ভাড়া বাড়িয়ে রেলের স্বাস্থ্য ফেরাতে গিয়ে দলনেত্রীর কোপে পড়ে মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন তাঁর পূর্বসূরি দীনেশ ত্রিবেদী। রেলের স্বাস্থ্য ফেরাতে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ার ‘সহজ’ পথই নিলেন নতুন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়!
মুকুল একা নন, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেলের জন্য আরও বেশি অনুদান চেয়ে বারেবারেই সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীনেশ ত্রিবেদীও। তাঁদেরও অভিযোগ ছিল, আর পাঁচটা মন্ত্রকের তুলনায় কম আর্থিক সাহায্য পায় রেল। আজ লোকসভায় বাজেট বরাদ্দ নিয়ে বিতর্কে মুকুল বলেন, “ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পাওনা মেটাতে গিয়ে রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর উচিত, বাড়তি অর্থ দিয়ে রেলকে সাহায্য করা।” মমতাও এক দাবি করেন। অর্থ মন্ত্রক থেকে যোজনা কমিশন সবাই তখন জানায়, ভাড়া না বাড়ালে রেল অতিরিক্ত সাহায্য পাবে না।
রেলের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরনোর দশা। পরিষেবা থেকে সুরক্ষা সব ক্ষেত্রেই অসংখ্য নতুন প্রকল্প ঘোষণা হলেও অর্থের অভাবে সেই সব কাজ গতি পাচ্ছে না। বাড়ছে না ভাড়াও। এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে আজ একাধিক পথ বাতলেছেন মুকুল। রেলের জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার, বিজ্ঞাপন বা পিপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে রেলের আর্থিক হাল ফেরানোর কথা বলেছেন তিনি। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেলের স্বাস্থ্য ফেরাতে একই পথ দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু সে পথ তখনও ব্যর্থ হয়েছিল। লোকসভায় মুকুলও স্বীকার করে নেন, পিপিপি মডেল এখনও সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবু তাঁর আশা, ওই মডেল থেকে আয়ের মুখ দেখা যাবে! আর তাই ওই মডেলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
দু’দিন ধরে চলা বাজেট বরাদ্দ সংক্রান্ত বিতর্কে অংশগ্রহণকারী প্রায় সব সাংসদই নিজেদের এলাকার জন্য একাধিক রেল প্রকল্পের দাবি জানান। জবাবে সবার আবেদনই খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি মুকুল আজ জোর দেন নিত্যযাত্রীদের যন্ত্রণা লাঘবের উপর। সেই লক্ষ্যে হাওড়া, শিয়ালদহ বা মুম্বইয়ে নিত্যযাত্রীদের জন্য আরও বেশি করে ১২ কামরার ট্রেন চালানোর আশ্বাস দেন তিনি। এ জন্য হাওড়া-শিয়ালদহ লাইনের স্টেশনগুলির দৈর্ঘ্য বাড়ানোর কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। পূর্বসূরিদের ধাঁচেই এ দিন মুকুলও জোর দিয়েছেন রেলের সুরক্ষাব্যবস্থার উন্নতির উপরে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গোটা দেশের ১৩,৪৭১টি প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিং-কে প্রহরাযুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আগামী এক বছরে রেলের সুরক্ষা সংক্রান্ত পদে এক লক্ষ নিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। প্রায় ১২ হাজার রেল পুলিশ নিয়োগ করা হবে বলেও লোকসভায় জানান তিনি।
আগের রেলমন্ত্রীর সুরে মুকুলও জানান, কৌশলগত কারণে চিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। সিকিম-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্যের রাজধানীর মধ্যে রেল যোগাযোগ গড়া কেন্দ্রের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান তিনি। |