আইপিএলের পাঁচ বছরের ইতিহাস যা দেখেনি, রবিবারের ময়দান সেটাই দেখে নিল। ৫ মে-র কেকেআর বনাম পুণে ওয়ারিয়র্স ম্যাচের টিকিট বিক্রিকে ঘিরে রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মহমেডান মাঠ। যার রেশ আছড়ে পড়ল সিএবিতেও।
যত দিন যাচ্ছে, ‘দাদা বনাম খান’ যুদ্ধ ঘিরে উত্তেজনার পারদ তত বাড়ছে। ‘খান’ এ দিন শহর ছাড়লেও ‘দাদা’ ছিলেন বাড়িতেই। বিকেলে তাঁর বেহালার বাড়িতে পুরো ঘটনা শুনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “ইডেনের আন্তর্জাতিক ম্যাচকে ঘিরে এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। আর যত দিন পারফরম্যান্স থাকবে, তত দিন এ জিনিস হবে।”
সৌরভ জানতেন না, শনিবার গভীর রাতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই মহমেডান মাঠে কী ভাবে জমতে শুরু করে টিকিট-প্রত্যাশী জনতার ভিড়। রবিবার সকালে সাপের মতো এঁকেবেঁকে লাইন পৌঁছয় ইডেন গার্ডেন্স পর্যন্ত। লক্ষ্য ৫ মে-র টিকিট, যা দেওয়ার কথা ছিল এ দিন সকাল থেকে। কিন্তু সময়মতো সকাল দশটায় কাউন্টার খুললে কী হবে, অভিযোগ, পঁয়তাল্লিশ মিনিট পেরোতে না পেরোতেই কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, টিকিট শেষ। আর দেওয়া যাবে না। যা শোনার পরে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে জনতার। কাউন্টার ভাঙচুর থেকে শুরু করে কেকেআরের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, কোনও কিছুই বাদ ছিল না। |
টিকিট না-পেয়ে ক্ষুব্ধ জনতাকে সামলানোর চেষ্টায় পুলিশ।
রবিবার, মহামেডান মাঠের সামনে। — নিজস্ব চিত্র |
যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, শহর জুড়ে প্রশ্ন এখন একটাই। ৫-মের টিকিট আর ক’টা পড়ে? এবং কী ভাবে পাওয়া যাবে? ম্যাচটা তো ইতিমধ্যেই বক্স-অফিস হিট। নাইট রাইডার্স এ বার টিকিট বিক্রির ব্যাপারটা সরাসরি দেখছে না। সেই দায়িত্বে আছে ‘ক্রিকেটজিনি’ নামের এক সংস্থা। সেই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ম্যাচ-পিছু পঁচিশ হাজার টিকিটের কিছু বেশি বরাদ্দ থাকছে সাধারণ দর্শকের জন্য। যার মধ্যে অনলাইন বিক্রির ব্যবস্থাও আছে। ৫ মে-র ক্ষেত্রেও আলাদা কিছু হচ্ছে না। জানানো হয়েছে, অনলাইনে ইতিমধ্যেই বারো হাজারের মতো টিকিট বেরিয়ে গিয়েছে ৫ মে ম্যাচের। রবিবার তাণ্ডবের আগে পর্যন্ত কাউন্টার থেকে টিকিট বেরিয়েছে সাড়ে তিন হাজার। দাবি করা হচ্ছে, হাতে পড়ে দশ হাজার টিকিট। যা আজ, সোমবার থেকে মিলবে কাউন্টারে। কেকেআর-এর সিইও বেঙ্কি মাইসোর বলেন, “টিকিট বিক্রির দায়িত্বে যে সংস্থা আছে, তারা যথেষ্ট পেশাদার। আজ যা ঘটেছে, তা খুবই দুঃখজনক। সোমবার থেকে ঠিকঠাক ভাবেই টিকিট বিক্রি হবে বলে আশা করছি।”
আজ, সোমবার কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, সময় বলবে। কিন্তু রবিবার ময়দান জুড়ে যা হল, তা দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে পুরনো দিনের ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচের কথা। উত্তপ্ত জনতা এ দিন অভিযোগ তুলতে থাকে, কোনও কাউন্টার থেকে পঞ্চাশ, কোনও কাউন্টার থেকে একশো টিকিট দিয়েই বলে দেওয়া হয়, টিকিট শেষ। এর পরেই খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় পুলিশ-জনতায়। উপড়ে ফেলা হয় বাঁশের ব্যারিকেড। ছাড় পায়নি পুলিশও। তাদের লক্ষ করেও উড়ে আসতে থাকে ইট। ঘটনার জেরে রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যান চলাচল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ঘোড়সওয়ার পুলিশবাহিনী। আসেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ। উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে ঘোড়সওয়ার পুলিশকে লাঠিও চালাতে হয়। শেষমেশ দুপুর ১টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দেবেন্দ্রবাবু বলেন, “সকাল দশটায় কাউন্টার খোলার কিছুক্ষণ পরে টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাউন্টার থেকে কতগুলি টিকিট বিক্রি করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
পুলিশের আশ্বাসে যে উত্তেজনা কমেনি, তার প্রমাণ ইডেনে ভাঙচুরের দ্বিতীয় পর্ব। এ দিন অন্তত শ’পাঁচেক লোক মহমেডান মাঠ থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে ছুটে যান সিএবি-র দিকে। ক্লাবহাউসের বাইরে ফুলের টব ছুড়ে মারা হয় সিএবি-র প্রধান গেটে। রীতিমতো আশঙ্কিত হয়ে পড়েন সিএবি-কর্তারা। সিএবিতেও পুলিশ মোতায়েন হয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যে। যা দেখে ক্ষুব্ধ যুগ্মসচিব বিশ্বরূপ দে বললেন, “টিকিট বিক্রির ব্যাপারটা তো ফ্র্যাঞ্চাইজি দেখছে। আমাদের কেন ভুগতে হবে?” |