সাহসটা দেখিয়ে ফেলেছিলেন ওঁরা। অদম্য মনোবলের কাছে হার মেনেছিল পঙ্গু শরীর, অপরিণত মন কিংবা ছাপোষা জীবন ঘিরে থাকা ভীরুতা। আর তাই ওঁদেরই হাতে ক্যানভাসে ফুটে ওঠে জীবনের রং, নাচের ছন্দে জীবন্ত হয়ে ওঠে হুইলচেয়ার। নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করা সাহসে বেঁচে ফেরে অন্যরা। যে সাহসের জাদু অপলক তাকিয়ে দেখল ভিড়ে ঠাসা প্রেক্ষাগৃহ। অন্য রকম এক সকালে।
শনিবার কলামন্দিরে জড়ো হওয়া ভিড়টা এসেছিল ‘হাল না ছাড়া’দের গল্প শুনতে। ফ্রেন্ডস এফএম নিবেদিত ‘এনভিডি হাল ছেড়ো না বন্ধু সম্মান’-এ এমনই ছ’জনের স্বীকৃতি পাওয়ার সাক্ষী থাকতে। জানা ছিল না, পাওয়ার খাতায় যোগ হবে আরও অনেক সাহসীর গল্প।
পোলিওয় পঙ্গু পা দু’টোকে টানতে টানতেই সুজিত সাউ রং-তুলিতে স্বপ্ন বোনেন। আঁকার স্কুল চালানোর সঙ্গে এনজিও-র হয়ে পাশে দাঁড়ান অবহেলিত শিশুদের। বছর ষোলোর ঈশিকা শীল বিলাস-বৈভবে মোড়া ‘সব পেয়েছি’র দেশ ছেড়ে অনায়াসে গিয়ে দাঁড়ায় যৌনপল্লির ছোট্ট মুখগুলোতে শিক্ষার আলো ছড়ানোর আঙিনায়। |
ঝাঁ-চকচকে হাসপাতালের পাশে বেমানান বস্তির শঙ্কর মাইতি প্রাণের তোয়াক্কাটুকুও না করে আগুনে ঘেরা হাসপাতাল থেকে বার করে আনেন ২৫ জনকে। বাটনা-বাটা, কুটনো কোটা ছাপোষা বধূ গীতা নাগ অসম সাহসে লড়াই করেন সশস্ত্র দুই ডাকাতের সঙ্গে। অনেক না-পাওয়ার মধ্যে শিক্ষার আনন্দটুকু অন্তত জোগাতে প্রয়াত কানাইলাল দত্ত তিল তিল করে গড়েন প্রতিবন্ধীদের স্কুল। আর মানসিক প্রতিবন্ধকতাকে গোহারা হারিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফেরেন জিজা ঘোষ।
না, ওঁরা হাল ছাড়েননি। সেই সাহসের স্বীকৃতি ওঁদের হাতে তুলে দিতে একে একে মঞ্চে ওঠা ওয়াসিম কপূর, ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়, মাসুদুর রহমান, অগ্নিমিত্রা পাল, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমরেশ মজুমদারদের কথাতেও তাই বারবারই ঘুরে ফিরে আসে মুগ্ধতা। হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা ঘর।
মুগ্ধতার শুরুটা অবশ্য একেবারে প্রথম থেকেই, যখন মঞ্চে ওঠে ‘এবিলিটি আনলিমিটেড’। হুইলচেয়ারে বসা একদল পুরুষ এবং শ্রবণশক্তিহীন দুই নারী। অনুষ্ঠানের ফাঁকে তাঁদের সুফিনৃত্য থেকে যোগা, ভরতনাট্যমে গীতার অংশ থেকে ‘মা তুঝে সালাম’-এর ফিউশন যার জাদুতে আগাগোড়া জীবন্ত হয়ে থাকল প্রাণহীন হুইলচেয়ার, তালে-ছন্দে মাতিয়ে দিল যাঁরা, তাঁদের কানে পৌঁছয় না সুর। দেখতে দেখতে কখন যেন আপনা থেকেই উঠে দাঁড়াল গোটা প্রেক্ষাগৃহ। মুগ্ধ হয়ে শুনল ওঁদের গুরু পাশার কথা।
অন্য রকম সকালটায় প্রাপ্তি ছিল আরও। দুই সঞ্চালক কবিতার পংক্তিতে ছয় সাহসীর গল্প বলা আরজে রাজা এবং অবশ্যই আরজে ডেন, হুইলচেয়ারে বসে যিনি নিজেই রোজ সকালে সাহস জোগান অনেককে। বলেন, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’। |