কলকাতা বিমানবন্দরে বেসরকারি লগ্নি চায় কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার কলকাতায় এসে বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ বলে গেলেন, “যৌথ উদ্যোগে বেসরকারি লগ্নির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। প্রবল অর্থ সঙ্কট চলছে। তাই সম্প্রতি এই নীতি ঠিক করা হয়েছে।” শুধু কলকাতা নয়, চেন্নাই-সহ যে ক’টি বিমানবন্দর এখন কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে, তার সব ক’টিতেই এই নীতি প্রযোজ্য হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
দেশের প্রধান শহরগুলির বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের কাজ প্রাথমিক ভাবে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি মডেল) করারই পরিকল্পনা নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদে পিপিপি মডেল চালু করা গেলেও বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলির আপত্তিতে কলকাতা এবং চেন্নাইয়ে তা করা যায়নি। এই দুই শহরে বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়াই (এএআই)। |
কিন্তু সেই ঘটনার তিন বছর পরে এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। বামেরা আর কেন্দ্রে চালিকাশক্তি নয়। রাজ্যেও ক্ষমতার হাতবদল হয়ে গিয়েছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কলকাতা বিমানবন্দরে বেসরকারি লগ্নি সম্ভব বলে মনে করছে কেন্দ্র। তবে কী ভাবে সেই লগ্নি করা হবে সে ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিমান মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে গোটা বিষয়টাই একেবারে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। বিমানমন্ত্রী এ দিন বলেন, “পিপিপি মডেল নিয়ে যোজনা কমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
এএআই সূত্রে বলা হচ্ছে, কলকাতা বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের কাজ যে হেতু একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে, সে হেতু নির্মাণ কাজের জন্য আর বেসরকারি লগ্নি নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে নতুন টার্মিনাল বিল্ডিং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হতে পারে। আবার বিমানবন্দর লাগোয়া এলাকায় এএআই-এর যে জমি আছে, তা বাণিজ্যিক কাজে উপযোগী করে গড়ে তোলার দায়িত্বও দেওয়া হতে পারে। কলকাতায় এএআই-এর এই রকম জমি রয়েছে প্রায় ৪৫ একর। এক নামী বহুজাতিক সংস্থা ইতিমধ্যেই কলকাতা বিমানবন্দরে লগ্নি করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর।
এই পরিস্থিতিতে বাম-প্রভাবিত বিমান কর্মীদের সংগঠনগুলি কী করবে? তিন বছর আগে পিপিপি মডেলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে টানা তিন দিন কলকাতা বিমানবন্দর অচল করে দিয়েছিল তারা। সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এক নেতা এ দিন বলেন, “এখন আর কিছুই করা যাবে না। বেসরকারি হাতে চলে গেলে শুধু তাকিয়ে দেখতে হবে।”
সোমবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন অজিত সিংহ। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, কলকাতা বিমানবন্দরে বেসরকারি লগ্নি নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে। যদিও দিল্লি ফেরার পথে বিমানবন্দরে সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান অজিত।
বিমান সংস্থাগুলিতে বিদেশি লগ্নি নিয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনাও অজিতের কলকাতা আসার আরও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। আর্থিক দিক থেকে ধুঁকতে থাকা ভারতের বিমানসংস্থাগুলিতে (কিংফিশার, জেট) বিদেশি বিমানসংস্থার ৪৯ শতাংশ লগ্নির বিষয়টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্মতির অপেক্ষায়। কিন্তু তার আগে শরিক তৃণমূলের মনোভাব বুঝে নিতে চান কংগ্রেস নেতৃত্ব। কারণ, বিদেশি লগ্নি নিয়ে তাদের সাম্প্রতিক মনোভাব। বিমান মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে মমতাকে রাজি করাতেই কলকাতা এসেছিলেন অজিত। এর আগে বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় তৃণমূলের নেতা তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন অজিত। কিন্তু ‘আগে কলকাতা বিমানবন্দরের কাজ শেষ হোক’ বলে সুদীপ কার্যত শর্ত আরোপ করেন। বিমানমন্ত্রী এ দিন অবশ্য বলেন, “বিদেশি লগ্নি নিয়ে মমতার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। হাতে সময় রয়েছে।”
পুজোর আগেই কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল চালু হয়ে যাবে বলেও সোমবার আশ্বাস দিয়েছেন বিমানমন্ত্রী। এ দিন সকালে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখার সময় অফিসারদের ‘নবরাত্রি’-র আগে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ায় এই প্রকল্পের খরচ ১৯০৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এখন ২৩২৫ কোটি হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা অনুমোদিত হয়ে গিয়েছে বলেও অজিত জানান। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সময়মতো টার্মিনাল শেষ হওয়ার প্রধান অন্তরায় এরোব্রিজ। এখানে মোট ১৫টি এরোব্রিজ লাগবে। এখনও একটিও এসে পৌঁছয়নি। অগস্ট মাসে ১০টি আসার কথা। সেগুলি লাগাতে আরও এক মাস লেগে যাবে। মন্ত্রী বলেন, “এরোব্রিজ ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের অনুমতির প্রয়োজন হয়। তার জন্যই সেগুলিকে মালয়েশিয়া থেকে আনতে দেরি হচ্ছে।”
কলকাতা বিমানবন্দরে এখন বছরে ১০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। পুরনো টার্মিনালের উপর চাপ এতটাই বেড়েছে যে, প্রতিদিন উড়ান ধরতে গিয়ে বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন যাত্রীরা। মন্ত্রীর কথায়, “বর্তমান পরিকাঠামোর মধ্যে যতটা সম্ভব জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” নতুন টার্মিনাল তৈরি হলে বছরে ২ কোটি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে এ দিন ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে নতুন প্রকল্পের গোটা মানচিত্র দেখতে চান অজিত। কথা বলেন শ্রমিকদের সঙ্গেও। জানতে চান, নতুন টার্মিনাল চালু হলে পুরনো (এখন যেখান থেকে যাত্রীরা যাতায়াত করছেন) বিল্ডিং দু’টির কী হবে? পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন টার্মিনালে যাত্রীর চাপ বাড়লে বর্তমান বিল্ডিং দু’টিকে জুড়ে দেওয়া হবে নতুন টার্মিনালের সঙ্গে। |