বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে ইন্টারভিউয়ের ভিডিও রেকর্ডিং করতে চায় রাজ্য সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এই পরিকল্পনায় সায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
বৃহস্পতিবার উচ্চশিক্ষা দফতরের বেশ কয়েক জন কর্তা এবং রাজ্যের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ব্রাত্যবাবু। তিনি বলেন, “প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখার কথা ভাবা হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে কোনও রকম সংশয় তৈরি হলে বিশ্ববিদ্যালয় ওই ছবি ব্যবহার করতে পারে। আদালতে মামলা হলেও ওই ছবির সাহায্য নিতে পারবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।” একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কেন্দ্রীয় ভাবে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী। এ জন্য ‘ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশন’ গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ নতুন নয়। বাম আমলে বিভিন্ন সময় যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে দলের ‘ঘনিষ্ঠ’ প্রার্থী নিয়োগের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সরকার বদলের পরেও শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সেই পুরনো অভিযোগ থেকেই গিয়েছে। এই পটভূমিতে ইন্টারভিউয়ের ভিডিও রেকর্ডিং শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করছে রাজ্য সরকার।
সরকারের এই ভাবনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের একাংশ আপত্তি তুলেছেন। তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্বশাসিত। তারা নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। সেখানে শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ নেয় সিলেকশন কমিটি। কমিটিতে অন্য সদস্যদের পাশাপাশি আচার্য তথা রাজ্যপাল এবং উপাচার্য মনোনীত প্রতিনিধি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দু’জন বিশেষজ্ঞ থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে ওই দু’জনকে মনোনীত করেন উপাচার্য। ভিডিও রেকর্ডিংয়ের পরিকল্পনা কার্যত এই কমিটির উপরেই ‘অনাস্থা’ প্রকাশ করছে বলে তাঁদের মত।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস অবশ্য এ কথা মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, “শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রচুর মামলা হয়। অনেক প্রার্থীই অভিযোগ জানান যে, তাঁকে বাদ দিয়ে অযোগ্য প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে ওই ভিডিও সহায়ক হবে।”
এ দিনের বৈঠকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সার্বিক অবস্থা, পরিকাঠামো, শিক্ষার মানোন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের জন্য একটি ‘ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশন’ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করবে ওই কমিশন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেরাই শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করে। কর্মীদের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলির কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। তবে এই পরিকল্পনার নানা আইনি দিক রয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন আইন কার্যকর হওয়ার পরে এ দিনই প্রথম উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ব্রাত্যবাবু। নতুন আইনের কোন কোন নিয়ম প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে এবং সে জন্য আইনে কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন কি না, তা খতিয়ে দেখতে এ দিন সাত সদস্যের কমিটি গড়ে রাজ্য সরকার। উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ এবং উচ্চশিক্ষা দফতরের যুগ্মসচিব মধুমিতা রায় ছাড়াও পাঁচ জন উপাচার্য আছেন ওই কমিটিতে।
উচ্চশিক্ষা দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার পরে বলেন, “পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সংস্থা, সেখানে ছাত্র প্রতিনিধিরা আছেন। কিন্তু ওঁদের ওই কাজে যুক্ত থাকার কথা নয়। এ জন্য আইন পরিবর্তন দরকার। তা ছাড়া, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক কলেজ থেকে স্নাতক স্তরে তিন জন ছাত্র প্রতিনিধি কী করে বাছা হবে, তা-ও পরিষ্কার নয় আইনে।” |