সিআইডি হেফাজতে অঞ্জন
ওই নামে কাউকে মনে পড়ছে না অমর্ত্য সেনের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভাই’ পরিচয় দিয়ে প্রতারণার দায়ে ধৃত অঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ জানালেন অমর্ত্য সেন। প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবের কাছে ওই নামের কাউকে চাকরির জন্য সুপারিশ করেননি। প্রতীচী ট্রাস্টের মারফত শুক্রবার এমনই জানিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।
প্রতীচী ট্রাস্টের ডিরেক্টর মানবী মজুমদার একটি প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন, অর্মত্যবাবু প্রতিদিন বহু মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অঞ্জন ভট্টাচার্য নামে কোনও ব্যক্তির নাম তিনি মনে করতে পারছেন না বলে তিনি জানিয়েছেন। এমনকী, তাঁর চাকরির জন্য সুপারিশের কোনও ঘটনার কথাও অর্মত্যবাবু মনে করতে পারছেন না।
এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গৌতমবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, অঞ্জন-কাণ্ডে অর্মত্যবাবুর নাম জড়িয়ে কোনও ধরনের ‘বিতর্ক’ তিনি একেবারেই চান না। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতমবাবু বলেন, “অর্মত্য সেন অসত্য বলছেন, এই কথা বলার স্পর্ধা আমার নেই। উনি ব্যস্ত মানুষ। সারা বছর নানা কাজে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ান। ওঁর মনে না পড়তেই পারে। কিন্তু আমার যেটা মনে পড়েছে, সেটাই আমি বলেছি। ভবিষ্যতে আমার সঙ্গে অর্মত্যবাবুর দেখা হলে একান্ত আলাপচারিতায় আমি অঞ্জনের চাকরির সুপারিশের ঘটনার কথাটি ওঁকে মনে করিয়ে দিতে পারব।”
কাঁথি আদালতে অঞ্জন ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র
কিন্তু কবে এবং কী ভাবে অঞ্জনের চাকরির জন্য গৌতমবাবুকে সুপারিশ করেছিলেন অর্মত্যবাবু? গৌতমবাবুর ব্যাখ্যা, “আমি এই বিষয়ে অহেতুক বিতর্ক চাই না। তাই কবে ও কী ভাবে অর্মত্যবাবু সুপারিশ করেছিলেন, সেই ব্যাপারে আমি বিস্তারিত কিছু বলব না। অন্য কেউ হলে অবশ্যই সব বলতাম। এই ঘটনায় অর্মত্য সেনের নাম কোনও ভাবেই আমি জড়াতে চাইনি।” অমর্ত্যবাবুর বক্তব্যের পরে গৌতমবাবু এ কথা বললেও অঞ্জন-কাণ্ডে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের নাম জড়িয়েছিলেন প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রীই।
এ দিন সন্ধ্যায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের শেষেও আলিমুদ্দিনে প্রশ্নের জবাবে গৌতমবাবু বলেন, “রবীন্দ্রনাথ, মাদার টেরিজা এবং অমর্ত্য সেনকে নিয়ে কোনও উন্মাদও মিথ্যে কথা বলে না। অঞ্জনের চাকরির ব্যাপারে সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেসের কেউ সুপারিশ করেনি।”
‘মুখ্যমন্ত্রীর ভাই’, এই ভুয়ো পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে কাঁথিতে ধৃত অঞ্জনকে এ দিনই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। কাঁথি থানার হেফাজতে থাকাকালীনও অবশ্য ধৃতকে একাধিক বার জেরা করেছিলেন সিআইডি অফিসারেরা। প্রথম পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষে এ দিন অঞ্জনকে কাঁথি এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। সিআইডি-র তরফে আদালতে জানানো হয়, ইতিমধ্যেই তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি নিয়েছে। গত কয়েক দিনে অঞ্জনের একাধিক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নিউটাউন-রাজারহাট এবং শান্তিনিকেতনের জমি-জায়গার লেনদেন সংক্রান্ত কিছু নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে এবং ধৃতের নামে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে মোটা অঙ্কের আমানতের হদিশ মিলেছে। আরও জেরার জন্য ধৃতকে ৯ দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে চাওয়া হয়। এসিজেএম কুমকুম চট্টোপাধ্যায় সাত দিনের সিআইডি হেফাজত মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণার দায়ে অঞ্জন কাঁথি থেকে ধরা পড়ার পরই উঠে আসে গৌতমবাবুর নাম। কারণ, আবাসনমন্ত্রী হিসাবে গৌতমবাবু যখন হিডকো-র চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই সময়েই ওই সংস্থায় জনসংযোগ আধিকারিক হয়েছিলেন অঞ্জন। কোনও কোনও মহল থেকে অভিযোগ তোলা হয়, অঞ্জনের নানা ‘কুকীর্তি’র কথা জানতেন গৌতমবাবু। অঞ্জনের কীর্তিকলাপের সঙ্গে গৌতমবাবুর নাম বারবার উঠে আসায় গত মঙ্গলবার রাজারহাটে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে গৌতমবাবু জানান, তাঁকে হিডকো-য় চাকরি দেওয়া হয়েছিল অর্মত্যবাবুর সুপারিশে। অঞ্জন ১৯৯০ সালে কলকাতায় এসেছিলেন। হিডকো-য় চাকরি পান ২০০৮ সালের নভেম্বরে। তার আগে তিনি অঞ্জনকে চিনতেন না বলেই গৌতমবাবু জানান। প্রতীচীর মাধ্যমে অর্মত্যবাবুর এ দিনের বক্তব্যের পরও গৌতমবাবু বলেছেন, ২০০৮ সালের আগে অঞ্জন কাদের সঙ্গে মিশতেন, কী করতেন, খোঁজ নিলেই সব বেরিয়ে যাবে। অঞ্জনের বাবা শান্তিনিকেতনে থাকতেন। কংগ্রেস নেতা ছিলেন। সেই সুবাদে অঞ্জন শান্তিনিকেতনে কাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ও কোথায় যাতায়াত করতেন, তা একটু খোঁজখবর করলেই যে কেউ জানতে পারবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.