বফর্সের ‘ভূত’ বেরোতেই সঙ্ঘের নির্দেশে সরাসরি সনিয়া গাঁধীকে নিশানা করল বিজেপি।
বফর্স বিতর্ক ফের দানা বাঁধার পরে বিজেপি কতটা আক্রমণাত্মক হবে, সে বিষয়ে গত কাল পর্যন্তও দ্বিধায় ছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। আজ সংসদের উভয় কক্ষে অরুণ জেটলি এবং যশোবন্ত সিংহ পরোক্ষে রাজীব গাঁধী ও তাঁর পরিবারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেও সরাসরি সনিয়াকে আক্রমণ করেননি। কিন্তু পরে আবার রবিশঙ্কর প্রসাদ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আমরা মনমোহন সিংহের বাধ্যবাধকতা বুঝি। কিন্তু কুত্রোচ্চির নাম এলে কংগ্রেস নেতারা এত আড়ষ্ট হন কেন? সরকারকে সনিয়া গাঁধী দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে বলেছেন। তাঁর সততা থাকলে তিনি বফর্সের ঘটনার নতুন করে তদন্ত করান।”
লোকসভা ভোটের হাওয়া তুলতে এখন থেকেই মনমোহনের পাশাপাশি সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে আক্রমণের পরামর্শ দিচ্ছে আরএসএস। বফর্স-প্রসঙ্গ উঠে আসায় সেই ‘অস্ত্র’কেও হাতছাড়া করতে চাইছে না তারা। সেই মোতাবেকই বিজেপি নেতারা স্থির করেন, আজ সংসদের উভয় কক্ষে বিষয়টি তোলা হবে। বামেদের সঙ্গে সমন্বয় করে কৌশল রচনা হয়, এ নিয়ে শাসক গোষ্ঠীকে বলতে দেওয়া হবে না। সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবে লোকসভায় যশোবন্ত সিংহ, বাসুদেব আচারিয়ার বক্তব্যের পর কংগ্রেসের সঞ্জয় নিরুপমকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়। রাজ্যসভাতেও অরুণ জেটলি, সীতারাম ইয়েচুরিদের পরে রাজীব-ঘনিষ্ঠ মণিশঙ্কর আইয়ারকে বলতে দেওয়া হয়নি। হট্টগোলে দুই সভাই দুপুর দু’টো পর্যন্ত মুলতুবি রাখতে হয়।
তবে পাল্টা তোপ দাগে কংগ্রেসও। দলের প্রধান মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, “আড়াই দশক ধরে একটা মিথ্যা প্রচার চলছে। অথচ গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে কণামাত্র প্রমাণ মেলেনি। যার অর্থ, বিজেপি দেশের বিচার ও তদন্ত ব্যবস্থা নিয়ে অনাস্থা জানাচ্ছে। এটা বিপজ্জনক।”
জনার্দনের বক্তব্য, বফর্স নিয়ে এত আগ্রহ থাকলে এনডিএ জমানায় কী করছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী বা আইনমন্ত্রী জেটলি? আদালত বফর্স তদন্তে ইতি টানতে বলার পর নতুন করে তদন্তের প্রশ্নই ওঠে না। বস্তুত, রাজীবের মৃত্যুর পরেও তাঁকে বা তাঁর পরিবারকে বফর্স কাণ্ডে কাঠগড়ায় তুলে বিজেপির যে আখেরে কোনও লাভ হবে না, সেটাই বুঝিয়ে দিতে চাইছে কংগ্রেস।
কিন্তু বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের যুক্তি, বফর্স তদন্তে যুক্ত প্রাক্তন সুইডিশ পুলিশকর্তার সাক্ষাৎকারে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এক, অর্থ দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক কারণে। দুই, ওত্তাভিও কুত্রোচ্চি অর্থ পেয়েছিলেন। তিনি তো ভারতের কোনও নেতা নন। ফলে সেই অর্থ তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি’র জন্যই বরাদ্দ ছিল। এই কারণেই নতুন করে তদন্ত চাইছেন তাঁরা। |