|
|
|
|
কালীঘাট-কাণ্ড... |
এফআইআরে ফের
তুঘলকি-রাজেরই নমুনা
নিজস্ব সংবাদদাতা |
|
|
থানায় দায়ের করা অভিযোগের ভবিতব্য যে পুরোপুরি দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিউটি অফিসারের হাতেই, কালীঘাটের ঘটনা তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
কালীঘাট-কাণ্ডের তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের কর্তারা জেনেছেন, কালীঘাট থানার এক ডিউটি অফিসার ‘নির্যাতিতা’ মহিলার অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে গাফিলতি করেছেন। পুলিশ-সূত্রের খবর: গত সোমবার রাতে কালীঘাট থানার ডিউটি অফিসার বহুক্ষণ অভিযোগকারিণীকে বসিয়ে রেখেও অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেননি। পরের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরেও থানায় ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন ওই অফিসার। সে দিন মহিলা তাঁর উপরে ‘শারীরিক অত্যাচারের’ মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে এসেছিলেন। এবং সে দিন সংশ্লিষ্ট ডিউটি অফিসার মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি (জেনারেল ডায়েরি (জিডি) লিখেই তাঁর ‘দায়িত্ব’ পালন করেন।
বুধবার বিষয়টিতে লালবাজার হস্তক্ষেপ করে। কর্তাদের তৎপরতায় সে দিন রাতে কালীঘাট থানা মহিলার এফআইআর নেয়। সাসপেন্ড করা হয় ওই ডিউটি অফিসারকে। কালীঘাট থানার ভার এখন যাঁর উপরে, সেই অতিরিক্ত ওসি-ও সাসপেন্ড হয়েছেন।
লালবাজার-সূত্রের খবর: প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দুপুরে কালীঘাট থানায় ডিউটি অফিসারের চেয়ারে ছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর রবীন্দ্রনাথ গুহ। লালবাজারের এক পদস্থ কর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, “মহিলা যে ধরনের গুরুতর অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছিলেন, তার ভিত্তিতে সোমবার রাতেই রবীন্দ্রনাথবাবু জামিন-অযোগ্য ধারায় এফআইআর দায়ের করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারতেন। তিনি তা করেননি। পর দিন মহিলার মেডিক্যাল-রিপোর্ট দেখার পরেও
তিনি এফআইআর করেননি। তাই ওঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” কিন্তু অতিরিক্ত ওসি কী করেছিলেন যে, তাঁকেও সাসপেন্ড হতে হল?
থানার ভারপ্রাপ্ত ওই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ। লালবাজারের সূত্রটির কথায়, “সোমবার রাতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তা, অতিরিক্ত ওসি (ওসি এখন ছুটিতে) কল্যাণ দত্ত-ও নিজের দায়িত্ব পালন করেননি। উল্টে তিনি ডিউটি অফিসারকে ভুল পথে চালিত করেছেন। তদন্তে প্রকাশ, মহিলার অভিযোগকে গুরুত্ব না-দিতে তিনিই ওই ডিউটি অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই তাঁকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে।”
অতিরিক্ত ওসি এমন নির্দেশ দিয়ে থাকলে ডিউটি অফিসারের কী দোষ? লালবাজারের সূত্রটির বক্তব্য: অভিযোগ লেখার জন্য ডিউটি অফিসারের ঊর্ধ্বতন অফিসারের অনুমতির দরকার হয় না। পদস্থ কেউ অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নিষেধ করলেও ডিউটি অফিসার তা মানতে বাধ্য নন। “বরং ওঁর উচিত ছিল, অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে নিজের বিবেচনা অনুযায়ী কাজ করা।” মন্তব্য করেন তিনি। যদিও লালবাজারের আর এক অফিসার জানাচ্ছেন, “প্রশিক্ষণেই বলা হয়, তদন্তকারী অফিসারকে কোনও ভাবে প্রভাবিত হওয়া চলবে না। কিন্তু বাস্তবে সব সময়ে তা মানা যায় না। কোনও ডিসি বা ওসি-কে অভিযুক্তের সঙ্গে হেসে কথা বলতে দেখলে তদন্তকারী অফিসারের দমে যাওয়ারই কথা।”
এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে বলে লালবাজারের অনুমান। মহিলার অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি যখন বাবাকে নিয়ে ফের থানায় যান, তখন অতিরিক্ত ওসি’র সঙ্গে তাঁর স্বামী বসে ছিলেন। মহিলার বক্তব্য, বাবাকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার জন্য অতিরিক্ত ওসি তাঁকে নিজের অফিসঘরে ডাকেন, এবং ‘অশালীন’ কথাবার্তা বলেন। মহিলার স্বামী বাদল দাস ওরফে মনোজিৎ রায়কে বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। এ দিন আলিপুর আদালতের বিচারক তাঁকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখতে বলেছেন। মনোজিতের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, খুনের চেষ্টা ও ছিনতাইয়ের মামলা রুজু হয়েছে। অন্য অভিযুক্তেরা হলেন মহিলার ভাসুর, ভাসুরঝি, জা ও শাশুড়ি। তাঁরা ফেরার বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তবে লালবাজারের হস্তক্ষেপে দুই অফিসার সাসপেন্ড হওয়ায় অভিযোগকারিণী কিছুটা ভরসা পাচ্ছেন। এ দিন তিনি বলেন, “খাস কলকাতার এক থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে যা অভিজ্ঞতা হল, তাতে গ্রামে কী হচ্ছে, ভেবে ভয় লাগে। আমি চাই, কোথাও কোনও মহিলাকে থানায় গিয়ে যেন আমার মতো হেনস্থা হতে না-হয়।”
|
গাফিলতির ছক্কা |
কবে |
কোন থানা |
কী হয়েছিল |
৮
ফেব্রুয়ারি |
পার্ক স্ট্রিট |
• ধর্ষণের অভিযোগকারিণীকে
কটূক্তি, তদন্তে গড়িমসি |
৮
মার্চ |
নিমতা |
• শ্লীলতাহানি, খুনের অভিযোগ
ঠেলা হল বিমানবন্দর থানায় |
৯
মার্চ |
বিমানবন্দর |
• প্রথমে অস্বীকার, পর দিন
ক্লাবের চাপে অভিযোগ গ্রহণ |
১৪
এপ্রিল |
সার্ভে পার্ক |
• শ্লীলতাহানির অভিযোগ না নিয়ে
পাঠানো হল গরফা থানায় |
১৪
এপ্রিল |
গরফা |
• অভিযুক্তকে হাতে পেয়েও
১০০ টাকা জরিমানা নিয়ে মুক্তি |
২৩
এপ্রিল |
কালীঘাট |
• শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারিতার অভিযোগ না নেওয়া,
পর দিন জিডি করে দায়
এড়ানো, দুর্ব্যবহার, কটূক্তি |
|
|
|
|
|
|