একটা দল দাপটের সঙ্গে জিততে জিততে যদি হঠাৎ করে দু’-একটা ম্যাচ হেরে বসে তা হলে একটা জল্পনা হয়ই। বার্সেলোনার ক্ষেত্রেও অনেকে সেই প্রশ্ন করছে। প্রথমে চেলসি। তার পর শনিবার রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হার। এ বছরের লা লিগা প্রায় রিয়াল মাদ্রিদের নাগালে। তা হলে কি এ বার মেসিদের একাধিপত্য শেষ হতে চলেছে?
এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার আগে দেখতে হবে বার্সেলোনা পরপর দু’টো ম্যাচ হারল কেন। দু’টো ম্যাচেরই বেশ কিছু মিল আছে। আগের বুধবার দেখেছিলাম চেলসির বিরুদ্ধে ৭০ শতাংশের মতো বলের দখল ছিল বার্সেলোনার। শনিবার রাতের ছবিও এক। হোসে মোরিনহোর রিয়ালের বিরুদ্ধেও মেসিরা পায়ে বল রাখছিল অনেক বেশি সময়ের জন্য। এই একই স্ট্র্যাটেজি রেখে পেপ গুয়ার্দিওলা এত দিন সফল ছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে এখন মরসুম একেবারে শেষ প্রান্তে। প্রথম দিকে বলের দখল বেশি রেখে যে গতিতে বক্সে ঢুকতে পারত মেসি-জাভিরা, এখন আর সেটা হচ্ছে না। যখনই বার্সেলোনার সাত জন ফুটবলার আক্রমণে এসেছে, রিয়ালের রক্ষণে থাকছিল ন’জন। এই পায়ের জঙ্গল ভাঙতে আরও মন্থর হয়ে যাচ্ছিল বার্সেলোনা। অর্থাৎ রক্ষণ ভেঙে বক্সে ঢোকার ক্ষমতা কমে যাওয়াটা বার্সেলোনার ব্যর্থতার প্রথম কারণ। |
শনিবারও সে রকম ঘটল। ১৭ মিনিটে খেদিরার গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর থেকে বলের দখল নিজেদের কাছেই রাখল বার্সেলোনা। যার মধ্যে মেসিরা সুযোগ নষ্ট করেছে। আবার রোনাল্ডোরাও সুযোগ তৈরি করেছে। ৭০ মিনিটে আলেক্সি সাঞ্চেজের গোলে সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। তবে বেশিক্ষণের জন্য নয়। আড়াই মিনিটের মধ্যে জয়ের গোল করে নায়ক হয়ে গেল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। রিয়ালের আক্রমণভাগের ফুটবলারদের ভাল খেলার একটা কারণ, পিকের না থাকা। যেটা গত মঙ্গলবারের চেলসি ম্যাচেও হয়েছিল। স্টপারে পুওলের সঙ্গী ছিল মাসচেরানো। এই জুটি পুওল-পিকে জুটির মতো অতটা দক্ষ নয়। |
বার্সেলোনার ব্যর্থতার বাকি দুই কারণ মোরিনহোর দুই স্ট্র্যাটেজি। যার একটা হল, বিপক্ষের অর্ধে ট্যাকল না করা। পুরো ম্যাচে রিয়াল বার্সেলোনার অর্ধে সে রকম ট্যাকল করেনি। জাভিদের নিজেদের অর্ধে ঢুকতে দিয়েছে। তার পরই বলের দখল কাড়তে তেড়ে গিয়েছে খেদিরা-ওজিলরা। চেষ্টা করেছে মিস পাস করানোর। ভুল করতে বাধ্য করেছে। এই একই স্ট্র্যাটেজি মোরিনহো নিয়েছিল দু’বছর আগে। ইন্টার মিলানকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর সময়। মোরিনহোর আর একটা স্ট্র্যাটেজি ছিল রোনাল্ডো-দি’মারিয়ার মতো দক্ষ ফুটবলারের উপর নির্ভর করে। যখন বার্সেলোনার সাত জন আক্রমণে উঠে এসেছে তখনই রোনাল্ডো বা দি’মারিয়া প্রচণ্ড গতিতে প্রতি আক্রমণে গেছে। রিয়াল গোল পেল এই স্ট্র্যাটেজিতেই।
পরপর দু’ম্যাচ হারলেও এখনই বার্সেলোনার পতন শুরু হল মনে করছি না। পিকে ফিরলে রক্ষণ আরও মজবুত হবে। বড় টিম এক সময় নিজেদের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে। মেসিরাও ফেলবে। আগামী মঙ্গলবার চেলসির বিরুদ্ধে তাই বার্সেলোনাই ফেভারিট।
|