অবশেষে কালীঘাটে গৃহবধূকে মারধরের অভিযোগের ঘটনায় লাঠি এবং বালিশ বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে ওই মহিলার স্বামী বাদল দাসকে নিয়ে তাঁর হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেখান থেকেই ওই দু’টি জিনিস বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তবে, রবিবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরগুলি এখনও ‘সিল’ করেনি পুলিশ।
ওই ঘটনায় প্রথম থেকেই পুলিশ যে ভাবে তদন্ত করছে, তাতে সন্তুষ্ট নন অভিযোগকারিণী। পুলিশ যে ঘটনার পরেই ঘটনাস্থল থেকে বালিশ এবং লাঠিটি বাজেয়াপ্ত করেনি, সেটা লালবাজারের নজরে আনেন তিনিই। ওই বালিশটি চাপা দিয়ে তাঁকে মারার চেষ্টা হয়েছিল বলে মহিলার অভিযোগ। এবং লাঠি দিয়ে তাঁকে মারাও হয়েছিল বলে কালীঘাট থানায় লিপিবদ্ধ করা অভিযোগে জানিয়েছিলেন নির্যাতিতা মহিলা। যে ঘরে তাঁর উপরে গত ২৩ এপ্রিল ‘অত্যাচার’ চালানো হয়, সেই ঘরটিকে কেন ‘সিল’ করা হয়নি সেই প্রশ্নও তুলেছেন মহিলা।
কালীঘাট-কাণ্ডে পুলিশি তদন্তে আরও একটি গাফিলতি ধরা পড়েছে। ২৩ এপ্রিল রাতে অভিযোগকারিণী যে পোশাক পরেছিলেন, সেটিও পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করেনি। এখন লালবাজার থেকে চাপ আসায় ওই রাতে মহিলা যে জামাকাপড় পরেছিলেন, তা-ও চেয়ে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ এত দিন পরে ওই জামাকাপড় চেয়ে পাঠানোয় মহিলা অবাক। তিনি বলেন, “আমি তো সে দিনের পোশাক ধুয়ে ফেলেছি।”
ঘটনার পরে, ২৩ এপ্রিল রাতেই মহিলা কালীঘাট থানায় গিয়েছিলেন। সে দিন তাঁর অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে মহিলা জানিয়েছেন। পর দিন, ২৪ এপ্রিল তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে ফের থানায় যান। সেখানে একটি জেনারেল ডায়েরি করে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মহিলার অভিযোগ, ওই রাতেই থানার ভিতরে তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন অতিরিক্ত ওসি। মহিলা এর পরে লালবাজারের দ্বারস্থ হলে ২৫ এপ্রিল রাতে তাঁর কাছ থেকে এফআইআর নেওয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় মহিলার স্বামী বাদল দাসকে। তবে অন্য অভিযুক্তেরা এখনও ধরা পড়েননি। মহিলার অভিযোগ না নেওয়া এবং অভব্য আচরণ করায় সাসপেন্ড করা হয় ওই থানার অতিরিক্ত ওসি এবং এক সাব-ইনস্পেক্টরকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, লাঠি-বালিশ বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। এক অফিসার বলেন, “প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে সোমবার রাতের ঘটনা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। তার সঙ্গে মহিলার দায়ের করা অভিযোগের মিল রয়েছে। অভিযুক্তদের মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে খোঁজ করছে পুলিশ।” ওই মহিলার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের দাবি, ওই রাতে কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি। তবে, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ওই বাড়িটির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের গণ্ডগোল চলছিল। ঘটনার রাতে এগারোটা নাগাদ তিনি ওই বাড়িতে এসেছিলেন।
এ দিকে, ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি অভিযোগকারিণী। রবিবার তিনি বলেন, “শরীর এতটাই খারাপ যে, রাস্তায় বেরোতেই ভয় করছে। মানসিক অবস্থাও ভাল নয়।” |