পরিবহণমন্ত্রীর নির্দেশে শহরের পথে ফের দোতলা বাস চালাতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন সিএসটিসি-র কর্তারা। তাঁদের ডিপোয় এ রকম বাস রয়েছে মাত্র দু’টি। যেগুলি শুধু অচলই নয়, বহু পুরনোও। সেই সব বাস রাস্তায় নামালে তা আদালতের নির্দেশের পরিপন্থী হবে। তাই এখন ঠিক হয়েছে, বাস দু’টি চালানোর জন্য হাইকোর্টের কাছে বিশেষ অনুমতি চাইবে পরিবহণ দফতর। তবে, ওই বাস দু’টি কোন রুটে চালানো হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
গত ১ বৈশাখ বিধাননগরে বন্ধ থাকা দু’টি রুটের বাস ফের চালু করতে গিয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ঘোষণা করেন, শীঘ্রই শহরে দোতলা বাস চালানো হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা করতে তিনি পরিবহণসচিব এবং সিএসটিসি-র কর্তাদের নির্দেশ দেন। পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, তাদের পুরনো ও অচল ২১৮টি বাসের মধ্যে দু’টি দোতলা। একটি বেলঘরিয়া এবং একটি মানিকতলা ডিপোয় পড়ে আছে। দু’টিই প্রায় ২২ বছরের পুরনো। সেগুলি সচল করতে গেলেও অনেক যন্ত্রাংশ বদলাতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সিএসটিসি কর্তৃপক্ষ ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দের অনুরোধ করেছেন পরিবহণসচিবকে। রাস্তায় বাস নামানোর জন্য তাঁরা সর্বোচ্চ এক মাস সময় চান। |
এর পরে কর্তাদের টনক নড়ে যে, আদালতের নির্দেশ মেনে ওই বাস চালানো যাবে না। ২০০৮-এর ১ জুলাই হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ১৯৯৩-এর ১ জানুয়ারির আগে তৈরি সব রকম বাণিজ্যিক যান কলকাতা মেট্রোপলিটন অঞ্চলে (কেএমএ) বসিয়ে দিতে হবে। ওই রায়ের প্রতিবাদে বিভিন্ন পরিবহণ সংগঠন আন্দোলন-ধর্মঘট করে। রাজ্য সরকারের নির্দেশে আদালত ওই সময়সীমা পিছিয়ে দেয় ২০০৯-এর ৩১ জুলাই পর্যন্ত। রায়ের প্রতিবাদে একটি সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে ‘স্পেশাল লিভ পিটিশন’ করে। অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের আর্জি খারিজ হয় ২০০৯-এর ৩১ জুলাই। সে বছর ১০ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট রায়ের সমর্থনে রায় দেয়।
এই অবস্থায় এক পরিবহণকর্তা পরিবহণমন্ত্রীকে বোঝান, হাইকোর্টের অনুমতি না নিয়ে পুরনো বাস নামালে সমস্যা দেখা দিতে পারে। মন্ত্রী দ্রুত অফিসারদের ব্যবস্থা নিতে বলেন। সেই সঙ্গে সিএসটিসি-র চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দ্রুত প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে বাস চালাতে।
কলকাতায় দ্বিতল বাস প্রথম চলেছিল ১৯২৬ সালে, শ্যামবাজার থেকে কালীঘাটের মধ্যে। শেষ এক লপ্তে অনেক দ্বিতল বাস এ শহরে কেনা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। ২৯৫টি বাসের প্রতিটির দাম পড়েছিল ১০ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা করে। কিন্তু পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খুব দ্রুত বাসগুলি অচল হয়ে যায়। বেশ ক’বছর ডিপোয় পড়ে থাকার পরে সেগুলি কিলো দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। এখন বাকি রয়েছে মাত্র দু’টি বাস।
লন্ডন-সহ বিশ্বের বেশ কিছু শহরে এখনও দোতলা বাস চলছে। পরিবহণমন্ত্রীর প্রশ্ন, এ শহরে কেন তা হলে তেমন বাস চলতে পারবে না? বিশেষত, যখন এমন বাস ঘিরে রয়েছে বহু মানুষের নস্ট্যালজিয়া। |