আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রদের উদ্বেগ ভাবাচ্ছে শিক্ষা-শিল্পমহলকে
চাকরির ‘উদ্বেগে’রাতভর ঘেরাও উপাচার্য
দাবি আদায়ের জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে ছাত্রেরা আবার ঘেরাওয়ের পথ বেছে নিলেন। চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি ঘেরাও থাকার পরে মুক্ত হলেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঘেরাও শুরু হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে উপাচার্য ঘেরাও মুক্ত হন বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোয়!
কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন যে সব পড়ুয়া, তাঁরা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার। তাঁদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমগুলি এআইসিটিই অনুমোদিত নয়। ফলে পাশ করেও চাকরির বাজারে কতটা সুবিধা করতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পড়ুয়াদের মনে। তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্লেসমেন্ট সেল’ নেই, তাই ‘ক্যাম্পাসিং’-ও হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো নিয়েও ক্ষুব্ধ ছাত্ররা। অভিযোগ, উপযুক্ত গবেষণাগার বা গ্রন্থাগার তো নেই-ই, শিক্ষক সংখ্যাও কম। ফলে সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদেরই।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ সামসুল আলম অবশ্য ছাত্রদের সব অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকাঠামো বা শিক্ষক মোটেই কম নয়। কিছু খামতি অবশ্য আছে। সেটা দূর করার চেষ্টা করছি।”
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। সাম্প্রতিক অতীতে ‘প্লেসমেন্ট সেল’ আর ‘ক্যাম্পাসিং’-এর দাবিতে রাজ্যের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘেরাও-বিক্ষোভ হয়েছে। ‘প্লেসমেন্ট সেলের’ দাবিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কিছু দিন আগেই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ‘ক্যাম্পাসিং’-এর দাবিতে বিক্ষোভ প্রায় রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২৪ ঘণ্টারও বেশি ছাত্রদের হাতে ঘেরাও থাকার পর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
সৈয়দ সামসুল আলমকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
ছাত্রদের এই সব বিক্ষোভ যে সব সময়ে নিয়ম মেনে চলছে, তা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই তাতে সৌজন্যের অভাব দেখা যাচ্ছে। কখনও কখনও তা অমানবিকও হয়ে উঠছে। যেমন হয়েছিল এ ক্ষেত্রে। স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রদের এমন আচরণের নিন্দায় সরব হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সব মহলই। কিন্তু একই সঙ্গে অন্য একটি প্রশ্নও উঠছে। ছাত্রদের সব দাবিই কি অসঙ্গত? বিশেষত বিক্ষোভের পিছনে মূল প্রশ্নটা যখন জীবিকার?
আইআইএম, কলকাতার অধ্যাপক অনুপ সিংহ-র যেমন বক্তব্য, এখানকার মানবসম্পদ-পরিকল্পনা ভাল নয়। পাশাপাশি শিক্ষার মানও উন্নত নয়। তিনি বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পরিকাঠামোয় ঘাটতি রয়েছে। সঙ্গে ভাল শিক্ষকের ঘাটতি তো রয়েছেই।”
আর কর্মসংস্থান?
মূল উদ্বেগটা এখানেই। রাজ্যের যা আর্থিক হাল, শিল্পের যা পরিস্থিতি, তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমাগত কমছে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। বেশ কয়েক দশকের মধ্যে রাজ্যে বড় শিল্প গড়ে ওঠেনি। মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগও খুব উল্লেখযোগ্য নয়। কেবল তাই নয়, সাম্প্রতিক কালে রাজ্যের শিল্প পরিবেশ এবং রাজ্য সরকারের জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বড় বিনিয়োগের অনুকূল নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।
আর সেখানেই বড় সমস্যা। গত দেড় দশকে এ রাজ্যেও অসংখ্য বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ও কারিগিরি শিক্ষার কলেজ গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের একটা অংশ এখনও সে ভাবে প্রতিষ্ঠিত নন। আর সেটাই ভাবাচ্ছে বর্তমানের পড়ুয়াদের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে যে হারে স্নাতক-স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণরা বেরোচ্ছেন, তার সঙ্গে শিল্প প্রসারের সামঞ্জস্য নেই। অর্থনীতির ওই অধ্যাপকের কথায়, “শিল্পের প্রসার যে যথেষ্ট নয়, জাতীয় নমুনা সমীক্ষার ফল দেখলেই তা বোঝা যায়।” কর্মসংস্থানের সুযোগ কমতে থাকাটা ছাত্র অসন্তোষের অন্যতম কারণ বলে আশিসবাবু মনে করেন।
বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের পূর্বাঞ্চলের অন্যতম কর্তা পি রায় বলেন, “শিল্প ও লগ্নি টানার চেষ্টা না হলে কর্মসংস্থান হবে না। রাজ্যের আয়ও বাড়বে না। কোনও একটা পর্যায়ে পৌঁছে আমাদের বাস্তবের দিকে তাকাতেই হবে।” উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি, অথচ ইনফোসিসের চাহিদা মেটাচ্ছি না! ইনফোসিস যদি এ রাজ্যে প্রকল্প না গড়ে, তবে আমরা প্রায় ২০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাব।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সুরঞ্জন দাসও মনে করেন, কর্মসংস্থানের সঙ্গে আর্থিক বিকাশের প্রশ্ন ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
এই ঘেরাও-বিক্ষোভ এর শেষ কোথায়, উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন সব পক্ষই।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.