আসছে শনিবারের লড়াইটা বিষম বলেই বোধহয় টিম মালিকের উদ্বেগটা এত আন্তরিক। আর উচ্ছ্বাস কখনওই বল্গাহীন নয়। গত শনিবার রাতেই ইডেনে কেকেআর মালিকের কাছ থেকে ছোট্ট একটা উপহার পেলেন রাজ্যের যুবকল্যাণ ও আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। কেকেআরের সরকারি জার্সি। পিছনে লেখা ‘অরূপ’। মন্ত্রীর হাতে টি-শার্ট তুলে দেন শাহরুখ। তখনই মন্ত্রী বলেন, “৫ তারিখ কিন্তু জিততেই হবে।”
শুধু নাইট মালিক তো নন, রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডরের শিরোপাও মাথায়। তার উপর এ বার নাইটদের রথ গড়গড়িয়ে ছুটছে। শনিবার রাতে টিম হোটেলে ফিরে ছেলেদের সবাইকে জড়িয়ে ধরেছেন, প্রথা অনুযায়ী কেক কাটা ও নৈশপার্টিও হয়েছে। কিন্তু কোথাও উৎসাহের আতিশয্য নেই কিং খানের। শনিবারে রাতের ভরা ইডেন তাঁকে এনে দিয়েছে স্বস্তি, এনেছে আত্মবিশ্বাস। যা রূপান্তরিত টিমেও। শনিবার মাঠে উপস্থিত ছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কেকেআর কর্তৃপক্ষ তাঁকে ৫ মে ইডেনে থাকার আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছে। উত্তরবঙ্গে শু্যটিংয়ের ব্যস্ততার মধ্যেও টিমের খবর রাখছেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরি। এ দিন ফোনে বললেন, “কেকেআর দারুণ খেলছে।”
এ দিন বেলার দিকে হোটেল ছাড়ার আগে জনৈক রুমবয়কে ডেকে নিজের একটা টি শার্টই বিলিয়ে দিলেন কালিস। টিমের নয়নের মণি এখন ক্যারিবিয়ান স্পিনার সুনীল নারিন। যাঁকে ইডেনের উইকেটে প্রায় অপ্রতিরোধ্য লাগছে। যাঁকে নিয়ে প্রাক্তন নাইট ক্রিস গেইল বলে গেলেন, “এই আইপিএলে ও-ই মিস্ট্রি বোলার। কোনটা কোন দিকে যাবে, বোঝা যাচ্ছে না। চার ওভারে বারো রান দেওয়া কী জিনিস, বোলারই শুধু জানে!’’ আর নাইট অধিনায়ক? গম্ভীরের ইনিংস নিয়ে শনিবার রাতে গাওস্করের কাছ থেকে এল দরাজ সার্টিফিকেট, “কেকেআর-কে যে এ বার অন্য রকম দেখাচ্ছে, তার একটা বড় কারণ গম্ভীর। আরসিবি ম্যাচে খেলা ইনিংসটা এ বারের আইপিএলে অন্যতম সেরা ইনিংস। তার উপর বোলিংয়ে শুরুতে পাঠানকে ব্যবহার করাটাও দারুণ চাল।”
স্বস্তির রোদ্দুর আগেই ছিল নাইটদের সংসারে, এখন তা রীতিমতো ঝলমল করছে। লিগ তালিকার দু’নম্বর টিম বলে কথা। গত চার বছরে বহু চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর এ বার নাইটদের রথ দৌড়চ্ছে গড়গড়িয়ে, সামনে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে শেষ চারের মসৃণ হাইওয়ে। ‘যদি-কিন্তু-হয়তো’-র জটিল অঙ্ক নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। আর যত এগিয়ে আসছে ৫ মে-র সন্ধিক্ষণ, তত শহরের আবেগ ঘনীভূত হচ্ছে। রবিবার চেন্নাইয়ের বিমান ধরার জন্য বাইপাসের ধারের টিম হোটেল ছাড়ছিল নাইটরা। একে একে বেরোচ্ছেন ম্যাকালাম, কালিস, ব্রেট লি। তারই মধ্যে লক্ষ্মী বলছিলেন, “দারুণ জায়গায় আছি আমরা। সেমিফাইনালে যাচ্ছিই।” একই সুর প্রতিফলিত মনোজের গলাতেও। ততক্ষণে হোটেলের গেটের বাইরে দুপুরের ওই গনগনে রোদকে থোড়াই কেয়ার করে দাঁড়িয়ে শ’তিনেক উৎসাহী জনতা। মাঝেমাঝেই আওয়াজ উঠছে ‘কে-কে-আর, কে-কে-আর!’ এরই মধ্যে রটে গিয়েছে টিকিট কাউন্টার ও সিএবি-তে ভাঙচুরের কাহিনি। বাড়তি তৎপরতা হোটেলের নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যেও।
আর ইডেন? শনিবার রাতে গাদাগাদি ভিড় দেখেই পড়া যাচ্ছিল গ্যালারির মনের কথা। ওই গ্যালারি বলছিল, ‘খেলছি, মারছি, জিতছি রে!’ |