বিধায়কের সঙ্গে অধ্যক্ষের অলোচনার পরে অচলাবস্থা কাটল রঘুনাথপুরের শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (আইটিআই)। বৃহস্পতিবার আইটিআইয়ে এসে অধ্যক্ষ অভিজিত কুণ্ডুর সঙ্গে উদ্ভুত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি। তার পরেই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় সেখানকার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদ। অধ্যক্ষ বলেন “বিধায়ক আইটিআইয়ের সমস্যা মেটানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় সাহায্যর আশ্বাস দিয়েছেন। ছাত্র সংসদ তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ দিন ভর্তির জন্য ফর্মও জমা পড়েছে।”
রঘুনাথপুরের এই শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভাগগুলি চালু করার দাবিতে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। গত ১৭ এপ্রিল থেকে সেখানে ভর্তির জন্য ফর্ম জমা দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে টিএমসিপির দখলে থাকা ছাত্র সংসদ। সংগঠন সূত্রে বলা হয়েছিল, বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভাগগুলি খোলার ব্যাপারে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত ছাত্র ভর্তির পক্রিয়া বন্ধ রাখা হবে।
বস্তুত, কয়েকটি বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন এলাকার ছাত্রছাত্রীরা। গত কয়েক বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে ‘শিট মেট্যাল ওয়ার্কার’, ‘ডিজেল মেকানিক’, ‘ফাউন্ড্রিম্যান’ এবং ‘কারপেন্টার’এই চারটি বিভাগ। সম্প্রতি রাজ্যর কারিগরি শিক্ষা দফতর জানায়, আরও তিনটি বিভাগের আসন সংখ্যা কমানো হয়েছে। ওই বিভাগগুলিতে গত বছরের তুলনায় কম ছাত্র ভর্তি করাতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ‘ফিটার’, ‘ওয়েল্ডার’ ও ‘টার্নার’। কিন্তু এতে জটিলতা বেড়েছিল এই বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা দফতর লিখিত নির্দেশ না পাঠানোয়। সব মিলিয়ে আগে যেখানে এই শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ছাত্র ভর্তি হতে পারতেন প্রায় সাড়ে চারশো, নতুন নির্দেশের কারনে ওই সংখ্যা কমে দাঁড়াতো প্রায় দুশো। আর এতেই আপত্তি তুলেছিল টিএমসিপি।
টানা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আইটিআইয়ে ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েন এলাকার ছাত্রছাত্রীরা। সমস্যা মেটানোয় উদ্যোগী হন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। আইটিআই কর্তৃপক্ষর সঙ্গে অলোচনার পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন কারিগরি শিক্ষা দফতরের অধিকর্তার সঙ্গে। রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবুও উদ্যোগী হয়েছিলেন। আইটিআই সূত্রে জানা গেছে গত সপ্তাহে অধ্যক্ষ কলকাতায় গিয়ে দফতরের অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। অধ্যক্ষ অভিজিৎবাবু বলেন, “যে তিনটি বিভাগে আসন সংখ্যা কমানোর জন্য মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিতে অন্য বারের মতোই স্বাভাবিক সংখ্যায় ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে সদর দফতর থেকে সম্প্রতি নির্দেশ এসেছে।” এ দিন বিধায়ককেও নতুন নির্দেশের কথা জানান আইটিআই কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আলোচনায় উঠে আসে বন্ধ হয়ে থাকা বিভাগগুলি খোলার জন্য আইটিআইয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টিও। এক্ষেত্রেও তাঁর তরফে প্রয়োজনীয় সাহায্যর আশ্বাস দিয়েছেন বিধায়ক। আইটিআই সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ সরবরাহের মাত্রা বাড়াতে ইতিমধ্যেই জেলা বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কর্তৃপক্ষ। বিধায়ক বলেন, “বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে আইটিআইকে অর্থ সাহায্য করব। কারিগরি শিক্ষা দফতরের অধিকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে বিভাগগুলি খোলার ব্যবস্থা করা হবে।” টিএমসিপির পুরুলিয়া জেলা কমিটির সদস্য পিন্টু মাজি বলেন, “আন্দোলনের ফলেই তিনটি নিভাগ নিয়ে তৈরি হওয়া সমস্যা মিটেছে। আইটিআইয়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বিধায়ক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন এই প্রেক্ষিতেই আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি আমরা।” |