শুধু ঋণের উপর দেয় সুদ তিন বছরের জন্য মকুবই নয়, রাজ্যের ঘাড়ে চেপে থাকা ঋণের শর্তও সামগ্রিক ভাবে ঢেলে সাজতে হবে। আজ সন্ধ্যায় নর্থ ব্লকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেখা করে এই দাবিই জানাল তৃণমূলের সংসদীয় দল। বৈঠকের পর তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, প্রণববাবু তাঁদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির ‘ইতিবাচক’ ও ‘গঠনমূলক’ সমাধান করবেন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সমস্যার বিষয়ে কেন্দ্র যে সম্পূর্ণ অবহিত, সে কথাও তৃণমূল নেতাদের জানিয়েছেন তিনি।
আগামী ৪ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের আগে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সূত্রে আজ রাতে প্রণববাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ। কাল সংসদে দুপুর বারোটার সময় তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করবেন। এ দিনের বৈঠকে রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে মোট ১৮ জন তৃণমূল সাংসদ ছিলেন। বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায় বলেন, “আমরা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে রাজ্যের কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি। কেন্দ্রও যে বিষয়টি নিয়ে অবহিত, আমাদের সে কথা জানিয়েছেন প্রণববাবু। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সমাধান করা হবে, এমন আশ্বাসও যদিয়েছেন তিনি।”
তৃণমূলের নেতারা আজ বৈঠকের গোড়াতে প্রণববাবুকে জানান, অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রককে ‘অর্থনীতি শেখানোর’ অভিপ্রায় তাঁদের নেই। তাঁদের কথায়, প্রণববাবুও ‘পশ্চিমবঙ্গেরই মানুষ’। ফলে তিনি নিশ্চয়ই রাজ্যের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে মমতার আবেদনের প্রতি সুবিচার করবেন। তাঁরা আরও জানান, বামফ্রন্ট সরকারের রেখে যাওয়া ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা কাঁধে পড়েছে নতুন সরকারটির। তাকে তো একটু ‘শ্বাস নেওয়ার সুযোগ’ করে দিতে হবে। রাজ্যের অর্থ দফতরের হিসেবে, মাথার উপরে বিপুল (দু’লক্ষ কোটি টাকারও বেশি) দেনার জন্য বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা মেটাতে হয় (যার মধ্যে সুদই হল ১৫ হাজার কোটি)। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কাছে তৃণমূলের মূলত দু’টি দাবি। এক, রাজ্যের ঋণের উপর দেয় সুদ তিন বছরের জন্য মকুব করা হোক। দুই, পুরো ঋণটাই ঢেলে সাজা হোক। যার মধ্যে ঋণ মকুব, সুদের হার কমানো, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি এই সব কিছুই পড়ে। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য, “অনেক সময় ‘নন পারফর্মিং অ্যাসেট’-এর ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাঙ্ক এ রকমটাই করে। অনেক সময়ই এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিচার করে ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের শোচনীয় আর্থিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এ ক্ষেত্রেও আমরা প্রণববাবুকে সেটাই করতে অনুরোধ জানিয়েছি।”
সম্প্রতি রাজ্যসভায় এই সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে অর্থ মন্ত্রক থেকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিল, ঋণ পরিশোধের বিষয়টি কেন্দ্রের বিবেচনাধীন। কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুসারে রাজ্যকে একাধিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ওই লিখিত জবাব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। অমিত মিত্র সেটি দেখে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়ানোর জন্য নতুন করে যুক্তিগুলি সাজিয়েছেন। |