পুলিশ, আধা-সেনা, সেনা, কম্যান্ডো বাহিনী ব্যর্থ হওয়ার পরে শেষ অবধি জিএনএলএ সেনাধ্যক্ষ সোহন ডি শিরার ‘মাথার দাম’ ধার্য হল ১০ লক্ষ টাকা। দলের ১২ জন কম্যান্ডারের জন্য মাথাপিছু ৫ লক্ষ।
গারো জঙ্গি সংগঠনের এই নেতাকে ধরতে গিয়ে বহু জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। বেশ কয়েকবার যৌথ বাহিনী সোহনের ঘাঁটি ঘিরে ফেলার পরেও অক্ষত অবস্থায় সপরিবারে পালিয়েছেন শিরা। আলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়া, এনএসসিএন বাহিনী বা কেপিএলটি নয়, বর্তমানে, উত্তর-পূর্বের সবচেয়ে বড় ত্রাস শিরা। তাঁর নেতৃত্বে গারো পাহাড়ে অবাধ হত্যালীলা, লুন্ঠন, তোলাবাজি, অপহরণ চালাচ্ছে জিএনএলএ। তাদের চেয়ারম্যান তথা মেঘালয় পুলিশের প্রাক্তন ডিএসপি চ্যাম্পিয়ন সাংমা বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়ার পরে এই জঙ্গি সংগঠনের দাপট রাশ কমবে ভেবেছিল মেঘালয় পুলিশ। কিন্তু সোহনের নেতৃত্বে পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ গারো পার্বত্য জেলায় জিএনএলএ কার্যত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
প্রাক্তন এনএসজি কর্তা এন রামচন্দ্রন, মেঘালয় পুলিশের ডিজি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার দিন গারো পাহাড়ের সদর তুরায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, এক মাসের মধ্যে জিএনএলএকে ঠান্ডা করে দেবেন। বলা বাহুল্য, সেই হুঙ্কারকে উড়িয়ে দিয়ে, জিএনএলএর দাপট এখনও অক্ষুণ্ণ। সাফল্য বলতে, এক কম্যান্ডার ও পাঁচ জিএনএলএ জঙ্গিকে হত্যা করেছে পুলিশ। ধরা পড়েছে কয়েকজন।
এই অবস্থায় মেঘালয় পুলিশ ঘোষণা করে সোহনের ঘাঁটি সম্পর্কে নির্দিষ্ট খবর দিতে পারলে, ১০ লক্ষ টাকা অবধি ইনাম মিলবে। দলের উপ-সেনাধ্যক্ষ রূপান্ত আর মারাক ও অন্য ১২ জন কম্যান্ডারের ব্যাপারে সঠিক খবর দিলে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এ কে রাইফেল-সহ কোনও জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ১ লক্ষ ও ছোট অস্ত্র বা গ্রেনেড-সহ জঙ্গি ধরালে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। রামচন্দ্রন বলেন, “টেলিফোনকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। কিছু জানতে পারলে চুপচাপ পুলিশের বিশেষ লাইন ২২২৮৫৫ নম্বরে ফোন করুন বা meghalayapolice@gmail.com-এ ইমেল পাঠান।”
সোহনদের ধরার ক্ষেত্রে পুলিশের অন্যতম সমস্যা সর্ষের মধ্যে ভুত থাকা। পুলিশের অভিযানের খবর, আগেভাগেই জঙ্গিদের কাছে পৌঁছে যায়। শুক্রবার জঙ্গি যোগসাজশের অভিযোগে পুলিশের এক কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে তোলা চেয়ে লেখা জিএনএলএ-র দশটি চিঠিও মেলে। এ ছাড়া, গ্রামবাসীদের আশ্রয় ও সমর্থন এবং দুর্গম জঙ্গল জঙ্গিদের অবস্থানকে আরও মজবুত করেছে। সেই সঙ্গে, নাগাল্যান্ড ও বাংলাদেশ থেকে চিনের হাত ঘুরে জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র আসছে। গত কালই, গুয়াহাটির গড়চুক থেকে, জিএনএলএ-র অস্ত্র সরবরাহকারীদের গ্রেফতার করে, একটি এ কে ৫৬, একটি আধুনিক বেরেটা রনি পিX৪ স্টর্ম কার্বাইন ও প্রচুর কার্তুজ উদ্ধার হয়।
এ দিকে, পুলিশ দলনেতার মাথার দাম ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই, জিএনএলএ গারো পাহাড়ে সোমাবর সকাল ৬টা থেকে ৫মে সকাল ৬টা অবধি ১৪৪ ঘণ্টা টানা বন্ধের ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি, এর মধ্যে গারো পাহাড়ে সন্ত্রাস দমন অভিযান বন্ধ ও যৌথবাহিনী প্রত্যাহার না করলে, ৭ মে থেকে ফের ৩০০ ঘণ্টা টানা বন্ধ ডাকা হবে। রামচন্দ্রন অবশ্য সাফ জানান, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবেই। |