ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় থেকে ছেনি ও হাতুড়ির ঘায়ে ‘তৃণমূল’ শব্দটাই বাদ দেওয়া হল। তৃণমূলের পতাকা নামিয়ে তোলা হল কংগ্রেসের দলীয় পতাকা।
বাঁকুড়ার কোতুলপুরের এই ঘটনা, তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতিকে পদ থেকে সরানোর জের। সদ্য অপসারিত ব্লক সভাপতি নিমাই ঘোষ অনুগামীদের নিয়ে রবিবারই যোগ দেন কংগ্রেসে।
অভিযোগ, নিমাইবাবুর অনুগামীরাই এ দিন তৃণমূলের কার্যালয় দখল করে, পরিবর্তন করেন ‘কোতুলপুর ব্লক কংগ্রেস কার্যালয়’-এ। তৃণমূলের যাবতীয় ফ্লেক্স ও পোস্টার খুলে ছিঁড়ে ফেলা হয়। ছেঁড়া হয় তৃণমূল নেত্রী তথা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংবলিত ফ্লেক্সও। নিমাইবাবুর দাবি, “আমার জমিতেই কার্যালয় তৈরি করেছিলাম। দলবদলের সঙ্গে কার্যালয়ের নামও তাই বদলে দেওয়া হল!” |
বস্তুত, এ দিনের এই ঘটনায় বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের ‘অন্তর্দ্বন্দ্বের’ চেহারা আরও প্রকাশ্যে এসেছে। এ দিন কোতুলপুরের কংগ্রেস বিধায়ক সৌমিত্র খাঁ-র কাছে গিয়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন নিমাইবাবু। তাঁকে অনুসরণ করে কংগ্রেসে যোগ দেন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব পালও। সৌমিত্রবাবুর দাবি, তৃণমূল ছেড়ে হাজার পাঁচেক কর্মী এ দিন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।
যদিও এই ঘটনার জেরে দলীয় সংগঠনে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি করেছেন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই মানুষ তৃণমূল করেন। সেখানে নিমাই ঘোষের মতো কিছু লোকের দলত্যাগ দলের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।” কিন্তু দলের দীর্ঘ দিনের নেতা নিমাইবাবুর ‘বিদ্রোহ’ কি দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে প্রভাব ফেলবে? পঞ্চায়েত নির্বাচনেই বা এই ‘বিদ্রোহের’ প্রভাব কাটাবেন কী করে? অরূপবাবুর দাবি, “দলনেত্রীর ডাকেই রাজ্যবাসী পরিবর্তন এনেছেন। তাঁর ডাকে পঞ্চায়েত ভোটেও আমরা সাফল্য পাব।” |
আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী নেত্রী সুচিত্রা মাহাতোর স্বামী প্রবীর গরাইকে দলের ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার পরেই কোতুলপুরে তৃণমূলের ‘ফাটল’ সামনে আসে। শুক্রবার অনুগামীদের নিয়ে এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল করেন নিমাইবাবু। প্রবীরবাবুকে ‘মাওবাদী নেতা’ বলে কটাক্ষ করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘বন্দুক দেখিয়ে অবৈধ বালি খাদ’ চালানোর অভিযোগও তুলেছিল বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। পর দিনই দল থেকে দীর্ঘদিন ব্লক সভাপতি পদে থাকা নিমাইবাবুকে বহিষ্কার করা হয়। দলে নিমাইবাবুর বরাবরের ‘বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত সালাম খাঁ অবশ্য প্রবীরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ দিন বিকেলে তাঁরা কোতুলপুরে হাজার দেড়েক কর্মী-সমর্থক নিয়ে মিছিল করেন। অশান্তি এড়াতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
তার আগেই অবশ্য যা ‘তাণ্ডব’ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এ দিন সকালে স্থানীয় নেতাজি মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের এলাকা থেকে তৃণমূলের ‘পোস্টার-ফ্লেক্স’ খুলে ফেলা হয়েছে। দেওয়াল লিখনে তৃণমূলের নাম ও প্রতীকের উপরে কালি লেপা। নিমাইবাবুকে পাশে নিয়ে কোতুলপুরের কংগ্রেস বিধায়ক দলীয় পতাকা তুলে ঘোষণা করেন, “নিমাইবাবু ও তাঁর অনুগামীদের আমরা কংগ্রেসে স্বাগত জানাচ্ছি। আপনারা জাতীয় কংগ্রেসের কাজ করুন। সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন।” জমায়েত থেকে স্লোগান ওঠে ‘জাতীয় কংগ্রেস জিন্দাবাদ’, ‘মাওবাদী নেতা প্রবীর গরাইকে মানছি না, মানব না।’ |
এর পরেই ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে কার্যালয়ে দেওয়ালে ‘তৃণমূল’ লেখাটি ভাঙা হয়। নিমাইবাবুর ক্ষোভ, “তৃণমূলের জন্ম থেকে কোতুলপুরে সিপিএমের সন্ত্রাস রুখে আমি দলের সংগঠন বাড়িয়েছি। মারও খেয়েছি। কিন্তু এখন দলের সুদিনে কোনও মাওবাদী নেতাকে ব্লক সভাপতি হিসেবে মেনে নেওয়া অসম্ভব। তাই নেত্রীর কাছে আগেই অব্যাহতি চেয়েছিলাম।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, “তৃণমূলের কর্মীদের কাছে এটাই তো প্রত্যাশিত! এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।” জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সহ-সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “তৃণমূল এ ভাবেই ভাঙবে। আর কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধি হবে।”
তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অবশ্য বলছেন, “নিমাই ঘোষকে কয়েক দিন পরেই লোকে ভুলে যাবে।” আর নতুন ব্লক সভাপতি প্রবীর গরাই বলেন, “দলের বিক্ষুদ্ধদের ফিরিয়ে আনব।” যা শুনে নিমাইবাবুর বক্তব্য, “তৃণমূল কর্মীরা কি ওঁকে চেনেন, যে ওঁর কথায় সব ফিরে আসবেন? ওঁকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওঁর ডাকে
আসবে কে?”
|