|
|
|
|
আধ ঘণ্টা ‘ডিউটি’ বাড়ার নোটিসে ক্ষুব্ধ শিক্ষকমহল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কর্মী-আধিকারিকদের মতো শিক্ষকদেরও আসতে হবে সকাল ১০টায়। ছুটি সেই বিকেল সাড়ে ৫টায়! বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই নোটিস ঘিরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষকমহলে। প্রতিবাদে আন্দোলনের কথাও ভাবতে শুরু করেছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের এই ক্ষোভের জেরে অস্বস্তিতে পড়েছেন কর্তৃপক্ষও।
নোটিসে উল্লেখ রয়েছে যে, ৪ এপ্রিল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলেরই কাজের সময় নির্ধারিত হয়েছে সকাল ১০টা থেকে (সাড়ে ১০টার বদলে) বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। ১০টা ১৫ মিনিটের পরে এলে সেটা ‘দেরি’ বলে গণ্য হবে। ১০টা ৪৫-এর পরে ‘গরহাজির’ ধরে নেওয়া হবে। কর্মী-আধিকারিকদের সঙ্গেই এই নিয়ম মানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বিভাগের প্রধানদেরও নোটিস পাঠানো হয়েছে। নতুন নিয়ম মেনে বিভাগীয় প্রধানরা যাতে ক্লাসের সময় নির্ধারণ করেন, তাও বলা হয়েছে। আর এতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-মহলে। রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এমন নিয়ম চালু নেই বলে দাবি করে তাঁরা উপাচার্যের কাছে নতুন নিয়মের ব্যাখ্যাও চেয়েছেন। এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছেন কয়েক জন শিক্ষক-সদস্য। কী ভাবে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করে নোটিস দেওয়া হল, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে উপাচার্যের কাছে।
এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য তথা বাংলা-র বিভাগীয় প্রধান বাণীরঞ্জন দে বলেন, “শিক্ষকদের হাজিরার বিষয়ে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে কোনও আলোচনাই হয়নি। তা সত্ত্বেও এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে কী ভাবে নোটিস দেওয়া হল তা জানতে চেয়ে উপাচার্যের কাছে চিঠি দিয়েছি।” নোটিসের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে প্রতিবাদে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষকেরা। উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীর অবশ্য বক্তব্য, “রেজিস্ট্রার যে নোটিস দিয়েছেন তার বয়ান আমি দেখিনি। পরে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।”
নোটিসটি গত ২৪ এপ্রিলের। বিভিন্ন বিভাগে নোটিস পাঠানোর নির্দেশ হয় গত ২৬ এপ্রিল। রেজিস্ট্রার রণজিৎ ধর ওই নোটিস পাঠান। সে দিন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে। সত্যিই উপাচার্যের অজ্ঞাতসারে নোটিস দেওয়া হয়েছিল কি না, সে নিয়েও নানা জল্পনা চলছে। যদিও রেজিস্ট্রার রণজিৎ ধরের বক্তব্য, “নোটিসে আলাদা করে কোনও শ্রেণির উল্লেখ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলেই কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে বলা হয়েছে মাত্র। তা ছাড়া শিক্ষকদের কাজের সময় (প্রফেসরদের সপ্তাহে ১৪ ঘণ্টা, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরদের ১৬ ঘণ্টা) ইউজিসি-র নিয়মেই বলা রয়েছে। আমরা আলাদা করে কিছু করতে পারি না।” যখন থেকে শনিবার ছুটি ঘোষণা হয়েছে, তার পর থেকেই কাজের নির্ঘণ্ট একই এবং নতুন কিছু করা হয়নি বলেও কর্তৃপক্ষের তরফে বলার চেষ্টা হচ্ছে। অন্য একটি মহলের আবার বক্তব্য, অনেক বছর আগেই নির্ধারিত-সূচি এত দিন লাগু করেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখন কার্যকর করতে গিয়েই হয়েছে বিপত্তি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উপাচার্য কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন। তাঁর অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি। ১১টাতেও অনেক কর্মীকে তিনি দেখতে পাননি। আবার বিকেল ৪টে-সাড়ে ৪টেতেও অনেককে চলে যেতে দেখেছেন। সে কারণেই নোটিস দিয়ে কাজের সময়-সীমা মনে করিয়ে দেওয়া হল। নোটিসের দ্বিতীয় ভাগ নিয়েই শিক্ষকদের আপত্তি। যেখানে বিভাগীয় প্রধানদের নতুন নিয়ম মেনে কর্মপদ্ধতি ঠিক করার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিক্ষকদের চাপে নোটিসের দ্বিতীয় ভাগটি প্রত্যাহার করে নতুন নোটিস জারি হতে পারে। |
|
|
|
|
|