|
|
|
|
৩৭ মৃতের নামে মামলায় অস্বস্তি পুলিশে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ |
মৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে পোস্ত চাষের মামলা দায়ের করে অস্বস্তিতে পড়েছে মালদহের কালিয়াচক থানা। গত মার্চ মাসে ওই থানার পক্ষ থেকে পুলিশ কর্মীরা ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় পোস্ত চাষের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন। ১৪টি মামলা রুজু করে প্রায় দুশো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই দুশো ব্যক্তির মধ্যে ৩৭ জন মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে। এমনকী, যিনি জমির মালিক নন, তাঁরও নাম জড়িয়েছে ওই মামলায়। এই ব্যাপারে কালিয়াচক থানা অভিযোগের আঙুল তুলেছে ভূমিরাজস্ব দফতরের বিরুদ্ধে। তাঁদের বক্তব্য, পোস্ত গাছ আটক করার সময়ে মালিককে মেলেনি। তখন তাঁরা ব্লক ভূমি রাজস্ব দফতরের কাছ থেকে জমির মালিকের নাম সংগ্রহ করে মামলা করেন। অন্যদিকে, জেলা ভূমিরাজস্ব আধিকারিক খগেন্দ্রনাথ দিউ সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, “আমাদের কাছে রেকর্ডে যে নাম থাকে সেটিই উল্লেখ করা হয়। অনেক সময়ে জমির মালিকানা বদল হয়ে গেলেও মিউটেশন হয় না। ফলে পুরানো নাম রেকর্ডে থেকে যায়। মালিকের মৃত্যু হলেও মিউটেশন না-হলে তা জানা যায় না।” সে সব খতিয়ে না-দেখেই কেন মামলা দায়ের করা হল সেই প্রশ্ন তুলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে সারা ভারত কৃষক সভা। পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “এই ব্যাপারে তদন্ত চলছে। কোনও প্রতিক্রিয়া জানালে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে।” এই ‘ভুলে’র জন্য জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা অবশ্য পুলিশ কিংবা ভূমিরাজস্ব দফতর, কাউকেই দায়ী করতে চাননি। তিনি বলেন, “পোস্ত চাষ করার অভিযোগে মৃত ব্যক্তির নামে মামলার ঘটনায় পুলিশ কিংবা ভূমি রাজস্ব দফতর, কারও দোষ নেই। জমির আসল মালিক কারা তা বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপরাধ লোকেদের বিরুদ্ধে যাতে মামলা না হয় সেই বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহের কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগরে ব্যাপক হারে পোস্ত চাষ হচ্ছে। ২০১১ সালে জেলার ১৭৫৭ বিঘায় বেআইনি পোস্ত চাষ নষ্ট করার পরেও এ বছর ফের জেলার কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরের পোস্ত চাষ হয়েছিল। এ বছর এখনও পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আবগারি দফতর ও পুলিশ জেলায় ২০ হাজার ১৩৩ বিঘা জমির ৪ কোটি ২১ লক্ষ ৮০ হাজার পোস্ত গাছ নষ্ট করে। পোস্ত চাষিদের বিরুদ্ধে পুলিশ কিংবা আবগারি দফতর, যে কেউই মামলা দায়ের করতে পারে। এ বার মামলা করেছিল কালিয়াচক থানার পুলিশ। তার মধ্যে ৩৭ জন মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে। শুধু তাই নয়, জীবিত এমন ১৪ জন ব্যক্তির নামে মামলা হয়েছে যাঁদের কেউ ২ বছর আগে, কেউ ৫ বছর আগে জমি বিক্রি করেছেন। তা নিয়েও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। কালিয়াচকের আকন্দবেরিয়ার বালুটোলা গ্রামের বাসিন্দা তুষার মন্ডল বলেন, “আমার জেঠা সুনীল মন্ডল ৮ মাস আগে মারা যান। জেঠার নামে ১৭ মার্চ কালিয়াচক থানা মামলা করে।” আকন্দবেরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ফকিরচাঁদ মন্ডল বলেন, “আমার ৩ বিঘা জমি ৫ বছর আগে বিক্রি করে দিয়েছি। বিক্রি করা জমিতে কারা পোস্ত চাষ করছিল জানি না। অথচ আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।” সিপিএমের সারা ভারত কৃষক সভার জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষের অভিযোগ, “যারা পোস্ত চাষ করছে তাদের সঙ্গে পুলিশের একাংশ সরাসরি যুক্ত আছে। না-হলে যখন পোস্ত চাষ শুরু হয় তখন কেন পুলিশ অভিযান চালিয়ে তা নষ্ট করছে না?” |
|
|
|
|
|