সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুর্গাপুরে যে ভোগান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, প্রশাসন মাঠে নামা সত্ত্বেও তা পুরোপুরি ‘এড়ানো’ গেল না। পরিস্থিতি সামলাতে রবিবার অতিরিক্ত বাস ও ট্রেন চালানো হয়। তবু মোটা টাকার বিনিময়ে রাত্রিবাস বা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে অটো, ট্যাক্সিকে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষা রানি অবশ্য বলেন, “নির্বিঘ্নেই যাতায়াত করেছেন পরীক্ষার্থীরা।”
এ বার রাজ্যে শুধু শিলিগুড়ি ও দুর্গাপুরে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) আয়োজিত এই ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা (এআইইইই) নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এআইইইই-র দুর্গাপুরের কো-অর্ডিনেটর পাপিয়া মুখোপাধ্যায় জানান, ১৯১৫০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৭৬৫৮ জন এসেছিলেন। মোট কেন্দ্র ছিল ২৪টি। পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর সময় ছিল সকাল সাড়ে ৮টা। দূরের পরীক্ষার্থীদের তাই আগের দিন চলে আসা ছাড়া উপায় ছিল না।
দুর্গাপুরের সব হোটেল ও লজ মিলিয়ে হাজার পাঁচেক মানুষের থাকার ব্যবস্থা আছে। শনিবার দুপুর থেকেই অনেকে আসতে শুরু করেন। যাঁদের আগে থেকে ঘর ‘বুক’ করা ছিল, তাঁরা সমস্যায় পড়েননি। অনেকে পানাগড়, অন্ডালের নানা হোটেলেও চলে যান। অনেকে আবার দুর্গাপুরে পৌঁছে থাকার জায়গা খুঁজছিলেন। পরিস্থিতি বুঝে স্টেশনে পৌঁছে যান আশপাশের এলাকার কিছু লোকজন। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঘরভাড়ার ব্যবস্থা করে মোটা টাকা কামিয়েছেন তাঁরা। যাদবপুর থেকে বাবা-মাকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন ময়ূখ বল। তাঁরা ওঠেন কাঁকসার বামুনাড়ায়। ময়ূখ বলেন, “পুরো ফ্ল্যাট নিতে হল। তিন হাজার টাকা গেল।”
পরিস্থিতি সামাল দিতে এ দিন কলকাতা-দুর্গাপুর রুটে অতিরিক্ত বাস চালায় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা। দুর্গাপুর থেকে বর্ধমান, জসিডি ও পটনা এবং আসানসোল-হাওড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল পূর্ব রেল। আসানসোল-গয়া ট্রেনের যাত্রাপথ দুর্গাপুর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরীক্ষার্থীদের জন্য হাওড়া-সিউড়ি হুল এক্সপ্রেস, হাওড়া-শ্রীগঙ্গানগর উদয়ন আভা এক্সপ্রেস, কলকাতা-জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস ও মালদা টাউন-দিঘা এক্সপ্রেসে অতিরিক্ত দু’টি করে কামরা দেওয়া হয়।
এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে দুর্গাপুর স্টেশন ও সিটিসেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে সব পরীক্ষাকেন্দ্রে মিনিবাস চালানো হয়। তবে অটো, ট্যাক্সি করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে মোটা টাকা ভাড়া গুণতে হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। সোদপুর থেকে আসা পরীক্ষার্থী রূপম ভট্টাচার্যের কথায়, “যাতায়াতের ঝক্কি এড়াতে স্টেশনে নেমে ট্যাক্সি নিই। ৮০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। আমার এক বন্ধু তিনশো টাকা অটো ভাড়া গুণেছে।” মহকুমাশাসক অবশ্য বলেন, “পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা ছিল। অটো-ট্যাক্সির অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |