|
|
|
|
দলে ও দফতরে ‘সমস্যা’ |
সরানো হল রবীন্দ্রনাথকে, এনবিএসটিসি শীর্ষে গৌতম |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
ঘরে-বাইরে ‘নানা সমস্যা’ দেখা দেওয়ায় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার (এনবিএসটিসি) চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে পদ থেকে সরিয়ে দিল রাজ্য সরকার। তাঁর জায়গায় চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব দেওয়া হল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্য পরিবহণ দফতর থেকে কোচবিহারে এনবিএসটিসি-র সদর দফতরে ওই নির্দেশ গিয়ে পৌঁছয়। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ন’মাসের মাথায় দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথবাবুকে রবীন্দ্রনাথবাবুকে অপসারণ করা হল কেন, তা নিয়ে তৃণমূল মধ্যেই নানা জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
দলের এক পক্ষের ধারণা, কোচবিহারে গোষ্ঠী কোন্দল, এমনকী প্রকাশ্যে সংঘর্ষও বেড়ে চলেছে। তা সামলাতে না-পারলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপর্যয় ঘটতে পারে। অথচ এনবিএসটিসি-র মতো রুগ্ণ সংস্থাকে দাঁড় করানোর চেষ্টায় জেলা সভাপতিকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছিল। অন্য দিকে, কড়া মনোভাব দেখানোয় সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গেও মতবিরোধ বাড়ছিল তাঁর।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, চেয়ারম্যানের সঙ্গে এমডি-র ‘বিরোধ’ নিয়ে সম্প্রতি মন্ত্রী মদন মিত্রের কাছে একটি রিপোর্ট গিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কোনও মন্ত্রীকে দেওয়া হলে অফিসারেরা সহজে তাঁর সঙ্গে প্রকাশ্যে মতবিরোধে জড়ানোর সাহস পাবেন না। মদনবাবু অবশ্য বলেন, “রবি বিধায়ক। জেলায় দলের দায়িত্বেও আছে। সব দিক মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রবিকে শাস্তি দিতে বা অন্য কোনও কারণে এটা হয়নি। পুরোটাই সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়।” ঘটনাচক্রে, মন্ত্রী গৌতমবাবুও দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ এবং কোচবিহার ডেভলপমেন্ট ফান্ডের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। এত সব সামলে এনবিএসটিসি চালাতে পারবেন তো? পরিবহণ মন্ত্রীর যুক্তি, “গৌতম মন্ত্রী। এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান হিসাবে গৌতম দায়িত্বে থাকলে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। সে জন্যই ওঁকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” |
গৌতম দেব |
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ |
|
গত জুলাইয়ে এনবিএসটিসি-র দায়িত্ব নিয়েই সংস্থার হাল ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। নিউ কোচবিহার কেন্দ্রীয় কারখানাকে চাঙ্গা করার চেষ্টা তো ছিলই।কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে বিভিন্ন ডিপোয় নিয়মিত পরিদর্শন এবং ফাঁকিবাজ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি। এ ছাড়া এনজেপি থেকে পাহাড়ের বাস পরিষেবার উন্নতি, কোচবিহার-শিলিগুড়ি আধঘন্টা অন্তর বাস, ই-টেন্ডার, টিকিট বিলি মেশিন, দোতলা বাস এবং কোচবিহার শহরে সিটিবাস চালুর ব্যবস্থা করা হয়। বন্ধ রুটে বাস চালু করা হচ্ছিল। বাড়ানো হয় বাসের সংখ্যাও। এতে নিগমের মাসিক গড় আয়ও বাড়ছিল। তবে ডিপোর সংখ্যা কমানো ও ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীদের ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়।
দিন দশেক আগে এনবিএসটিসি-র এমডি-র জারি করা একটি বদলির নির্দেশ নিয়ে চেয়ারম্যান আপত্তি তুললে মহাকরণে তোলপাড় শুরু হয়। গত ৭ এপ্রিল কলকাতায় তৃণমূল ভবনেও ওই ব্যাপারে আলোচনা হয়।
এর পরেই বাড়তি দায়িত্বগ্রহণের জন্য গৌতমবাবুকে প্রস্তুতি নিতে বলে দল। বুধবার কলকাতায় পরিবহণ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথবাবু, এমডি সি মুরুগনকে নিয়ে বৈঠক হয়। তার পরেই গৌতমবাবুকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সরকারি ভাবে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
ইতিমধ্যে কোচবিহারে দলের পরিস্থিতিও এই রদবদলের রাস্তা সুগম করেছে। কেননা গত ন’মাসে জেলায় গোষ্ঠী কোন্দল ব্যাপক বেড়েছে। দিনহাটা, বক্সিরহাট, তুফানগঞ্জে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনায় প্রদেশ নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, দল ও প্রশাসনের তরফে বিশদ তথ্য সংগ্রহের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রবীন্দ্রনাথবাবুকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের কোচবিহার জেলা কমিটির একাধিক নেতার মতে, তিনি দলের কাজে পূর্ণ সময় দিয়ে গোষ্ঠী কোন্দল দূর করতে পারলে আগামী দিনে দলনেত্রী তাঁকে আরও বড় দায়িত্ব দিতে পারেন। অন্যথায় তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকেও সরানো হতে পারে।
এ দিন দুপুরে যখন কোচবিহারের পরিবহণ ভবনে সরকারি নির্দেশ পৌঁছয়, রবীন্দ্রনাথবাবু দলীয় কর্মসূচিতেই ছিলেন। তিনি শুধু বলেন, “আমি দলনেত্রীর অনুগত সৈনিক। উনি যা নির্দেশ দেবেন তা-ই পালন করব। এর বেশি কিছু বলব না।” এমডি-র সঙ্গে বিরোধ কিংবা দলের
গোষ্ঠী কোন্দল প্রসঙ্গে অবশ্য তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, এর আগে বাম জমানায় মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান হিসাবে একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন এক মাত্র শিবেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী।
চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যে দায়িত্বই দেবেন, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। এনবিএসটিসি কর্মীদের কাছে আর্জি, সৎ ভাবে কাজ করুন। সকলে মিলে সংস্থাকে ঘুরে দাঁড় করাব।” |
|
|
|
|
|