৫ মে মহারণের আগে আজ শেষ ম্যাচ নাইটদের
এই প্রথম চেন্নাই চাপে কলকাতা ফুরফুরে
ইপিএলের পাঁচ বছরের ইতিহাসে এমন সন্ধিক্ষণ আর আসেনি কলকাতার ক্রিকেটভক্তদের জন্য। যেখানে তাদের শহরের টিম কলকাতা নাইট রাইডার্স খেলতে নামছে চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে আর জনতা থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেকেআর ফেভারিট। গত চব্বিশ ঘণ্টায় দু’টো টিমের বিপরীতমুখী ভাগ্য এই ধারণাকে আরও তীব্র করেছে।
চেন্নাইয়ের বাজার দর কমেছে কাগজেকলমে তাদের চেয়ে দুর্বল কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের কাছে হেরে। নাইট রাইডার্সের বাজার দর উঠেছে কাগজেকলমে তাদের চেয়ে এগিয়ে থাকা রয়্যাল চ্যাঞ্জোর্স বেঙ্গালুরুর সঙ্গে জিতে। এমনিতে আইপিএলের শহর-ভিত্তিক লড়াই মানেই একটা অন্য রকম জন-আকর্ষণ তৈরি হয়ে যায় নানা রকম সব দ্বৈরথে। কখনও দাদা বনাম ধোনি। কখনও ধোনি বনাম সহবাগ। সোমবার তেমনই ধোনি বনাম গম্ভীর। অস্ট্রেলিয়ার সেই মহাবিতর্ক মনে করা যাক। ধোনি যে তিন জন ক্রিকেটারকে স্লথ বলে চিহ্নিত করেছিলেন, তার মধ্যে গৌতম গম্ভীরও ছিলেন। দেশে ফিরে এর পর সহ-অধিনায়কত্ব হারান গম্ভীর।
রাতের দিকে চেন্নাই পৌঁছনো কেকেআর অধিনায়ক তাঁর সঙ্গে ধোনির দ্বৈরথ নিয়ে মুখ খুলতে চাইলেন না। তিনি কেকেআর নিয়েই ভাবতে চান। অন্য টিম নিয়ে নয়। কিন্তু এত দিনে কে না জানে, প্রতিপক্ষ অধিনায়কের নাম সৌরভ হলে যেমন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে বাড়তি চনমনে দেখা যায়, তেমনই প্রতিপক্ষ অধিনায়কের নাম ধোনি হলে গৌতম গম্ভীরের চোখমুখ পাল্টে যায়! আর এখানে প্রাক-ম্যাচ ছবি হচ্ছে, ধোনি হেরে গিয়ে চাপে। গম্ভীর গেইলদের উড়িয়ে অনেক ফুরফুরে। কেকেআর শিবিরে অবশ্য কাউকে কাউকে চিন্তিত দেখাচ্ছে, বালাজির চোট নিয়ে। বেশ ভাল বল করছিলেন তিনি এ বার। কিন্তু হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে এখন কত দিন বাইরে কেউ জানে না।
ম্যাচের আগের দিন চেন্নাইতে বসে আবার মনে হচ্ছে, শুধু ধোনি বনাম গম্ভীর কোথায়? এই ম্যাচটার মধ্যে এত সব টুকরো-টুকরো লড়াইয়ের তুবড়ি লুকিয়ে রয়েছে যে, ৫ মে-র আগে দিব্যি সেরা মহড়া বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। মনোজ তিওয়ারি বনাম সুরেশ রায়না এটাই বা কম আকর্ষণীয় কী? একজন ভারত অধিনায়কের স্নেহধন্য। ব্যর্থ হয়েও পরের পর ম্যাচে সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। অন্য জন সেঞ্চুরি করেও ম্যাচের পর ম্যাচ ধরে ব্রাত্য। গত কয়েক মাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে এটা চলছে যে, এখন আর নাম করেও বলে দিতে হয় না, কে উপেক্ষিত আর কে পুরস্কৃত। সোমবার রায়না থাকছেন ধোনির দিকে। আর মনোজ থাকবেন ভারতীয় দলে যে সিনিয়র তাঁকে সবচেয়ে সমর্থন করেন সেই গৌতম গম্ভীরের দিকে। এই প্রেক্ষিতে ম্যাচটা যেন আরও গভীরতা পেয়ে যাচ্ছে।
চিপকের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। — নিজস্ব চিত্র
এখানেই শেষ নয়। আইপিএলের অন্যতম সেরা আকর্ষণীয় কাহিনিতে আসা যাক এ বার। নিলাম যখন চলছিল তখন তিনি বাড়িতেই বসে ছিলেন। কিন্তু টিভি-র দিকে চোখ রাখেননি বলে জানতেই পারেননি এত মোটা টাকায় তাঁকে কিনেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। খবর পান এক সতীর্থের ফোনে। “কেকেআর তোমাকে কিনেছে জানো তো? আর জানো কি কত টাকায় তোমাকে ওরা কিনল? সেভেন হান্ড্রেড থাউজ্যান্ড ডলার্স (ভারতীয় টাকায় প্রায় তিন কোটি আটষট্টি লাখ)!” শুনে তাঁর জবাব ছিল, “বন্ধু, বাজে কথা ছাড়ো। এ রকম রসিকতা তুমি আমার সঙ্গে করতে পারো না!”
