রেল ফটকের যানজট কাটাতে উড়ালপুল নির্মাণের শিলান্যাসকে ঘিরে পুরনির্বাচনের আগে নলহাটিতে কংগ্রেস ও তৃণমূলের কাজিয়া বেধেছে। তাঁরাই রেলমন্ত্রকের কাছ থেকে উড়ালপুল তৈরির অনুমোদন নিয়ে এসেছে- এই দাবি করে দুই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী শহরের রীতিমতো মিছিল করেছেন। এ নিয়ে নলহাটির রাজনৈতিক মহল সরগরম হলেও যানজটে নাজেহাল পুরবাসীর একাংশ অবশ্য বিরক্ত। তাঁদের ক্ষোভ, “বরাবর পুরনির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিশ্রুতি দিলেও এই শহরের যানজট থেকে আমারা মুক্তি পাচ্ছি না।”
নলহাটি শহরের যানজটের প্রধান কারণ, তিনটি রেলগেট। রামপুরহাট-আজিমগঞ্জ ও সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের উপরে রয়েছে প্রধান রেল ফটক ও করিমপুর বাইপাস এলাকার রেল ফটকটি। এ ছাড়া রামপুরহাট-আজিমগঞ্জ লাইনে নলহাটি স্টেশন এলাকায়, রাজগ্রাম সড়কে আরও একটি রেল ফটক রয়েছে। এই তিন রেলফটকে দফায় দফায় আটকে পুরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘ দিন ধরে বাসিন্দাদের দাবি, ওই রেল ফটকগুলিতে হয় উড়ালপুল তৈরি করা হোক, নয়তো ‘সাবওয়ে’ তৈরি করে দিক রেল। বিশেষত শহরের পূর্ব ও পশ্চিম এলাকার মধ্যে বিভেদ তৈরি করা প্রধান রেল ফটকে উড়ালপুল নির্মাণের দাবি নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সরব। |
কংগ্রেস সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের আবেদনের ভিত্তিতে রেল দফতর নলহাটিতে একটি উড়ালপুল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। তৎকালীন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী সেপ্টেম্বরের শেষে অভিজিৎবাবুকে চিঠি দিয়ে জানান, নলহাটি শহরে একটি উড়ালপুল তৈরি করার জন্য রেলমন্ত্রক অনুমোদন করেছে। সেই চিঠিকে ঘিরেই বিধায়কের দল কংগ্রেস ও পুরপ্রধানের দল তৃণমূলের মধ্যে জোর কাজিয়া শুরু হয়েছে। অভিজিৎবাবুর দাবি, “রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে আমি নলহাটিতে একটি উড়ালপুল তৈরি করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তিনি তা মঞ্জুর করে সেপ্টেম্বর মাসে আমাকে চিঠি দেন। দলের কর্মীদের আমি তখন তা জানিয়েছিলাম।” অন্য দিকে, বছর তিনেক আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝার পাল্টা দাবি, “ওই উড়ালপুল অনুমোদনের পিছনে তৃণমূলেরই অবদান রয়েছে। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী মুকুল রায় আমাকে উড়ালপুলটি অনুমোদন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। কবে শিলান্যাস করা হবে তিনি জানতে চান। সেই অনুযায়ী আগামী রবিবার ওই উড়ালপুল শিলান্যাস করার দিন ধার্য করা হয়েছে।” অভিজিৎবাবুর দাবি নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “বিধায়ককে রেলমন্ত্রী ছ’মাস আগে উড়ালপুল অনুমোদনের চিঠি দিয়ে থাকলে এতদিন তিনি তা সবাইকে জানাননি কেন? মুকুলবাবু আমাদের জানানোর পরে এখন তিনি নির্বাচনের মুখে ফায়দা লোটার জন্য অবান্তর দাবি করছেন।” অন্য দিকে, অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, “আমি এলাকার প্রকৃত উন্নয়ন চাই। উন্নয়ন নিয়ে অহেতুক রাজনীতি লা করাই ভাল। কর্মীদের হাতে আমাকে লেখা রেলমন্ত্রীর চিঠি তুলে দিয়েছি। তা নিয়ে ওরা মিছিল করে বাসিন্দাদের কাছে প্রকৃত সত্য তুলে ধরছেন।” দুই নেতার এই দাবি-পাল্টা দাবি নিয়ে নলহাটিতে সম্প্রতি দুই দল মিছিলও করেছে।
এক বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎবাবুর হয়ে তৃণমূলের বিপ্লববাবু প্রচারে নেমেছিলেন। এখন পুর নির্বাচনের মুখে ওই দুই নেতাকে পরস্পক বিরোধী মন্তব্য করতে দেখে কেউ কেউ অবাক হচ্ছেন। পূর্ব রেলের মুখ্য জন সংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “আগামী রবিবার সন্ধ্যায় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, সাংসদ শতাব্দী রায় প্রমুখ উড়ালপুলের শিলান্যাস করবেন।” রামপুরহাটের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “৩০ এপ্রিল নলহাটি পুর নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। তার আগে শিলান্যাস ও প্রকল্প ঘোষণা করতে বাধা নেই।” রাজনৈতিক এই কাজিয়া থেকে কিছুটা তফাতে রয়েছেন পুরবাসী। তাঁদের ক্ষোভ, প্রধান ফটকের পশ্চিম দিকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দফতর, থানা, হাসপাতাল ও নলাটেশ্বরী মন্দির ইত্যাদি রয়েছে। আবার পূর্বপ্রান্তে রয়েছে বাজার এলাকা, কলেজ, বাসস্ট্যাণ্ড। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় আধ ঘণ্টা অন্তর ট্রেন যাতায়াতের জন্য রেল ফটক পড়ে যানজট তৈরি হয়। এমনকি রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সও অনেক সময় আটকে পড়ে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ছেলে অভিজিতের প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও এই রেল ফটকে আটকে পড়েছিলেন। আবার স্টেশনের কাছে রাজগ্রাম যাওয়ার রেল ফটকেও বেশ যানজট হয়। ওই দু’টি রেলফটক দিয়ে বেশি গাড়ি যাতায়াত করে। স্টেশনমুখো অনেক যাত্রীর ক্ষোভ রেলফটকে যানজটে আটকে পড়ে অনেক সময় স্টেশনে ঢুকতে দেরি হওয়ায় ট্রেন পাওয়া যায় না। তার উপর যানজটের যন্ত্রণাও রয়েছে। তবে করিমপুরের রেলফটক দিয়ে তুলনামূলক কম গাড়ি পারাপার করে। তাই বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, প্রধান ফটকের কাছে উড়ালপুল হলে যানজট সমস্যা অনেকটাই কেটে যেত। পুরপ্রধান বিপ্লববাবু বলেন, “ওই এলাকা ঘিঞ্জি হওয়ায় উড়ালপুল তৈরি করার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তবে উড়ালপুলের পাশাপাশি প্লাটফর্মের একটি ওভারব্রিজ স্টেশনের বাইরে পর্যন্ত সম্প্রসারণের আর্জি রেলমন্ত্রীকে জানানো হবে।” |