কারও থাকছে আফশোস, কেউ আশ্বস্ত
ব কাজ হয়ে গিয়েছে। কোনও কাজ বাকি নেই? প্রশ্ন শুনে এক কাউন্সিলর আমতা আমতা করে বলছেন, “বস্তি এলাকার প্রায় চার হাজার মিটার রাস্তার কাজ শেষ করা গেল না। আফশোস রয়ে গেল।” আর এক জনের আশ্বাস, “পানীয় জলের সমস্যা যেটুকু রয়েছে, তা মিটে যাবে।” তাঁদের ওয়ার্ডে উন্নয়ন কোনও অংশে কম হয়েছে, এ কথা অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন পুরসভার ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলরই। বিরোধী ও এলাকাবাসীর অবশ্য বক্তব্য, “কোথায় উন্নয়ন, দেখছি না তো!”
ডিভিসি মোড়, নবীনপল্লি, গণতন্ত্র কলোনির একাংশ, সুভাষপল্লি, বিওজিএল বস্তি, বি-টু, টি-টু, এ-ওয়ান, এ-থ্রি, ভগৎপল্লি এবং আম্বেদকর কলোনি নিয়ে পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে ডিভিসি মোড়-গণতন্ত্র কলোনির একাংশে খাটাল চলছে বহু বছর। জল-গোবর-খড়ের সম্মিলিত গন্ধ খাটাল ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে জাতীয় সড়কে। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। স্থানীয় বাসিন্দা দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “পুরসভার প্রশ্রয়েই খাটাল ব্যবসায়ীদের এত রমরমা।” তাঁর অভিযোগ, খাটাল সরানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উল্টে রাস্তা, পানীয় জল, বিজলি বাতির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
২৩ নম্বর ওয়ার্ডে অস্থায়ী শৌচাগার। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জমে আবর্জনা।
পানীয় জলের সঙ্কট ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে। সুভাষপল্লির বাসিন্দা সোমা মণ্ডল বলেন, “গরম পড়তেই সঙ্কট ভয়াবহ। প্রায় একশো পরিবার পিছু একটি করে জলের সংযোগ।” তাঁর অভিযোগ, বস্তি এলাকায় পাকা নর্দমা হয়নি। পশ্চিমপল্লির বাসিন্দা বৈদ্যনাথ হেলার দাবি, “রাস্তাঘাট বেহাল। অঙ্গনওয়াড়ি ঠিক মতো চলে না। বিপিএল কার্ড থেকেও অনেকে রেশনের সামগ্রী পান না।” আম্বেদকর কলোনির হেমন্ত বাদ্যকরের অভিযোগ, “এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি।” অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নবীনপল্লিতেও। ছেঁড়া কাপড় ও ফ্লেক্স দিয়ে ঘেরা শৌচাগার। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কমিউনিটি শৌচাগারের দরজা ভাঙা, দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা মীরা কুমারী বললেন, “আমাদের দিকে পুরসভার নজর নেই।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা অশোক মেটের অভিযোগ, “এলাকার মানুষের জলকষ্টের নিরসন হয়নি।”
কাউন্সিলর আরতি চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, রাস্তাঘাট, নিকাশির উন্নতি হয়েছে। কমিউনিটি শৌচাগার গড়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এই ওয়ার্ডে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা বা বিপিএল কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন বহু মানুষ।” তাঁর শুধু আফশোষ, “নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেল। বস্তি এলাকায় রাস্তার কাজটা শেষ করা গেল না।”
শহরের অন্যতম পুরনো বাজার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযোগ অন্তহীন। নিকাশির বালাই নেই, রাস্তায় আলো নেই। টাকা দিয়েও বস্তির অনেকে বিদ্যুৎ পাননি।
