বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়
পরীক্ষা না দিয়েই মার্কশিট, জড়ালেন তৃণমূল বিধায়ক
রীক্ষা হয়নি। অথচ ফল বেরিয়ে গিয়েছে! এই ‘রাম না জন্মাতেই রামায়ণ’ রচনায় মুখ্য ভূমিকা জনৈক তৃণমূল বিধায়কের।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন (বিসিএ)-এ বিভাগের এক ছাত্র পরীক্ষা দেওয়ার আগেই তাঁর মার্কশিট পেয়ে গিয়েছেন। সৌজন্য তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক এবং উপাচার্যের অবশ্য দাবি, তাঁরা ওই ঘটনার কথা জানেন না। তবে নথিপত্র পেলে তদন্ত করে দেখবেন। আর মৃগেনবাবুর বক্তব্য, ঘটনাটা তাঁর পুরো ‘মনে নেই’। তবে ওই ছাত্র তাঁর কাছে একটা ‘সাহায্য’ চেয়েছিল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক বলেই তাঁকে তিনি ‘সাহায্য’ করেছিলেন।
বিধায়ক মৃগেন মাইতি
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসিএ-র ছাত্র ছিলেন অপু ভকত। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২০০৭-২০০৮ বর্ষের ০০০০৫২। তিনি বিসিএ-র ষষ্ঠ তথা চূড়ান্ত সেমেস্টার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২০১০ সালে। কিন্তু তৃতীয় সেমেস্টারের একটি পত্রে তিনি পাশ করতে পারেননি। স্বভাবতই তাঁকে ফের ওই পত্রের পরীক্ষায় বসতে হয়। ২০১১ সালে তিনি ওই পত্রের পরীক্ষায় বসেন এবং উত্তীর্ণ হন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় অপুকে ২০১০ সালের ফাইনাল পরীক্ষার মার্কশিট দিয়ে দিয়েছে। যেখানে তৃতীয় সেমেস্টারে তাঁর প্রাপ্ত নম্বরও উল্লেখ করা আছে ৩৩৮। অথচ, অপু তখনও তৃতীয় সেমেস্টারের সব পত্রে পাশই করেননি! তৃতীয় সেমেস্টারে যে পত্রে তিনি পাশ করতে পারেননি, তার পরীক্ষা তিনি দিয়েছেন ২০১১ সালে। সেখানে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর৫৫। ফলত প্রশ্ন উঠেছে, অপু ২০১১ সালে তৃতীয় সেমেস্টারের একটি পত্রে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দিয়ে ৫৫ পেলেন। তা হলে ২০১০ সালে তাঁকে কী করে ফাইনাল পরীক্ষার মার্কশিট দেওয়া হল এবং সেখানে তৃতীয় সেমেস্টারে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর কী ভাবে লেখা রইল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, তৃণমূল বিধায়ক মৃগেনবাবুর ‘অনুরোধ’-এ ওই ঘটনা ঘটেছে। মৃগেনবাবু গত বছর ১২ নভেম্বর নিজের বিধায়ক-প্যাডে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রাজকুমার কোঠারিকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠির বক্তব্য (যার প্রতিলিপি আনন্দবাজারের কাছে রয়েছে)‘আপনাকে ফোনে অপু ভকতের কথা বলেছিলাম। অপু ভকত যাচ্ছে। সব শুনে সমাধানের ব্যবস্থা করলে খুশি হব। ১৭ নভেম্বর এমকেডিএ-তে দেখা হবে। সাক্ষাতে বিস্তারিত কথা হবে। নমস্কার নেবেন’। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একাংশের অভিযোগ, মৃগেনবাবুর ওই সুপারিশের জোরেই অপু উপাচার্যের কাছে একটি আবেদন করেন। যাতে বলা হয় ‘আমি বিসিএ ষষ্ঠ সেমেস্টার পাশ করেছি ২০১০ সালে। কিন্তু তৃতীয় সেমেস্টারের একটি সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি ২০১১ সালে। ২০১০ সালের ষষ্ঠ সেমেস্টারের পরীক্ষার ফল আমাকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি’। অপুর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় যদি ২০১০ সালে কেবলমাত্র ষষ্ঠ সেমেস্টারের মার্কশিট তাঁকে দিত, তা হলে কোনও অভিযোগ উঠত না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে যে মার্কশিট দিয়েছে, তাতে প্রথম থেকে ষষ্ঠ সমস্ত সেমেস্টারের নম্বরই উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, যে তৃতীয় সেমেস্টার পরীক্ষা তখনও তিনি দেনইনি, তারও!
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মৃগেনবাবু বলেন, “আমার কাছে অনেকেই অনেক সাহায্য চাইতে আসে। আমি নিজের বিধায়ক-প্যাডে চিঠি লিখে তাঁদের প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেও দিই। বিধায়ক হিসাবে মানুষকে এটুকু সাহায্য তো করতেই হবে!” অপু ভকত যে তাঁর সুপারিশের জোরে পরীক্ষা দেওয়ার আগেই মার্কশিট পেয়ে গিয়েছে, তা কি তিনি জানেন? মৃগেনবাবুর জবাব, “অপু ভকত অনেক দিন আগে আমার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিল। আমি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজকুমার কোঠারিকে চিনি। তাই অপুকে সাহায্য করার জন্য তাঁর কাছে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু অপু আমার কাছে কী বিষয়ে সাহায্য চাইতে এসেছিল, তা আমার এখন একেবারেই মনে নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।” অপু কি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী বা সমর্থক? মৃগেনবাবু সাফ বলেন, “আমাদের পার্টির ছেলে না-হলে আমি তাকে সাহায্য করতে যাব কেন?” অধ্যাপক রাজকুমারবাবু অবশ্য মৃগেনবাবুর সুপারিশ-পত্র পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “আমি মৃগেন মাইতির ও রকম কোনও চিঠি পাইনি।”
অপুর সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁকে বহু বার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অপুর মার্কশিটে যাঁর স্বাক্ষর, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই পরীক্ষা নিয়ামক নিরঞ্জন কুমার মণ্ডল দাবি করেছেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে।” উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলছেন, “আমি কিছু জানি না। অভিযোগের নথিপত্র পেলে তদন্ত করে দেখব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.