সে দিন যিনি ফোন করেছিলেন তাঁর নাম ডোয়েন ব্র্যাভো। যিনি সে দিন ফোন পেয়েছিলেন, তিনি কেকেআর-এর আপাতত প্রধান বোলিং অস্ত্র। সুনীল নারিন। বন্ধুত্বের জগত থেকে সোমবার ক্রিকেটীয় যুদ্ধক্ষেত্রে নিক্ষিপ্ত। আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহকের তালিকায় এখন তিন নম্বরে নারিন। ছয় ম্যাচে এগারো উইকেট। মর্নি মর্কেল ১৮ উইকেট নিয়ে এখনও পার্পল ক্যাপের অধিকারী। কিন্তু মর্কেল তিনটে ম্যাচ বেশি খেলেছেন। যেটা সবচেয়ে চোখে লাগার মতো তা হচ্ছে, নারিনের ইকনমি রেট। ৫.৪৫। মালিঙ্গা ছাড়া এত কৃপণ বোলার আইপিএলে আর কেউ নেই।
গত কাল ইডেনে তাঁর বোলিং হিসেব ছিল ৪-০-১১-১। গম্ভীরের মারকাটারি ইনিংসের রোশনাইয়ের মধ্যে যা হারিয়ে যায়। চেন্নাই পৌঁছে রাতের দিকে নারিন আনন্দবাজারকে বলছিলেন, “ক্রিস গেইলের বিরুদ্ধে বোলিং করা যে কোনও দিনই হচ্ছে বিভীষিকার মতো। এ রকম দিন খুব কমই আসবে যেখানে গেইল হারবে, বোলার জিতবে। কাল ইডেনে আমার দিন ছিল।” গেইলকে খেলে উঠে সামনে ব্র্যাভো। কাল কী হবে? “আইপিএলের এটাই আকর্ষণ। একই দেশের প্লেয়ার এখানে প্রতিপক্ষ। জানি না কী হবে, তবে প্রার্থনা করব যেন আমিই জিতি,” বললেন বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন রহস্য-স্পিনার।
তাঁর নাম সুনীল রাখা হয়েছিল সুনীল গাওস্করের অনুকরণে। আর নিজেকে তৈরি করেছেন মুরলীধরনের বোলিং দেখে। ইডেনে কিংস ইলেভেনের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর গাওস্কর তাঁকে বলেন, “ইউ আর অ্যা ম্যাজিশিয়ান!” নারিন বলছিলেন, “একজন গ্রেট ব্যাটসম্যানের থেকে এ রকম স্বীকৃতি পেয়ে আমি অভিভূত। কিন্তু গাওস্করের মন্তব্য আমার দায়িত্বও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।” গেইলের মতোই নারিন দেশের হয়ে টেস্ট খেলছেন না। আইপিএল খেলছেন। স্পিনের রহস্যে যদি তিনি চেন্নাইকে চেন্নাইয়ের মাঠে বেঁধে ফেলতে পারেন তা হলে কেকেআর ভক্তদের আরও উৎসাহিত করে তুলবেন। ৫ মে-র মহারণের আগের শেষ ম্যাচটাও জেতা হয়ে গেল যে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.