নিজের ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করো
আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি। ছোটবেলা থেকেই আমি এক জন খুব ভাল ছাত্রী। ইদানীং আমি আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছি। পরীক্ষার সময় আমার সিট সব সময় রোল নং ওয়ান অথবা ক্লাসের ফার্স্ট গার্লের পিছনে পড়ে। পরীক্ষা চলাকালীন যদি কোনও প্রশ্নের উত্তর আমি ঠিকমত জানি, তবুও তার (রোল নং ওয়ানের) খাতায় সেই প্রশ্নের অন্য উত্তর দেখলে সেটাই লিখি। তা ছাড়া, কোনও প্রশ্নের উত্তর যদি দু’জনেই ঠিক জানি, কিন্তু দু’জনের বক্তব্য বা ভাষায় যদি সামান্য পার্থক্য থাকে, তখনও তার লেখাটাই লিখতে থাকি। এই রকম ব্যাপার কখনও অঙ্ক, ফিজিক্যাল সায়েন্স, লাইফ সায়েন্স, ইংলিশের ক্ষেত্রে হয় না, কারণ এই বিষয়গুলোতে আমি খুব ভাল সহযোগিতা পাই। এই রকম সমস্যা হয় ইতিহাস, ভূগোল, বাংলা-তে। ইতিহাস, ভূগোল, বাংলা এগুলোতে আমি যে শিক্ষকের কাছে পড়ি, তাঁর নোট পড়ে পরীক্ষায় লিখলে আত্মবিশ্বাস পাই না। কিন্তু কোনও গাইড বুক থেকে পড়লে, সেগুলো পরীক্ষায় লিখলে নিজের মধ্যে পরিতৃপ্তি আসে। কিন্তু পরীক্ষার আগে শিক্ষকের নোট ছেড়ে গাইড বুক থেকে মুখস্থ করতে গিয়ে একই প্রশ্নের দুই ধরনের উত্তর মিলেমিশে যায়। ফলে যেন কিছুই মনে থাকে না। পরীক্ষার আগে প্রচণ্ড ভয় লাগে।
সবচেয়ে বড় কথা, পড়াশোনার ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও সহযোগিতা পাই না। আমার কোনও কিছুই তাঁদের যেন ভাল লাগে না। কোনও ভাল কাজ করলে, বিশেষত পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেলেও তাঁরা বলেন বাই চান্স পেয়ে গিয়েছি। অথবা আমার থেকেও পড়াশোনায় যারা ভাল, তাদের নাম করে বলেন যে ‘দেখ, ও কত নম্বর পেয়েছে’। এতে আমার আত্মবিশ্বাস আরও কমে যায়। তা ছাড়া, বাবা-মা-দাদা এঁরা বাড়িতে সব সময় ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে অশান্তি করে। আসলে, পড়াশোনার পরিবেশই ঠিকমতো নেই বাড়িতে। সামনে পরীক্ষা। এখন আমি কী করব?
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
তোমাকে বলছি
তুমি বিষয়টা নিয়ে যা ভেবেছ, তার অনেকটা সঠিক, যদিও সবটার সঙ্গে আমি হয়তো একমত হব না। তুমি তোমার সমস্যার দু’টি কারণ বলেছ একটি পড়াশুনোর ধরন বা মান বিষয়ে, অন্যটি পারিবারিক। প্রথমটি নিয়ে আগে কথা বলি।
তুমি ভাল ছাত্রী, বিশেষত বিজ্ঞানে। সেই তুলনায় সাহিত্য-ইতিহাস-ভূগোলে তোমার আত্মবিশ্বাস কম। হয়তো যে নোট তুমি পড়ছ, তা তোমার আশানুরূপ নয়। পরিবর্ত হিসেবে তুমি বিভিন্ন নোটবই-এর কথাও ভেবেছ। এই সমাধান তো তুমি নিজেই করেছ সে ভাবেই পড়াশুনো চালিয়ে যাও, ভালই হবে। তবে এই সমাধানও যথেষ্ট কি না, ভাবার অবকাশ থাকে। দেখো, সাহিত্যের বিষয়গুলিতে অন্য কারও লেখা মুখস্থ করে লিখলে তা সব সময় ভাল ফল দেয় না। প্রত্যেকের লেখার একটা নিজস্ব স্টাইল থাকে। তোমার শিক্ষকের বা নোটবই লেখকের স্টাইল এক রকম। সেই ভাষা হুবহু মুখস্থ করা কঠিন। তুমি যখনই নোটের কিছু বাক্যের সঙ্গে তোমার নিজের ভাষা মিলিয়ে দিচ্ছ, একটা খাপছাড়া ব্যাপার তৈরি হচ্ছে। তুমি ভাল ছাত্রী বলেই আমার পরামর্শ যে, শিক্ষকের নোট, নোটবই, ইত্যাদি থেকে তুমি তথ্যগুলি নাও, কিন্তু মূল লেখাটা নিজের ভাষায় তৈরি করো। তুমি নিজে একটা খাতায় নিজের পছন্দমত উত্তরগুলি লিখে নাও মূল পয়েন্টগুলি দাগ দিয়ে রাখো। পরীক্ষার আগে পয়েন্টগুলি দেখে নিলে ভাষাটা সহজে