গ্রামে সভা ডেকে এক গৃহবধূকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করে বের করে দেওয়া হল। ওই বধূর নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশ-প্রশাসনও তাঁকে গ্রামে রাখার ঝুঁকি নেয়নি। প্রশাসনের তরফে তাঁকে বাপের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি পোলবার ঝেড়োর পাড় গ্রামে। পুলিশ জানায়, লক্ষ্মী হেমব্রম নামে এক গৃহবধূর নামে দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামের এক শ্রেণির মানুষ ‘ডাইনি’ অপবাদ দিচ্ছিল। গ্রামের মোড়লরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, ওই মহিলাকে গ্রামে রাখা যাবে না। তাঁর স্বামী বা মেয়েরা গ্রামে থাকলে অবশ্য আপত্তি নেই। এরপর ক্রমেই ওই মহিলার উপর চাপ বাড়াতে থাকেন গ্রামের মাথারা। গ্রামের পুরনো বাসিন্দা ওই পরিবারটি বিপাকে পড়ে। পুলিশ-প্রশাসনকে তাঁরা পুরো বিষয়টি জানান। |
এরপর গ্রামে সালিসি সভা বসে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে ওই সভায় গ্রামের মাতব্বরেরা যান। সভায় ওই মহিলাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মাতব্বরেরা অভিযোগ তোলেন, ওই মহিলা আদিবাসী সমাজের নিয়ম-কানুন মানছেন না। তাঁর অসুবিধার কথা তিনি সমাজের মাথাদের না জানিয়ে পুলিশ-প্রশাসনেরক দ্বারস্থ হচ্ছেন। গ্রামে ওই সভার কথা পুলিশ ও প্রশাসনের অজানা ছিল না। ওই গ্রামের মোড়ল গোবিন্দ মান্ডি প্রশ্ন তোলেন, “উনি আমাদের সমাজে থাকবেন, আর রীতিনীতি মানবেন না তা কেমন করে হয়? প্রশাসনের কাছে ওঁর অসুবিধার কথা কেন বলা হয়েছে? আমাদের সমাজকে তো তিনি বিষয়টি জানাননি!” এই বিষয়ে লক্ষ্মী হেমব্রম বলেন,“গ্রামে ১৭ বছর বাস করলাম কিছু হল না আর আজ হঠাৎ-ই ডাইনি হয়ে গেলাম। কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে রটনো হচ্ছে।”
সভার মাথারা লক্ষ্মীদেবীকে ‘ডাইনি’ ঘোষণা করেন। বিষয়টি প্রশাসনের কানে আসে। আপাতত ওই বধূকে তাঁর বাপের বাড়ি পোলবার মহেশ্বরবাটির বড়বাঁধ এলাকায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। ওই বধূর মা কাজলমনি মুর্মু বলেন, “সম্পত্তি হাতাতেই আমার মেয়েকে মিথ্যা বদনাম দেওয়া হয়েছে। এখনকার বিজ্ঞানের যুগে ডাইনি বলে কেউ কিছু বিশ্বাস করে নাকি? ওদের অন্য মতলব আছে।” এ বিষয়ে জেলা সদর মহকুমাশাসক জলি চৌধুরী বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন ঘটনার প্রতি নজর রেখেছে। আপাতত নিরাপত্তার প্রয়োজনেই ওই মহিলাকে গ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে পরবর্তী পর্যায়ে গ্রামের মানুষকে বুঝিয়ে প্রশাসনের তরফে তাঁকে গ্রামে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।” |