মহালক্ষ্মী পার্ক, শরৎপল্লি, সুভাষপল্লি, বিধানপল্লি, অরবিন্দপল্লি, উত্তরপল্লি, বিবেকানন্দ পল্লি, বিদ্যাসাগর পল্লি, বি-ওয়ান, এ-টাইপ, টি-ওয়ান, অর্জুনবাঁধ, এমএএমসি টাউনশিপ, মামড়া বাজার ও মামরা গ্রাম নিয়ে এই ওয়ার্ড। স্থানীয় কাউন্সিলর সিপিএমের কানু মণ্ডলের অবশ্য দাবি, “৮৫ শতাংশ কাজ শেষ।” ওয়ার্ড ঘুরে বাসিন্দা ও বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলে অবশ্য শতাংশের হিসাব নিয়ে সংশয় রয়ে গেল।
মামরা গ্রামের রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা হরিপদ গিরি বলেন, “বিপিএল কার্ড অনেক দুঃস্থের হাতে পৌঁছয়নি। বিএসইউপি-র বাড়ি বিলিতেও অনিয়ম হয়েছে।” তিনি জানান, মামরা বাজার প্রাথমিক স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। স্থানীয় বাসিন্দা অলোক চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, রাস্তা থেকে নিকাশি নালা উঁচু হয়ে গিয়েছে। তাঁর ক্ষোভ, “দায়সারা কাজের ফল ভোগ করছি আমরা।” মামড়া বাজার শহরের অন্যতম প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র। দোকান প্রায় এক হাজার। নিকাশির কোনও ব্যবস্থা নেই। নর্দমার জল গিয়ে পড়ে রাস্তায়। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। নেই শৌচাগার। প্রায় অর্ধশতাব্দী প্রাচীন এই বাজারে রাস্তায় আলো নেই। পানীয় জলের কোনও ট্যাপ নেই বাজারে। মোড়ের রাস্তা অবৈধ দখলদারদের কবলে। ফলে বাজারে কোনও পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকতে পারে না। স্থানীয় ব্যবসায়ী নারায়ণচন্দ্র সাহা বলেন, “বছরের পর বছর এই বাজার পুরসভার উদাসীনতার শিকার।”
স্থানীয় তৃণমূল নেতা টাম্পু মজুমদারের অভিযোগ, “উত্তরপল্লিতে বেআইনি ভাবে পুকুর কাটা হয়েছে। তা এখন এলাকার মানুষের কাছে মরণফাঁদ।” তিনি দাবি করেন, ঠিকাদার ইচ্ছে মতো কাজ করেছেন। কাউন্সিলর নজর দেননি। তার ফল ভোগ করবেন বাসিন্দারা। তাঁর আরও অভিযোগ, গণতন্ত্র কলোনিতে বিপিএল-এর প্রাপ্য ঘর দেওয়া নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। নির্ধারিত টাকা দিয়েও ওই কলোনির অনেকে বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি ।
কাউন্সিলর কানুবাবুর অবশ্য দাবি, প্রত্যাশা মতোই উন্নয়ন হয়েছে। তাঁর কথায়, “রাস্তার আলো, রাস্তার পাশে পানীয় জলের সংযোগ, একাধিক পুকুর সংস্কার হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাড়িও হয়েছে।” তবে জলের সমস্যা যে এখনও রয়েছে, তা স্বীকার করে কাউন্সিলরের আশ্বাস, “বি-ওয়ান মোড়ে জলাধার নির্মাণ চলছে। শেষ হলেই সমস্যা মিটে যাবে।’’

নজরে নগর
ওয়ার্ড ২৩ ওয়ার্ড ২৪

• বস্তি এলাকার রাস্তা বেহাল
• গরম পড়তেই তীব্র জলকষ্ট
• কমিউনিটি শৌচাগার অপর্যাপ্ত

• মামরা বাজারে নিকাশির বালাই নেই
• অনেকেই বিএসইউপি-র বাড়ি পাননি।
• বিপিএল কার্ড পাননি বহু দুঃস্থ


রাস্তা, নিকাশি-সহ নানা উন্নয়ন হয়েছে।
আরতি চক্রবর্তী,

পাঁচ বছরে উন্নয়নের বহু কাজ করেছি।
কানু মণ্ডল,

পাঁচ বছর ধরে কোনও কাজই হয়নি।
অশোক মেটে,

বাড়ি বিলি থেকে পুকুর কাটা, সবেতেই অনিয়ম।
টাম্পু মজুমদার,

ছবি: বিশ্বনাথ মশান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.