পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার বিডিওদের দেহরক্ষী দেওয়ার ভাবনা অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছিল। বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল এলাকার কিছু বিডিওকে কয়েক বছর আগেই দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে। এ বার পুরুলিয়ার মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার বিডিওদের দেহরক্ষী দেওয়ার কাজ শুরু হল। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “পুরুলিয়ার ৯টি ব্লকের বিডিওদের দেহরক্ষী দেওয়ার কাজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে।”
পুরুলিয়ার মাওবাদী প্রভাবিত বলে চিহ্নিত ৯টি থানা হল: বান্দোয়ান, বোরো, বরাবাজার, বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, আড়শা, ঝালদা, জয়পুর ও কোটশিলা। জেলা পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, সম্প্রতি মাওবাদীদের বাতে ওড়িষায় এক বিধায়ক ও ছত্তিসগঢ়ের এক জেলাশাসক অপহরণ হওয়ায় এই জেলার জঙ্গলমহল এলাকার বিডিওদের নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকে জঙ্গলমহল এলাকার বিডিওদের দু’জন করে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা সব সময় বিডিওদের সঙ্গে থাকবেন। এ ছাড়া বিডিওরা প্রত্যন্ত এলাকায় পরিদর্শনে গেলে তখন তাঁদের সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী থাকবে।” তিনি জানান, বিডিওদের নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক রাখা হচ্ছে না।
জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, প্রথমে ঠিক হয়েছিল বান্দোয়ান, বরাবাজার, ও বাঘমুণ্ডির বিডিওদের দু’জন করে ও বাকি ছয় বিডিওদের একজন করে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দেওয়া হবে। পরে ওই সিদ্ধান্ত বদল করে ঠিক হয়, জঙ্গলমহল এলাকার সমস্ত বিডিওদের দু’জন করে দেহরক্ষী দেওয়া হবে। মাওবাদী এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ও এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ রয়েছে এমন পুলিশ কর্মীদের বিডিওদের দেহরক্ষী হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। তাঁরা সাদা পোশাকে থাকবেন। ব্লক অফিসের সাধারণ কর্মীদের থেকে তাদের যেন আলাদাভাবে চিহ্নিত করা না যায়- এমন নির্দেশই দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের কাছে অত্যাধুনীক আগ্নেয়াস্ত্র থাকছে। এরফলে তাঁদের দ্রুত স্থান বদল করে শত্রুর মোকাবিলায় ‘পজিশন’ নেওয়ার সুবিধা হবে।
ব্যক্তিগত দেহরক্ষী রাখা নিয়ে কি বলছেন বিডিওরা? বান্দোয়ানের বিডিও মধুসূদন মণ্ডল বলেন, “এখন তো আমাদের কাজের পরিধি আরও বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন বিভাগ একসাথে উন্নয়নের কাজ করছে। তাই কাজের পরিদর্শনে বেরোলে কখন অফিসে ঢুকব তার ঠিক নেই। তবে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী থাকলেই যে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে এমন ভাবার কোনও কারন নেই। দেহরক্ষী থাকা সত্ত্বেও ছত্তীসগঢ়ের জেলাশাসককে তো মাওবাদীরা অপহরণ করেছে।” আবার বরাবাজারের বিডিও দেবজিৎ বসুর মতে, “দেহরক্ষীরা সব সময় গায়ে লেপ্টে থাকলে অস্বস্তি হবে। তবে তাঁরাও তো নিজেদের দায়িত্ব পালনের জন্য তা করবেন।” একই সঙ্গে তাঁর আশঙ্কা, এতে সাধারণ এতে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে বিডিওদের একটা দুরত্ব তৈরি হতে পারে। আবার দেহরক্ষী নেওয়ার সরকারি নির্দেশ ফেরানোর ঝুঁকিও তাঁরা নিতে চান না। তবে অনেক বিডিও-র আশা, বিডিও-দের অক্রমণ করলে যে এলাকার উন্নয়ন থমকে যাবে- মাওবাদীরা নিশ্চয় তা জানেন। |