|
|
|
|
কলকাতায় আসছেন হিলারি, বৈঠক মমতার সঙ্গে |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
কলকাতায় আসছেন হিলারি ক্লিন্টন। বৈঠক করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন থেকে মার্কিন বিদেশসচিবের কলকাতা সফরের কথা ঘোষণা করে জানানো হয়েছে, হিলারি প্রথমে চিনে যাচ্ছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশ হয়ে কলকাতায় যাবেন। তার পরে দিল্লি আসবেন। সেখানে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে। আগামী ৭ এবং ৮ মে তাঁর ভারত সফরের দিনক্ষণ নির্দিষ্ট হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম আমেরিকার শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিক তথা প্রশাসনিক কর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন মমতা। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সেই শীর্ষকর্তা, হিলারি ক্লিন্টনও সম্প্রতি মমতারই মতো মার্কিন ‘টাইম’ পত্রিকায় বিশ্বের প্রথম একশো ক্ষমতাবানের তালিকায় রয়েছেন। হিলারির সফরের আগে আগামী ২৯ এপ্রিল কলকাতায় যাচ্ছেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল। মহাকরণ সূত্রে এই কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, ৩০ এপ্রিল তিনি মমতার সঙ্গে দেখা করবেন।
৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতা যখন ক্ষমতায় আসেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য সরকারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের ফলে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও রাজ্যের উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে সার্বিক ভাবে শিল্পমহলের একাংশের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে। হিলারির সফর সেই সংশয় কাটিয়ে উন্নয়ন ও শিল্পায়নের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টি মূলত মমতার আপত্তিতেই এখন বিশ বাঁও জলে। বৈঠকে এই প্রসঙ্গও উঠবে বলে মনে করছে দিল্লি।
কিন্তু জমি অধিগ্রহণ নীতি থেকে শুরু করে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, হিলারির সফরে কি সব জট খুলে যাবে বা খোলার মতো বাতাবরণ তৈরি হবে?
পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য এমন কোনও বার্তা দিতে চাইছে না। মমতার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংযোগ স্থাপনের চেষ্টাও এই প্রথম নয়। এর আগেও তাঁকে বহু বার আমন্ত্রণ জানিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু মমতা নানা কারণ দেখিয়ে তা পিছিয়ে দিয়েছেন। লন্ডন সফরেও যাননি। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রীর যত উৎসাহ, বিদেশ সফরে ততটা নয়। অতীতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-নিরুপম সেনকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আহ্বান জানানো হয়েছিল। তাঁরাও যাননি। মমতাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অনেক বারই সে দেশে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি একেবারেই ‘যাব না’ বলিনি। আসলে নানা রকম কাজের জন্য যাওয়া সম্ভব হয়নি। রাজ্যে শিল্পে মার্কিন বিনিয়োগের মতো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এলে তখন নিশ্চয়ই যাব।”
হিলারির কলকাতা সফরের সম্ভাবনাও নতুন নয়। এর আগেও এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে তা শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এ বার কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই হিলারির কলকাতা সফরের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বস্তুত, হিলারির ভারত সফরটাই পূর্বনির্ধারিত ছিল না। শেষ মুহূর্তে স্থির হয়, চিন এবং বাংলাদেশ সফরের সুযোগ নিয়েই ভারত সফরটিও সেরে ফেলবেন তিনি। কূটনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, ১৩ জুন ওয়াশিংটনে যে ভারত-মার্কিন কৌশলগত বৈঠক বসছে, সেই বৈঠকের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতেই হিলারি আসছেন।
সম্প্রতি একাধিক কারণে ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্কে কিছুটা শ্লথতা এসেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই তালিকায় যেমন পরমাণু বিল নিয়ে জটিলতা রয়েছে, তেমনই আছে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে টানাপোড়েন। আমেরিকার বক্তব্য, যে ভাবে পরমাণু দায়বদ্ধতা বিলটি পাশ করানো হয়েছে, তাতে মার্কিন লগ্নিকারীরা উৎসাহ হারাচ্ছেন। এখন বিভিন্ন মঞ্চে দৌত্যের মাধ্যমে মার্কিন কর্তারা সম্পর্ক সহজ করতে চাইছেন।
এই সফরে পশ্চিমবঙ্গও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পশ্চিমবঙ্গে মার্কিন বিনিয়োগ টানতেও চেষ্টা কম হয়নি। সেই লক্ষ্যে অনাবাসী ভারতীয় শিল্পপতিরা একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বাঙালি শিল্পপতিরাও ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সম্মেলন হয়নি। বিনিয়োগ টানতে অমিত মিত্রেরও আমেরিকায় যাওয়ার কথা ছিল।
হিলারির এই সফরের প্রেক্ষাপটও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ভোট আসন্ন। আবার দু’বছর বাদে ভারতেও লোকসভা ভোট। অর্থাৎ, দুই দেশেই এখন প্রাক-নির্বাচনী পরিস্থিতি। দু’দেশেই আবার মন্দার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর্থিক মন্দা নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের বৈঠকে যোগ দিয়ে সদ্যই আমেরিকা থেকে ফিরেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এই পরিস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে যে কৌশলগত আলোচনা হচ্ছে, তার পিছনে রয়েছে হিলারির সক্রিয়তা। সদ্য টোকিওয় শেষ হয়েছে জাপান-আমেরিকা-ভারত আলোচনা। তার আগে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে নয়াদিল্লিতে হয়ে গিয়েছে সামরিক-রাজনৈতিক বৈঠক। এ বার তাই দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হিলারির বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। |
|
|
|
|
|