শেষ অবধি, নাগা জঙ্গি সংগঠন এনএসসিএন (কে) ভেঙে গড়ে ওঠা খুলে-কিতোভি গোষ্ঠীর সঙ্গেই ভারত সরকারের সংঘর্ষবিরতি চুক্তি নবীকরণ হল। তাদের অন্য গোষ্ঠী খাপলাং বাহিনী, ভারত সরকারকে কিছু না জানিয়েই ইতিমধ্যে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি সই করে ফেলেছে। শুক্রবার দিল্লিতে, খুলে-কিতোভি বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি নবীকরণের পাশাপাশি খাপলাং বাহিনীর সংঘর্ষবিরতি তত্ত্বাবধান কমিটির প্রধান লিংকনের কাছে দিল্লির তরফে এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়া হয়।
২০০১ সালের ২৮ এপ্রিল অবিভক্ত এনএসসিএন খাপলাং গোষ্ঠীর সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের ত্রিপাক্ষিক সংঘর্ষবিরতি সাক্ষরিত হয়েছিল। নিয়মমতো প্রতিবছর চুক্তি নবীকরণ হয়। গত বছর জুলাই মাসে খাপলাং বাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিবাদের জেরে খোদ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এস খাপলাংকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। খাপলাং নিজে মায়ানমারের সাগায়িং কেন্দ্র করে খাপলাং বাহিনী চালিয়ে যান। নাগাল্যান্ডের খেহোয় শিবিরকে সদর করে খুলে কন্যাক ও কিতোভি জিমোমি খুলে-কিতোভি গোষ্ঠী চালাতে থাকে। এরপর, দফায় দফায় এলাকা দখলের লড়াই চলছে নাগাল্যান্ডে।
বছরের শুরুতে দুই বাহিনীই দাবি করে, তাদের সঙ্গেই ভারত সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি রয়েছে। কেন্দ্রের তরফে, চুক্তি নবীকরণের বিষয়টি নিয়ে দুই গোষ্ঠীর কাছেই মতামত চেয়ে পাঠানো হয়। খুলে-কিতোভি গোষ্ঠী জানিয়ে দেয়, তারা চুক্তি নবীকরণ ও শান্তি আলোচনায় আগ্রহী। খাপলাং বাহিনীর তরফে সদুত্তর মেলেনি। বরং মায়ানমারে নির্বাচনের পরে সে দেশের সরকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা মায়ানমার সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি সই করতে উদ্যোগী হয়। ভারত সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে কোনও আলোচনাই চালায় নি তারা। ১২ এপ্রিল, মায়ানমার সরকারের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষবিরতি চুক্তি হয়েও গিয়েছে।
খাপলাং নেতা মুলাতনুর প্রশ্ন, নাগারা ভারত ও মায়ানমার উভয় দেশেই আছেন। সমস্যাটিও কেবল ভারত-নাগা সমস্যা নয়, ভারত-মায়ানমার-নাগা সমস্যা হিসাবে গণ্য হয়। ২০০১ সালে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির সময় মায়ানমার আপত্তি না জানালে, এ বার ভারত আপত্তি জানাচ্ছে কেন? সংঘর্ষবিরতি বিষয়ে খাপলাং-এর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ নিয়ে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে চলবে না।
খুলে-কিতোভি গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সি সিংসনের নেতৃত্বে ছয়জনের প্রতিনিধিদল শুক্রবার যুগ্ম সচিব শম্ভু সিংহ-সহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পরে আরও এক বছর চুক্তির মেয়াদবৃদ্ধিতে সই করে। সিংসন বলেন, “শান্তি আলোচনা শুরুর জন্য মতপ্রকাশ করেছি। আশা করছি, শীঘ্রই এ ব্যাপারে কেন্দ্রের আহ্বান আসবে। এ দিকে, কাল দিল্লিতে লিংকনের নেতৃত্বে খাপলাংদের পাঁচ সদস্য শম্ভু সিংহের সঙ্গে দেখা করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সংঘর্ষবিরতির নিয়ম ভেঙে কেন তারা মায়ানমার সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেছে? নিয়মমতো মায়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করার অর্থ খাপলাংরা মায়ানমারের জঙ্গি সংগঠন। সেক্ষেত্রে ভারতে তাদের বিরুদ্ধে কেন সেনা অভিযান চালানো হবে না, তা নিয়েও খাপলাংদের কৈফিয়ত চাওয়া হয়। খাপলাং বাহিনীর জবাবের পরে সংঘর্ষবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। |