ব্যবসায়ীর গাড়িতে গুলি ছুড়ে লক্ষাধিক টাকা লুঠের ঘটনায় রবিবার রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। শনিবারই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন আসানসোলের গোয়েন্দা প্রধান চন্দ্রশেখর বর্ধন ও এসিপি সুনীল যাদব। এ দিন চন্দ্রশেখর বর্ধন বলেন, “পুলিশ সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখছে। আহতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের দ্রুত চিহ্নিত করা হবে।”
শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ আসানসোল (দক্ষিণ) থানার গোপালপুরের কাছে জি টি রোডে ওই ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটে। কর্মচারী গোপাল নায়ক ও গাড়ির চালক করণ বিশ্বকর্মার সঙ্গে গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন ওই ব্যবসায়ী। সেই সময়ে গোপালপুরের ময়দাকলের কাছে দ্রুত বেগে দু’টি মোটরবাইকে চেপে চার দুষ্কৃতী পিছন থেকে তাঁর গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়িটিকে দাঁড় করিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে তারা। এর পর তাঁদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ভর্তি একটি ব্যাগ ছিনতাই করে পালায় দুষ্কৃতীরা। |
হাসপাতালে চলছে জখমের চিকিৎসা। নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশের দাবি, বরাকরের ওই ব্যবসায়ী নীতিশ সোহাকারিয়া তাঁদের জানিয়েছেন, শনিবার রাতে আসানসোলের পাইকারি বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে বকেয়া আদায় করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে তাদের অনুমান, টাকা নিয়ে তাঁর বাড়ি ফেরার খবর দুষ্কৃতীদের কাছে আগে থেকেই ছিল। এমনকী, রাস্তার কোন জায়গায় গাড়ি আটকানো সম্ভব, তা-ও পরিকল্পনা করে রেখেছিল তারা। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ব্যবসায়ীর গাড়ি যথেষ্ট গতিসম্পন্ন। এমনিতে মোটরবাইকের পক্ষে তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন। দুষ্কৃতীরা জানত, শুধুমাত্র রাস্তা খারাপ হলেই গাড়িটিকে ধরা যাবে। তার জন্য ময়দাকলের সামনে জি টি রোডের বেহাল অংশটিই বেছে নিয়েছিল তারা। নীতিশবাবুও পুলিশকে জানিয়েছেন, বেহাল ওই রাস্তার কাছে গাড়ির গতিবেগ কমান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘটনার সময়ে মুখে গামছা বাঁধা ছিল দুষ্কৃতীদের।
দিন-দুপুরে এই ঘটনায় আতঙ্কিত মহকুমার ব্যবসায়ীরা। ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানেরও ক্ষোভ, “কমিশনারেট হওয়ার পরে ভেবেছিলাম, শিল্প ও বাণিজ্যমহল শান্তিতে থাকতে পারবে। এখন আর সেই ভরসা পাচ্ছি না।” তাঁর আরও অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে রাস্তায় পুলিশি টহল প্রায় থাকেই না। রাস্তার অবস্থাও খুব খারাপ। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁরা মহকুমায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করার আবেদন জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। আসানসোল চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক শম্ভুনাথ ঝা বলেন, “ব্যবসায়ীদের উপরে এ ভাবে আক্রমণ হলে ব্যবসা-বাণিজ্য মার খাবে।” ইতিমধ্যেই তাঁরা রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা আসানসোলের বিধায়ক মলয় ঘটককে বিষয়টি জানিয়েছেন।
রবিবার আসানসোলের রবীন্দ্রভবনে ওই সংগঠন আয়োজিত একটি আলোচনাসভায় মলয়বাবু বলেন, “ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও স্বার্থরক্ষায় সরকার, মহকুমা প্রশাসন কঠোরতম পদক্ষেপ করেছে। আসানসোল মহকুমাতেও তার অন্যথা হবে না।” |