বাড়ছে আসক্তি। নেশায় ক্রমশ ডুবছে শহর। স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাস কিংবা পাড়ার আড্ডামাদক গ্রাস করছে সবই। কৃষ্ণনগর শহরের স্কুল-কলেজের ছাত্রদের একটা বড় অংশ আসক্ত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন নেশায়। জেলা গোয়েন্দা দফতরের পাশাপাশি এ তথ্য মিলেছে স্থানীয় স্কুল-কলেজগুলির প্রশাসকদের কাছেও। বাজারের সহজলভ্য ডেনড্রাইট, হোয়াইটনার রিমুভারের মতো আপাত সাধারণ এই সবে জিনিষ নিয়েই বাড়ছে নেশার প্রকোপ।
বছর কয়েক ছাত্রদের অনেকেই রেল লাইন ঘেঁষা ঝুপড়িতে লুকিয়ে মাদক সেবন করত। এখন অলিতে গলিতে চলছে নেশার রমরমা কারবার। শহরের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বাড়ছে প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষের। মাঝেমধ্যেই স্কুল কলেজ চত্বরেও নেশা করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ছে পড়ুয়ারা। জানানো হচ্ছে অভিভাবকদেরও। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির বদল নেই।
কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান কংগ্রেসের অসীম সাহা বলেন, “ডেনড্রাইটের নেশা ভীষণভাবে ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ভাবে আমরা অভিভাবকদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন মাদকের ঠেকে হানাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও ভাবেই পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না।” তিনি জানান, ডেনড্রাইটের নেশায় চোখের সামনে শেষ হয়ে যাচ্ছে একটা প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। স্কুলে স্কুলে সচেতনতা শিবির আয়োজন করার কথা ভাবছে তাই পুরকর্তৃপক্ষ।
উদ্বিগ্ন শিক্ষক সমাজও। কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “যে ভাবে ছাত্রদের মধ্যে দ্রুত নেশার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আমরা রীতিমতো আতঙ্কিত। কয়েক জন ছাত্রকে চিহ্নিত করে তাদের অভিভাবকদের জানিয়েছি। ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলেও দেখেছি। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার চাপেই এই সব মারাত্মক নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা বলে মনে হচ্ছে।” একই কথা বললেন কৃষ্ণনগরের দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের অধ্যক্ষ শাহাজাহান আলি। তিনি বলেন, “আমরা বেশ কয়েক জনকে হাতেনাতে ধরেছি। অভিভাবকদেরও জানিয়েছি। তবে প্রথমে তাঁরা বিশ্বাস করতে চাননি বরং সন্তানকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পেরেছেন তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।”
শহরের বাইরে চাপড়া, নাকাশিপাড়া, কৃষ্ণগঞ্জ, হাঁসখালি, করিমপুরের মতো এলাকাতেও ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে নেশা। ডেনড্রাইট বা হোয়াটনার রিমুভার রুমালে ঢেলে নিশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেওয়াই এই নেশার দস্তুর। মাথা ঝিমঝিম করে এবং শরীর অবশ হয়ে আসে এর প্রভাবে। শহরের মাঝেরপাড়ার মাঠ, জলঙ্গির ধার, অঞ্জনার ধার, কারবালার মাঠ-সহ বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় ছোট ছোট দলে সন্ধ্যের পর থেকেই শুরু হয় নেশার কারবার। কোনও গন্ধ না থাকায় বাড়ির লোকেরও কোনও সন্দেহ হয় না।
এই নেশার প্রকোপ নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকেরাও। কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালের প্রাক্তন মনোবিদ দেবাশিস দাসগুপ্ত বলেন, “আমার কাছে ডেনড্রাইটের নেশায় আক্রান্ত প্রচুর রোগীর ভিড় হচ্ছে। মূলত ছাত্রেরা। এই নেশা ছাড়ানো খুবই কঠিন কারণ এর কোনও অ্যান্টি ড্রাগ নেই। অল্প বয়সেই মারা যাচ্ছে আক্রান্তরা।” ডেনড্রাইট বা হোয়াটনার রিমুভার যেহেতু আর পাঁচটা নেশার উপকরণের মতো নয়, পড়াশোনার উপকরণ হিসেবেই যেহেতু এর ব্যবহার ফলে এর বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে অসহায় বোধ করে পুলিশও। পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “বিষয়টি আমরা খুবই গুরুত্ব নিয়ে দেখছি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও চালানো হচ্ছে।” |