ছেলেকে এত দিন পরে কাছে পেয়ে ছাড়তেই চাইছেন না কাজলরেখা বিবি।
বছর খানেক ধরে বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ার জেলে দাদু-দিদিমার সঙ্গে বন্দি থাকার পরে ৪ বছরের আরিফুল শেখ ও তার দাদু-ঠাকুমাকে বৃহস্পতিবার সকালে গেদেতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ মুর্শিদাবাদ পুলিশের হাতে তুলে দেয়। জেলের চার দেওয়ালের বন্দিদশায় এক বছর বয়স বেড়েছে আরিফুলের। লেখাপড়ার হাতেখড়িও হয়েছে সেখানে। আরিফুল জানায়, “জেলের স্কুলে পড়তে যেতাম। পড়াশোনা করতাম। সারা দিন জেলের ভেতরে ঘুরে বেড়ালেও কেউ কিছু বলত না। তবে রাতে দিদিমার কাছে ঘুমোতাম।” আরিফুলের আক্ষেপ, “জেলে যা খেতে দিত, তাতে পেট ভরত না। থাকতেও ভাল নাগত না। তবে ওখানে সকলেই আমাকে ভালবাসত।” |
২০১১-এর ১৫ এপ্রিল বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই পিয়ারপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আদালতের নির্দেশে বৃদ্ধ দম্পতি হাচিমুদ্দিন শেখ ও মাফরোজা বিবির সঙ্গে আরিফুলেরও ঠাঁই হয় জেলে। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই তিন জনকে ‘পুশব্যাক’ করার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ খবর দেয়। সেই মতো এ দিন জেলা পুলিশের একটি দল ওই তিন জনকে আনতে গেদে সীমান্তে যায়। জেলা পুলিশের তরফে ওই তিন জনকে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।” ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আরিফুলকে দেখতে পেয়ে চোখের জল বাধ মানেনি কাজলরেখা বিবির। নিয়ম-কানুনের জাল পেরিয়ে আরিফুলও একছুট্টে চলে আসে মায়ের কাছে। গেদে সীমান্তে হাজির ছিলেন মানবাধিকার সংগঠনের কয়েক জন সদস্যও। ওই তিন জনকে জেলা পুলিশের তরফে নিয়ে আসা হয় কৃষ্ণগঞ্জ থানায়। সেখান থেকে মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যদের গাড়িতে বহরমপুরের ভাকুড়ির বাড়িতে পৌঁছান তাঁরা। এ দিন হাচিমুদ্দিন শেখ, মাফরোজা বিবি ও ছেলে আরিফুল শেখকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে বহরমপুর থেকে গেদে সীমান্তে গিয়েছিলেন কাজলরেখা বিবি। সঙ্গে স্বামী শফিকুল শেখ ও শফিকুলের বাবা নজরুল শেখ। ভাকুড়ির চালতিয়ার বাড়িতে আসার পর থেকেই একরত্তি আরিফুলকে দেখতে ভিড় করেছে গোটা পাড়া। এত দিন পরে দাদাকে কাছে পেয়ে বোন আরিফাও মেতে উঠেছে খেলায়। কাজলরেখা বিবির কথায়, “ছেলেটাকে যে আবার কোনও দিন কাছে পাব ভাবতেই পারিনি। এত দিন ওকে ছেড়ে কী ভাবে ছিলাম তা শুধু আমিই জানি। মন থেকে ভারি একটা বোঝা নেমে গেল মনে হচ্ছে। অনেক হালকা লাগছে।” কাজলরেখা বিবির আনন্দে সামিল গোটা পরিবার। উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে পড়শিদের মধ্যেও। পাড়ায় খুশির মহল। আরাফুলের ঠাকুরদা রাজমিস্ত্রী শফিকুল শেখও বলেন, “ছেলেটাকে এত দিন পরে কাছে পেয়ে বড় ভাল লাগছে। ছেলেটাকে আর কখনও কাছ ছাড়া করছি না।”
এক বছর পরে ছেলেকে দেখে আরিফুলের মায়ের কথায়, “আরিফ অনেক লম্বা হয়েছে। আগে কথা বলতে লজ্জা পেত। এখন সকলের সঙ্গে ফটরফটর করে কথা বলছে। ছেলেকে এ বার স্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে।” |