটাই সন্দেহ উদ্রেকের পক্ষে যথেষ্ট।’
সারা দেশে কয়েক হাজার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও, কোনও ওষুধের ছাড়পত্র দিতে কেন মাত্র তিন-চার জন চিকিৎসককে দিয়েই পরীক্ষা করানো হয়, সেই প্রশ্নও তুলেছে সংসদীয় কমিটি। কয়েকটি ওষুধের উদাহরণ দিয়ে কমিটি বলেছে, ওই সব ওষুধকে ছাড়পত্র দিতে যে চার-পাঁচ জন বিশেষজ্ঞকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা সবাই দিল্লির। কমিটির মন্তব্য, এ থেকে মনে হচ্ছে, দিল্লি ছাড়া যেন দেশের আর কোথাও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অনেক ওষুধ সংস্থা সিডিএসসিও, ড্রাগ কন্ট্রোল এবং বিশেষজ্ঞদের এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে যে, সংস্থাগুলি যেমন চাইছে তেমন ভাবেই রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।
স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, বহুজন সমাজবাদী পার্টির নেতা ব্রজেশ পাঠক বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবার যে ছবিটা আমাদের সামনে ফুটে উঠেছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উচিত গোটা বিষয়টির তদন্ত করা এবং রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।” কমিটির সদস্যদের মতে, আসলে ড্রাগ কন্ট্রোলারের ‘ঘোষিত দায়িত্ব’-এর মধ্যেই গলদ রয়েছে। ড্রাগ কন্ট্রোলার সংস্থা তৈরি হয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির চাহিদা, প্রয়োজন ও প্রত্যাশা মেটানোর জন্য। সেখানে আমজনতা বা রোগীদের স্বার্থ কোনও দিনই প্রাধান্য পায়নি।
কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশে আমজনতার স্বার্থই সব থেকে বেশি প্রাধান্য পায়। কিন্তু এখানে অনেক চিকিৎসক রোগীদের কথা না ভেবে ওষুধ সংস্থাগুলির দালাল হিসেবে কাজ করছেন।
ওই রিপোর্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে। কারণ, যে কোনও ওষুধ নিয়ম মেনে পরীক্ষা করার পর ছাড়পত্র দেওয়ার দায়িত্বে সিডিএসসিও। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে সংস্থার দিকে অভিযোগের তির, সেই সিডিএসসিও-র বক্তব্যও জানতে চাওয়া হবে। অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার কাছে অভিযোগও জানাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.