চলে আসবে, কারণ সেটা তোমারই ভাষা। ইতিহাস বা ভূগোলে ভাষা তত জরুরি নয়। কিন্তু পয়েন্টগুলি গুছিয়ে লেখা দরকার। টেক্সট বই মন দিয়ে পড়ে আর একটা খাতায় পয়েন্ট লিখে রাখতে পারো প্রশ্ন বা চ্যাপটার অনুসারে। ভাবনাগুলিকে ডায়াগ্রাম বা মডেলের মতো করে সাজিয়ে নিলে মনে রাখতে সুবিধা হবে। পরীক্ষায় লেখার সময় পয়েন্টগুলি মনে করে নিজের ভাষায় লিখলে ক্ষতি নেই, বরং পরীক্ষক খুশি হবেন। এটা তোমারই নিজস্ব লেখা, অতএব কারও সঙ্গে তুলনার প্রশ্নই আসে না। তবে অন্যদের লেখা দেখলে যে তোমার আত্মবিশ্বাস কমে যায়, তার মানে হল, তোমার পরীক্ষার ফল নিয়ে উদ্বেগ হচ্ছে। পড়াশোনো, নিজে লেখা, পরীক্ষা দেওয়া, এই বিষয়গুলিকে ভীতিকর না ভেবে আনন্দদায়ক ভাবতে পারলে ভয় কমে যাবে। অন্য কেউ তোমার চেয়ে কিছুটা ভাল হলই বা, তুমি স্কুলের ছোট্ট গণ্ডির মধ্যে ভাবছ বলে এ-সব মনে হচ্ছে। তার বাইরে কত ছেলেমেয়ে আছে কেউ এক বিষয়ে ভাল, কেউ অন্য বিষয়ে। তাই তুলনা কোরো না নিজে যা বুঝে লিখতে পারবে, তা-ই লেখো তোমার নিজের ভাললাগা দিয়ে। তোমার ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করলে কিনা সেটুকুই দেখো।
আর একটা কথাও আছে। আমাদের মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য অনুসারে কেউ অঙ্ক-বিজ্ঞানে বেশি ভাল, কেউ সাহিত্যে বা সমাজবিদ্যায়। তবে বুদ্ধিমান ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত সবগুলিই একটা পর্যায় পর্যন্ত করতে পারে। ‘সাধারণত’ বললাম এই জন্য যে, পৃথিবীতে এমন বিখ্যাত সাহিত্যিকও আছেন যিনি অঙ্ক করতেই পারেন না, এমন বিজ্ঞানী আছেন যিনি সাহিত্য বোঝেনই না। তুমি যদি অঙ্কে একটু বেশি ভাল, সাহিত্যে একটু কম ভাল হও, চিন্তার কিছু নেই। যেখানে তোমার ক্ষমতা বেশি, সেটাকেই আরও ভাল করে তৈরি করো।
এ বার পরিবারের কথা। হ্যাঁ, ঝগড়া-অশান্তি হলে মন বিক্ষিপ্ত হবে তো বটেই। সবচেয়ে ভাল হয় যদি বাবা-মা-দাদা’কে বুঝিয়ে আচরণ একটু পাল্টাতে বলতে পারো। কিন্তু পছন্দ মতো পরিবেশ না থাকলেই যে লেখাপড়া হবে না, তা সর্বদা সত্যি নয়। তুমি বুদ্ধিমান এবং পড়াশোনো ভালবাসো, এটা তোমার বিরাট সম্পদ। খুব অসুবিধা দেখলে নিজেকে একটু গুটিয়ে নাও সাংসারিক সব বিষয়ে মাথা গলিও না। পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও, অবসর সময়ে যা ভালবাসো গল্পের বই পড়া, টিভি দেখা বা গান শোনা, তার মধ্যে নিজেকে
ব্যস্ত রাখো।
বাবা-মাকে বলছি
প্রত্যেক সংসারের নিজস্ব কিছু ধরন সুবিধা-অসুবিধা থাকে। ঝগড়াঝাটি, অশান্তিও হয়। অনেক সময় পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে তা এড়ানো সম্ভব হয় না। তবে তাতে যদি আমাদের ছেলেমেয়েদের সমস্যা হয়, জীবনে ক্ষতি হয়ে যায়, তবে খুব দুঃখের কথা। আপনাদের মেয়ে পড়াশুনোয় আগ্রহী, যদি ও ভাল ভাবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়, আপনাদের গর্বের সীমা থাকবে না। তাই অন্তত ওর সামনে অশান্তি করাটা আটকানো কি একান্ত অসম্ভব? অন্তত ওকে একটু উৎসাহ দিন, যেখানে ও ভাল, সেখানে ভাল বলে স্বীকৃতি দিন। বয়ঃসন্ধির এলোমেলো সময়ে, পরীক্ষার চাপ মাথায় নিয়ে ও উদ্বেগে আছে আপনারাই এই সময় ওর সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু হতে পারেন।
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।

ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।

অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.