|
|
|
|
দুষ্কৃতীদের দাপট নিয়ে রাজনৈতিক তরজা |
সীমান্ত মৈত্র • অশোকনগর |
অশোকনগরের সেন্ট ফ্রান্সিস ইংলিশ স্কুলের ছাত্র অনিকেত সিংহের গুলিবিদ্ধ হওয়াকে আদৌ কোনও ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মনে করছেন না স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য চলছে।
খুন, ডাকাতি, তোলাবাজি, চুরি, বোমাবাজি, গুলিচালনার মতো বহু ঘটনার সাক্ষী অশোকনগর। কোনও কোনও সময় তা কমলেও কখনওই একেবারে বন্ধ হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে, দোলের দিন অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে দু’টি দুষ্কৃতী দলের মধ্যে বোমাবাজি, গুলির লড়াই হয়। সোমবার গভীর রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে অশোকনগর কল্যাণগড় পুর এলাকার দেবীনগরে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি চুরির ঘটনাও ঘটেছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের ঘটনাও ঘটছে।
এলাকার কয়েক জন কুখ্যাত দুষ্কৃতীর নিজস্ব দল আছে। তাদের মধ্যে মাঝে মধ্যেই গোলমাল বাধে। পুলিশ জানিয়েছে, রামশীল, কালুদাস, সুচো গোপাল, আজগর, বিজয় সরকারেরা হল এই এলাকার পুরনো দুষ্কৃতী। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতার হয়েছে এদের অনেকেই। কিন্তু তাদের সাগরেদরা এখনও এলাকায় ঘুরছে। তবে আগের থেকে দাপট কিছুটা হলেও কম। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের পাশাপাশি বহিরাগত সমাজবিরোধীরাও বিভিন্ন সময়ে ডেরা গেড়েছে অশোকনগরে। তাদের কাছে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র আছে বলেও অভিযোগ। ‘পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সমীর দত্ত বলেন, “পুলিশের গাফিলতিতে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভা সব সময় পুলিশের পাশে থাকবে।” স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের ধীমান রায় ইদানীং প্রতিটি সভায় গিয়ে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ‘মেলামেশা’ না করার পরামর্শ দিচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীদের। তাঁর অভিযোগ, “সিপিএমের মদতে দুষ্কৃতীরা এখনও সক্রিয়।” সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, “সিপিএমের এমন দৈন্যদশা হয়নি যে দুষ্কৃতীদের মদত দিতে হবে।” উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ‘কড়া পদক্ষেপ’ করার আর্জি জানিয়েছেন ধীমানবাবু।
সত্যসেবীবাবুর কথায়, “দল হিসাবে সিপিএম কখনওই এই এলাকায় দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দেয়নি। ভবিষ্যতেও দেবে না।” অন্য দিকে, ধীমানবাবুর বক্তব্য, “প্রায় তিরিশ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছি। কোনও দুষ্কৃতীর প্রয়োজন হয়নি আমাদের। ভবিষ্যতেও হবে না। তৃণমূলের কেউ দুষ্কৃতীদের মদত দিচ্ছে না।” রাজনৈতিক দলের লোকজনের এই বক্তব্য হলেও স্থানীয় মানুষের একাংশের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথাই বলে। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, “রাজনৈতিক দলের মদতে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত।”
সত্যসেবীবাবুর দাবি, ২০০৫-২০১১ সালের মধ্যে অশোকনগরের মানুষ বোমা-গুলির শব্দ শোনেননি। ওই বছরগুলিতে স্থানীয় বিধায়ক ছিলেন সত্যসেবীবাবুই। যদিও এই দাবি ‘নস্যাৎ করে’ তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই সময়ের মধ্যেই কল্যাণগড় বাজারে দিনের বেলায় অশোক ঘোষ নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। পিএল ক্যাম্প এলাকায় বোমাবাজি হয়। কচুয়া মোড়ে এক শিক্ষকের ছেলেকে খুন করা হয়েছিল। ধীমানবাবু বলেন, “পুরসভার তৎকালীন সিপিএম কাউন্সিলর বিকাশ রায়চৌধুরীর বাড়ি লক্ষ করেও সে সময়ে বোমাবাজি হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত বাগপাড়া-ঘোষপাড়া, বনবনিয়া, শ্মশান মোড়, আস্রাফাবাদ, মিলেয়িনাম পার্ক, হাসপাতাল এবং রাধা কেমিক্যাল মোড় এলাকায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেশি। পুলিশ সুপার বলেন, “দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চলছে। বাকিরাও খুব শীঘ্রই গ্রেফতার হবে।” সেই আশাতেই এখন দিন গুনছেন অশোকনগরের মানুষ। |
|
|
|
|
|