গত সপ্তাহে আমেরিকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি যা বলেছিলেন, তা নিয়ে এর মধ্যেই দেশে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই বিতর্কের আবহেই আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু। জোট রাজনীতির জটে দেশের আর্থিক সংস্কার থমকে গিয়েছে বলে কৌশিকবাবু যে মন্তব্য করেছিলেন, তার প্রতিধ্বনি গত কাল মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্সের মতো আজ এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক বা এডিবি-র কথাতেও শোনা গেল। এডিবি-ও জানিয়ে দিল, বিনিয়োগে গতি আনতে গেলে সংস্কারের পথের জট কাটাতে হবে।
মনে করা হচ্ছে, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতেই এ দিন কৌশিকবাবু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। বিতর্ক ধামাচাপা দিতে কেন্দ্রীয় সরকারকেও মাঠে নামতে হয়।
আজ কিন্তু কৌশিকবাবুর বক্তব্যকেই কার্যত সমর্থন করে এডিবি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর-জেনারেল রজত নাগ জানিয়েছেন, নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধাক্কা খেয়েছে। ভারতকে দ্রুত সংস্কারের পথে ফিরতে হবে এবং আর্থিক ঘাটতিতে রাশ টানতে হবে। তাঁর মতে, রাজকোষ ঘাটতি ৫.১ শতাংশে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তাতে পৌঁছনো সম্ভব। কিন্তু ভর্তুকির বহর কমানোর জন্য পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানোর মতো কড়া সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গত কালই স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স (এসঅ্যান্ডপি) ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’-এ নামিয়ে এনেছে। প্রণব মুখোপাধ্যায় কিন্তু পরিস্থিতি সামলাতে আশ্বাস দিয়েছিলেন, কেন্দ্র আর্থিক সংস্কারের প্রতি দায়বদ্ধ। কাজেই আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। আজ এডিবি-র শীর্ষকর্তা রজত নাগও জানিয়েছেন, ভারতের অতিরিক্ত মাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থার এই ‘দৃষ্টিভঙ্গির বদল’কে ধাপে ধাপে সংস্কারের কাজ শুরু করার জন্য ‘সঠিক সময়ে সতর্কবার্তা’ হিসেবেই দেখতে চান তিনি। রজতের বক্তব্য, “আমার মনে হয় অনেকগুলো সংস্কারের কাজ আটকে রয়েছে জমি অধিগ্রহণ, খনি, পেনশন, বিমা, খুচরো ব্যবসা। সরকারকে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।” তাঁর মতে সংস্কারের কাজ শুরু হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। প্রকারান্তরে কৌশিকবাবুর বক্তব্যকেই সমর্থন করেছেন রজত। ভারত সম্পর্কে মূল্যায়ন বদলের পিছনে এসঅ্যান্ডপি-র যুক্তি ছিল, ভারতে বিনিয়োগের গতি শ্লথ হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে আর্থিক বৃদ্ধির নিম্নগতি বা ক্রমবর্ধমান রাজকোষ ঘাটতি সামাল দেওয়া যেত।
কিন্তু সেখানে আর্থিক সংস্কার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৌশিক বসু ওয়াশিংটনে গিয়ে এই সংস্কারের পক্ষেই সওয়াল করেন। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি কৌশিকবাবু। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে দুু’বছরের জন্য অর্থ মন্ত্রকের উপদেষ্টা পদে যোগ দিয়েছিলেন। গত জানুয়ারিতে তাঁর মেয়াদ অগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। অগস্টের পর ফের অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজেই ফিরতে চান কৌশিকবাবু। তাঁর উত্তরসূরি খুঁজতে ইতিমধ্যেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। |