|
|
|
|
ফের নালিশ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের |
বরাদ্দে পক্ষপাতিত্ব সেচমন্ত্রীর |
অমিত কর মহাপাত্র • এগরা |
ফের সেই ‘বঞ্চনা’র অভিযোগে সরব তৃণমূল পরিচালিত পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। রাজ্যে নিজেদের জোট সরকার, সেই সরকারেরই সেচমন্ত্রী, শরিক কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া পূর্ব মেদিনীপুরকে বঞ্চিত করে নিজের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রকল্প-খাতে বেশি বরাদ্দ করছেন বলে নালিশ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তৃণমূল নেতৃত্বের। বাম-আমলের মতোই এখনও নালিশ আঁকড়েই চলছেন এই জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা।
দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুররাজ্যের এই ৬টি জেলায় সেচ ও জলপথ দফতরের কাজ করার জন্য ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্ল্যানিং কমিশন। ‘পিছিয়ে পড়া’ এলাকার উন্নয়ন তহবিলের (বিআরজিএফ) ওই টাকায় পূর্ব মেদিনীপুরে ৯টি প্রকল্পের কাজ হবে। বরাদ্দ হয়েছে ১১ কোটি ১২ লক্ষ টাকা। আর পশ্চিম মেদিনীপুরে ১০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৭৮ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেনের অভিযোগ, “গোটা পূর্ব মেদিনীপুরে যেখানে বরাদ্দ হয়েছে ১১ কোটি, সেখানে সেচমন্ত্রীর নিজের এলাকা শুধু সবংয়েই বরাদ্দ হয়েছে ২১ কোটি টাকা। উন্নয়নের অর্থ-বরাদ্দে বৈষম্য করে আমাদের জেলার প্রতি বঞ্চনা করছেন সেচমন্ত্রী।”
তৃণমূলের এই অভিযোগ মানতে নারাজ সেচমন্ত্রী। মানসবাবু বলেন, “আমরা ৩০০ কোটি টাকা চেয়েছিলাম। পেয়েছি মাত্র ১৩০ কোটি। ফলে পূর্ব মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকাতেই দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত প্রকল্পগুলির কাজ এ বারেও করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বছরে এগুলোর জন্য ফের টাকা চাইব।” তিনি আরও বলেন, “কোনও জেলাকে আলাদা করে দেখা হয় না। প্রয়োজনের ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হয়। যেমন, ওয়ান-টাইম অ্যাডিশনাল সেন্ট্রাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রকল্পে পূর্ব মেদিনীপুর ৮৫ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা পেয়েছে। পশ্চিমে এই প্রকল্পে কোনও বরাদ্দই হয়নি। ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে পূর্ব ১৩৫ কোটি টাকা পেয়েছে, পশ্চিম মাত্র ৪৫ কোটি। শুধু একটি প্রকল্পের হিসাব দেখালে তো হয় না।” পশ্চিম মেদিনীপুরের কংগ্রেস নেতা তথা সেচমন্ত্রীর ভাই বিকাশ ভুঁইয়ার আবার বক্তব্য, “সবং বহু দিন ধরেই বঞ্চিত। ফি বছর এখানেও বন্যা হয়। ‘পিছিয়ে পড়া’ এলাকার তহবিলের টাকা স্বাভাবিক ভাবেই পশ্চিম মেদিনীপুরেরই বেশি পাওয়ার কথা।” আর পূর্ব মেদিনীপুরের কংগ্রেস নেতৃত্বের কটাক্ষ, নিজেদের অকর্মণ্যতা ঢাকতেই বছরের পর বছর ছুতো-নাতায় শুধু নালিশই করে চলেছেন জেলা পরিষদের তৃণমূল কর্তারা!
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিআরজিএফের টাকায় পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা থানা এলাকার (সাপাই) ওড়িশা কোস্ট ক্যানালে (১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে) তৈরি হবে পাকা সেতু। কোলাঘাট রেল স্টেশন থেকে দেনান সেচ বাংলো পর্যন্ত রাস্তা পাকা করা হবে ৫১ লক্ষ টাকায়। পটাশপুরের আড়গোয়াল ড্রেনেজ ক্যানালে (পানিয়া) স্লুইস-গেট নির্মিত হবে ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকায়। এগরার বেতাহাটে বেতা-খাগদা খালের উপরে পাকা সেতু হবে ১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকায়। এগরা ও রামনগর থানার মীরগোদা, নেহালিয়া ও চাটলায় জুকি সেচ-বাঁধের উপরে মোরাম রাস্তার কাজ হবে ২৭ লক্ষ টাকায়। তমলুকের ভসরা খালে ১ কোটি ১১ লক্ষ টাকায় বানানো হবে ছোট যান চলাচলের জন্য পাকা সেতু। ১ কোটি টাকা ব্যয়ে শশীগঞ্জে স্লুইস গেট (শশীগঞ্জ খাল) নির্মাণ করা হবে। দিঘায় যাত্রানালা খালের মোহনার কাছে ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকায় তৈরি হবে পাকা ‘বক্স কালভার্ট’। ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আমিরবাদ খালের উপরে সোফিয়াবাদে তৈরি হবে পাকা সেতু। অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ১০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৭৮ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। ২৩ লক্ষ টাকায় লালগড় ও শালবনি থানা এলাকার খালবাঁধের উপরে গ্রামীণ মোরাম রাস্তা সংস্কার করা হবে। ৫০ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কংসাবতী নদীতেও হবে পাকা সেতু। চণ্ডীয়া নদীর ডান দিকের বাঁধে বড়িশা থেকে রানিচক পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার হবে ২৪ লক্ষ টাকায়। আমড়াখালি খালের উপরে মার্কণ্ডচকে পাকা সেতু হবে ১ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকায়। কালিমণ্ডপ খালে মোহাড় বাজারের কাছে কাটিনা মৌজায় পাকা সেতু তৈরি হবে ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকায়। গণপতি খালের উপরে শ্যামসুন্দরপুরে পাকা সেতু তৈরি হবে ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকায়। মোহিনীবাজারে দুই লেনের পাকা সেতু নির্মিত হবে ৬ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকায়। কপালেশ্বরী নদীর উপরে ভুয়ায় পাকা সেতু হবে ৮ কোটি ২৪ লক্ষ টাকায়। ৫ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকায় তেইহি-তে মোরাম রাস্তা নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হবে। প্রকল্পগুলির প্রশাসনিক অনুমোদন মিলেছে ইতিমধ্যে। মে মাসের মধ্যেই দরপত্র সংক্রান্ত কাজগুলি সারা হবে। তবে, শিলান্যাস করা ছাড়া বর্ষার আগে কোনও কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। অক্টোবরের শেষ অথবা নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর। |
|
|
|
|
|