রানার্স খেতাব মুঠোয় ইস্টবেঙ্গলের
|
লাল-হলুদ জার্সি পরে তা হলে কলকাতায় আই লিগের শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন?
যুবভারতীর করিডরে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা শুনে চোখ টিপলেন টোলগে ওজবে। তার পর বললেন, “পরের বার কোথায় খেলব মাথায় আছে। এই মাঠে তো খেলবই!” জার্সির রং না বলে হাসতে হাসতে যে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার দিলেন তা জল্পনা উসকে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু কবে তিনি সরকারি ভাবে জানাবেন পরের মরসুমের জার্সির রং? আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রবিন সিংহ, মেহতাব হোসেন। একটু দূরে কোচ ট্রেভর মর্গ্যান। টোলগে যা ইঙ্গিত দিলেন তাতে মে-র মাঝামাঝি দেড় মাস ইউরোপে ছুটি কাটাতে যাওয়ার আগেই জানিয়ে দেবেন সিদ্ধান্ত। এ দিন টুইটারে নির্মল ছেত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি মোহনবাগানে যাচ্ছেন। লিগ শেষ হওয়ার আগে এমন ঘোষণা অভিনব।
টিম লিস্টে প্রথম একাদশে টোলগের নাম না থাকায় প্রেসবক্সে জোরালো জল্পনাতা হলে কি ব্রিটিশ রোষে পড়লেন ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার? ট্রেভর মর্গ্যান তো রবিবারই মন্তব্য করেছিলেন, “ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ম্যান ইউ ছেড়ে গেলেও ওরা প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে।” ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গল কোচ অবশ্য বললেন, “প্রচণ্ড ক্লাম্ত ছিল বলেই টোলগে খেলতে চাইছিল না। তাই ওকে পরে নামিয়েছি।” ক্লান্ত? কিন্তু টোলগে নামার পরই তো গোল পেলেন? দলও জিতল। ইস্টবেঙ্গল কোচ এ বার কুটনীতিক, “সঞ্জুও নেমেছিল গোলের আগে। ও দুর্দান্ত খেলেছে। টোলগে-সঞ্জুকে একসঙ্গে নামিয়ে চূড়ান্ত আক্রমণে যেতে চেয়েছিলাম। কাজে লেগেছে।” |
ডেম্পো চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই যুবভারতীতে ট্রফি নেবে আর্মান্দো কোলাসোর দল। তবে সোমবারের ম্যাচের আকর্ষণ ছিল দুটো—
এক) জিতে রানার্স হওয়ার দৌড়ে ইস্টবেঙ্গল থাকবে কি না?
দুই) এটাই কি মর্গ্যানের কোচিংয়ে টোলগের আই লিগের শেষ ম্যাচ? ইস্টবেঙ্গল রানার্স হওয়ার ব্যাপারে সবার আগে চলে গেলেও, টোলগে নিয়ে ধোঁয়াশা কিন্তু এ দিন কাটল না। তবে যেটা প্রমাণ হয়ে গেল, তা হল টোলগে মাঠে না নামলে মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গল জমাট বেঁধে না। ফেরে না ছন্দে। স্পোর্টিং ক্লুবের পার্ক-ডাউসনদের দাপটে ওপারা-রাজুরা নড়বড়ে। এডমিলসন ওয়ান-টু-ওয়ান অবস্থায় গোলের সুযোগ নষ্ট করছেন। এই অবস্থায় বিরতির আট মিনিট পর টোলগের প্রবেশ এবং মুহূর্তে পাল্টে গেল ছবিটা। ঝড় উল্টোমুখী হল।
টোলগেকে নিজেদের বক্সে ফেললেন স্পোর্টিংয়ের রোশন পেরিরা। রেফারি শ্রীকৃষ্ণ পেনাল্টি দিতেই পারতেন। দেননি। পরে অবশ্য তিনি তা পুষিয়ে দিলেন রবিন সিংহকে পেনাল্টি উপহার দিয়ে। রবিনের গোলের আগেই অবশ্য দু’বার ফাটল ধরেছে গোয়ার ক্লাবের রক্ষণে। টোলগে-সঞ্জু-রবিন-মেহতাবের জ্যামিতিক আক্রমণের দৌলতে। ইস্টবেঙ্গলকে প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হল পঁচাত্তর মিনিট পর্যন্ত। প্রায় পঁচিশ গজ দূর থেকে সঞ্জুর কোনাকুনি শট স্পোর্টিং গোলে ঢুকে গ্যালারিতে শান্তি-জল ছেটানোর দু’মিনিটের মধ্যে আবার গোল! এ বার সঞ্জু-টোলগে যুগলবন্দিতে। টোলগে গোল করার সময় মনে হল অফসাইড ছিলেন।
ম্যাচের পর কর্তা থেকে মর্গ্যান সবার মুখেই সঞ্জু প্রধানের ভূয়সী প্রশংসা। তাঁকে ম্যাচের সেরাও বাছা হল। কিন্তু করিডর থেকে টিম বাসের সামনে সর্বত্রই টোলগেকে ঘিরে সদস্য-সমর্থকদের আকুতি প্রবল। থেকে যাওয়ার জোরালো আবদার। কট্টর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক, নিয়মিত খেলা দেখেন নামী গায়ক মনোময় ভট্টাচার্য। ফোনে বলছিলেন, “ভাবছি ফেসবুকে প্রস্তাব দেব, আসুন ভাইয়েরা আমরা এক কোটি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক এক টাকা করে ক্লাবকে দিয়ে টোলগেকে রেখে দিই।”
কিন্তু তাতেও কি টোলগের জার্সির রং বদলের ‘ইচ্ছে’ রোখা যাবে?
|
ইস্টবেঙ্গল: সন্দীপ, নির্মল, রাজু, ওপারা, রবার্ট, খাবরা (পাইতে), পেন, মেহতাব, সুবোধ (সঞ্জু), রবিন, এডমিলসন (টোলগে)। |