কাজের ফাঁকে মাছগুলো দেখলে ‘মন ভাল হয়ে যেত’ মন্ত্রীমশাইয়ের। অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে তাঁর আদরের সেই মাছ। তা-ও আবার একটি নয়, দু’-দু’টি।
মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরের এক্কেবারে নাক বরাবর কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের ঘর। সেখান থেকেই বেমালুম বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে দু’টি রঙিন মাছ। কোথায় গেল তারা? শুরু হয়েছে হাজারো জল্পনা। তবে মন্ত্রী সব উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, নিখোঁজ-টিখোঁজ নয়। মারাই গিয়েছে মাছগুলি।
মহাকরণে সেন্ট্রাল গেটের সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাঁ দিকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘর। ডান দিকে প্রথমে সংবাদমাধ্যমের বসার ঘর। কৃষি বিপণন মন্ত্রীর ঘর তার পরেই। সেটার পরে একে একে পর্যটনমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর ঘর। নতুন সরকারের অনেক মন্ত্রীর ঘরেই রয়েছে অত্যাধুনিক অ্যাকোয়ারিয়াম। তাতে দেশি-বিদেশি রঙিন মাছের মেলা। অরূপবাবুর ঘরেও আছে পেল্লাই অ্যাকোয়ারিয়াম। তাঁর কথায়, “ঘরে বসে অবসর সময়ে মাছগুলোকে দেখলে মন ভাল হয়ে যায়।” বিদেশ থেকে আনা এমনই দু’টি ‘দামি’ মাছ গত সপ্তাহে উধাও হয়ে গিয়েছে অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে। চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি খবর দেন দফতরের কর্মী-অফিসারদের।
মন্ত্রীর কাছ থেকে খবর পেয়ে কৃষি বিপণন দফতরের কর্মীরা তন্নতন্ন করে খুঁজেও মাছ দু’টি পায়নি। খবর যায় মহাকরণের কেয়ারটেকারের কাছে। সন্দেহ, ছুটির দিনে নিশ্চয়ই কেউ ঢুকে মাছগুলি চুরি করে চম্পট দিয়েছে। যদিও প্রথমে কেয়ারটেকার এবং পরে মহাকরণের পুলিশি সূত্রে জানানো হয়, ছুটির দিনে কেউই মন্ত্রীর ঘরে ঢোকে না।
তা হলে মাছ দু’টি গেল কোথায়?
মহাকরণের কোনও মহলের কাছেই এর উত্তর মেলেনি। তা হলে কি এমন চুরি চলতেই থাকবে? শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, এই ধরনের চুরি রুখতে মন্ত্রীর ঘরে নজরদার ক্যামেরা বসানো হবে। কিন্তু তাতেও তো অনেক হ্যাপা! একে তো কোনও মন্ত্রীর ঘরে লুকোনো ক্যামেরা রাখার মালিক পুলিশ কিংবা পূর্ত দফতর। তার উপরে নজরদার ক্যামেরা আদৌ রাখা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীই। এমন ক্ষেত্রে সেই অনুমতি মিলবে কি না, তা নিয়ে ধন্দে সকলেই।
মন্ত্রী অরূপবাবু অবশ্য মাছ নিখোঁজ বা চুরি যাওয়ার খবর উড়িয়েই দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, “মাছগুলি মোটেই নিখোঁজ হয়নি। চুরিও যায়নি। মারা গিয়েছে।”
মন্ত্রী যতই মাছের মৃত্যুর কথা বলুন, সন্দেহের মেঘ কিন্তু কাটছে না। প্রশ্ন উঠছে, মাছ যদি মারাই যাবে, দেহ গেল কোথায়? অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ মারা গেলে তাদের দেহগুলো তো উবে যেতে পারে না!
অতএব মৎস্য-রহস্য থেকেই যাচ্ছে। |