|
|
|
|
‘মুখরক্ষা’র জনসভা করে বনধ প্রত্যাহার |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ডুয়ার্সের প্রত্যন্ত জনপদ দলসিংপাড়ায় একটি জনসভা করে ‘মুখরক্ষা’র পরে অনির্দিষ্টকালের বনধ তুলে নিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বাধীন যৌথ মঞ্চ।
বনধ থেকে বিরত থাকার জন্য রোজই রাজ্য সরকার অনুরোধ জানিয়েছে। গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কায় পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ। কয়েকটি এলাকায় বনধ উপেক্ষা করে রাস্তায়ও নেমেছেন তাঁরা। এমনকী, এই ইঙ্গিতও দিয়েছেন যে, ফের বনধ ডাকা হলে তা অগ্রাহ্য করা হবে। এই পরিস্থিতিতে যৌথ মঞ্চ একরকম বাধ্য হয়েই বনধ প্রত্যাহার করে নিল বলে মনে করা হচ্ছে।
তার আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে দলসিংপাড়ায় তাঁদের সভার জন্য কোনও অনুমতি নেননি যৌথ মঞ্চের নেতারা। তবে প্রশাসন পুলিশি ব্যবস্থা করেছিল। ওই সভার পরেই যৌথ মঞ্চের তরফে জন বার্লা ও রাজু বরা বলেন, “রাজ্য সরকারের আর্জি মেনে বনধ প্রত্যাহার করলাম।” সেই সঙ্গেই তাঁরা বলেন, “যে হেতু এখনও ডুয়ার্সের নাগরাকাটায় আমাদের সভার অনুমতি দেওয়া হয়নি, তাই আমরা সভা করে দেখিয়ে দিলাম। আগামী দিনে সভার অনুমতি না-মিললে এমন আরও অনেক সভা করব।” |
|
দলসিংপাড়ার জনসভায় বিমল গুরুঙ্গ। বৃহস্পতিবার নারায়ণ দে-র তোলা ছবি। |
এদিন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ নতুন কোনও ফতোয়া দেননি। বরং সুর ছিল অনেক নরম। তিনি বলেন, “আমরা সভা করলে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটবে বলা হচ্ছে। তা যে হবে না সেটা তো স্পষ্ট হল। সভার অনুমতি দেওয়া নিয়ে আমাদের সঙ্গে রাজনীতি হোক, তা চাই না। আমরাও শান্তি-সম্প্রীতি চাই। মিলেমিশে থাকতে চাই।” শুধু তাই নয়, বিনা অনুমতিতে সভা করা ঠিক হল কি না, সেই প্রশ্নে গুরুঙ্গ দাবি করেন, “আমি তো সভা করিনি। একটা জায়গায় অনেক লোকজনের সঙ্গে আলাপ করেছি!”
মোর্চা ও যৌথ মঞ্চের অন্দরের খবর, বন্ধ নিয়ে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে সাধারণ মানুষের বিরক্তি ও ক্ষোভের আঁচ পেয়ে ‘মুখরক্ষা’র উপায় খুঁজতে বুধবার রাতে দফায় দফায় বৈঠক হয়। তখনই ঠিক হয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে দলসিংপাড়ায় দুর্গামণ্ডপে একটি সভা করা হবে। পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও সেই খবর পৌঁছে দেওয়া হয়। যৌথ মঞ্চের কয়েকজন নেতা জানিয়ে দেন, ওই সভা করতে পারলে দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছেও ‘মুখরক্ষা’ হবে। এতে যৌথ মঞ্চের পক্ষে বন্ধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে বুঝতে পেরে ওই সভা ঘিরে যাতে উত্তেজনা না-হয়, তা নিশ্চিত করতে নজর রাখে পুলিশ-প্রশাসন।
এদিন পঞ্চায়েত সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করতে উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সকালে শিলিগুড়িতে তিনি বলেন, “পাহাড়, সমতল আলাদা নয়। শান্তির জন্য সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। বিষয়গুলি বুঝতে হবে। আমরাও দীর্ঘদিন বিরোধী আসনে ছিলাম। আজ নয় তো কাল, সভা সমিতির অনুমতি মিলবে। মুখ্যমন্ত্রী কাউকে বঞ্চিত করবেন না।”
বন্ধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে রাজ্য সরকারও স্বাগত জানিয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “বন্ধ এবং পাল্টা বন্ধ কোনও সমস্যার সমাধান নয়। সবাইকে সংযত আচরণ করতে হবে। আমি বন্ধের রাজনীতি থেকে সবাইকে সরে থাকার আবেদন করছি। পর্যটন মরশুমে এই রকম চলতে থাকলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে বহু পর্যটক এসে গিয়েছেন। আর মিছিল, মিটিং-এর অনুমতির বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসন দেখবে।” তবে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (জিটিএ) তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকার অন্তর্ভুক্তির চেষ্টার বিরোধিতায় রাস্তায় নামায় আইএনটিইউসির দার্জিলিং জেলা সভাপতি অলোক চক্রবর্তীর সমালোচনা করেছেন দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার ও জলপাইগুড়ির কংগ্রেস নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকার জানান, অলোকবাবুর ভূমিকার কথা প্রদেশ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। অলোকবাবু বলেন, “কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির সঙ্গে হাত মেলাইনি। আইএনটিইউসির সর্বোচ্চ নেতাদের অনুমতি নিয়েই ওই আন্দোলনে সামিল হয়েছি।’’ |
|
|
|
|
|