গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা, এমনকী শীতের মেজাজমর্জিও ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আবহাওয়ার চরিত্রে খামখেয়ালিপনাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল বৈশিষ্ট্য। এর মধ্যেই আশা জাগিয়ে দিল্লির মৌসম ভবন পূর্বাভাস দিয়েছে, এ বারেও দেশে স্বাভাবিক বর্ষা হবে। তবে এটা প্রাথমিক পূর্বাভাস। বর্ষার চূড়ান্ত পূর্বাভাস মিলবে জুনে।
জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ভারত মহাসাগর, অতলান্তিক মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর এবং পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহের মতো পাঁচটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আবহবিজ্ঞানীরা বর্ষার প্রাথমিক পূর্বাভাস তৈরি করেন। তার ভিত্তিতেই প্রতি বছর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বর্ষার প্রথম পূর্বাভাস দেয় দিল্লির মৌসম ভবন। যে-সব প্রাকৃতিক বিষয় বা প্রবণতার নিরিখে মৌসম ভবন প্রাথমিক পূর্বাভাস তৈরি করে, তার দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা সব সময়েই থেকে যায়। তাই ফের একই বিষয় ও প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে জুনে বর্ষার চূড়ান্ত পূর্বাভাস দেয় মৌসম ভবন। তবে সেই চূড়ান্ত পূর্বাভাসেরও সীমাবদ্ধতা আছে। দেশের কোন অংশে কতটা বৃষ্টি হবে, ওই পূর্বাভাসে সেই ব্যাপারে সম্ভাব্য পরিসংখ্যান দেওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন মৌসম ভবনের এক আবহবিদ।
২০১০ সালে সারা দেশে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আটটি জেলায় খরা ঘোষণা করতে হয়। সে-ক্ষেত্রে বর্ষার ব্যাপারে এই ধরনের আগাম ঘোষণায় লাভ কী?
এক আবহবিদের মন্তব্য, দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়া মানে যে সব প্রদেশই পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাবে, তা কিন্তু নয়। কোনও কোনও প্রদেশ অতিরিক্ত বৃষ্টি পায়। আবার কোনও কোনও রাজ্যে বৃষ্টি হয় কম। কোথাও কোথাও বর্ষণের ঘাটতি থেকে যায়। কেরল দিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে সাধারণ ভাবে বর্ষা ঢোকে ১ জুন। গোটা দেশ থেকে তা বিদায় নেয় সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। পূর্ব ভারতে মূল বৃষ্টি হওয়ার কথা জুলাই-অগস্টে। কিন্তু গত কয়েক বছরের আবহাওয়া-চিত্র বলছে, পশ্চিমবঙ্গে মূল বর্ষণ হচ্ছে অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের পরে। ২০১১ সালেও তা-ই হয়েছে। বর্ষার নির্ঘণ্টটাই কার্যত বদলে গিয়েছে। বর্ষা যখন নিজস্ব ছন্দই মানছে না, তখন এত আগে থেকে তার পূর্বাভাস দেওয়া ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত? এক আবহবিদ জানাচ্ছেন, বর্ষার বৃষ্টির উপরে দেশে কৃষি উৎপাদন পুরোপুরি নির্ভর করে। আর কৃষির উপরে নির্ভর করে দেশের অর্থনীতি। বৃষ্টি কেমন হবে, তার একটা আগাম চিত্র দিতে পারলে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকও আগেভাগে কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে। এখন আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনেক বিজ্ঞানসম্মত ভাবে দেওয়া হয়। তাই সামগ্রিক ভাবে এর বিচ্যুতির সম্ভাবনা কম। কিন্তু দেশের কোন অঞ্চলে কোন মাসে কতটা বৃষ্টি হবে, সেই ব্যাপারে আগে থেকে মোটামুটি একটা হিসেব দিতে না-পারলে সামগ্রিক ভাবে কৃষকদের কোনও লাভ হবে কি?
মৌসম ভবনের এক আবহবিদ বলছেন, “লাভ যাতে হয়, সেটাই এখন প্রাথমিক লক্ষ্য।” |