থানা চত্বরের মধ্যে একটি ফাঁকা জায়গায় কয়েকটি জলের পাত্রে রাখা ছিল বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া কিছু বোমা। কিন্তু তার মধ্যে একটি কৌটো বোমা যে নজর এড়িয়ে জলে না ভিজিয়েই পাশে রেখে দেওয়া হয়েছে, তা বুঝতে পারেননি মুর্শিদাবাদের কান্দির বড়ঞা থানার সাব ইনস্পেক্টর সুবোধ মণ্ডল। তাঁরই হাতে লেগে ওই বোমাটি পাশে পড়ে থাকা একটি লোহার পাইপের গায়ে ধাক্কা খেয়ে ফেটে যায়। রবিবার সকালে সেই বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন সুবোধবাবু ও তাঁর সহকর্মী ওই থানারই সাব ইন্সপেক্টর জীবন মিশ্র। সুবোধবাবুর ডান হাত কব্জি থেকে বাদ দিতে হয়েছে। ওই দুই পুলিশকর্মীই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ওই বোমাগুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। সেগুলি থানা চত্বরেই খোলা আকাশের নিচে ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা ওই ফাঁকা জায়গায় তেলের টিন, বালতি বা মাটির পাত্রে রাখা ছিল। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই বোমাগুলি জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। তার মধ্যে একটি কোনও ভাবে জলে না ভিজিয়ে পাশে রেখে দেওয়া হয়েছিল। তা থেকেই এই বিপত্তি ঘটেছে।” কিন্তু থানা চত্বরে পুলিশকর্মীদের এই গাফিলতির ব্যাখ্যা কী? পুলিশ সুপার বলেন, “গোটা বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কান্দির এসডিপিও অনমিত্র দাস তদন্ত করছেন। তদন্তে গাফিলতি প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বোমা গিয়ে পুলিশের গাফিলতির পরিচয় আগেও মিলেছে। বীরভূমের নানুরেও বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে গত ১৪ নভেম্বর নওনেহাল মির্জা নামে বীরভূম জেলা পুলিশের বোম্ব স্কোয়াডের এক এসআই মারা গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদের লালবাগে।
বড়ঞার দুই পুলিশকর্মী বোমা নিষ্ক্রিয় করতে আদালতের অনুমতি নেওয়ার জন্যই সেগুলি কী অবস্থায় রয়েছে তা দেখতে গিয়েছিলেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, কতগুলি বোমা রয়েছে ও সেগুলি কতটা শক্তিশালী তা পরীক্ষা করতেই গিয়েছিলেন ওই দুই পুলিশকর্মী। কিন্তু বোমা উদ্ধারের পরে তা নিষ্ক্রিয় করার অনুমতি চাইতে পাঁচ-ছ মাস গড়িয়ে গেল কেন? পুলিশ সুপার বলেন, “এই অনুমতি চাইতে যাওয়ার আগে বিভাগীয় যে সব প্রক্রিয়া রয়েছে, তাতেই দেরি হয়ে গিয়েছিল। তবে জেলার আর কোনও থানাতে যদি এই ভাবে বোমা রাখা থাকে, তা হলে তা দ্রুত নিষ্ক্রিয় করার জন্য যা যা ব্যবস্থা দরকার তা নিতে বলা হয়েছে।” সুবোধবাবু ২০১১ সাল থেকে বড়ঞা থানায় কর্মরত। তাঁর বাড়ি বীরভূমের আকালিপুর গ্রামে। মালদহের ইংলিশবাজার থানার মদনপুর ২ নম্বর কলোনির বাসিন্দা জীবনবাবু ২০০৯ সাল থেকে এই থানায় রয়েছেন। |