|
|
|
|
খন্দে ভরা ৩১ নম্বর, বাস কমছে |
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • ময়নাগুড়ি |
বহু পথ অবরোধ-বিক্ষোভ হয়েছে। আন্দোলনও চলছে। তা সত্ত্বেও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি যাতায়াতের অন্যতম রাস্তা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের হাল কোনমতেই ফিরছে না বলে বিপাকে পড়েছেন ওই রুটের গাড়ির মালিকরা। মালিকপক্ষ জানিয়েছেন, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে চালকদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এবং গাড়ির খালাসিদের মধ্যে কাজ ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। মালিকদের আশঙ্কা, দ্রুত ওই সড়ক মেরামতের কাজ শুরু না-হলে কর্মীর অভাবে বাস চলানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উত্তরবঙ্গের টেকনিক্যাল ম্যানেজার পঙ্কজ মিশ্র বেহাল রাস্তার সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “জাতীয় সড়কের খারাপ অংশ মেরামতের কাজ কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।” ডুয়ার্স মিনি বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গৌরব চক্রবর্তী বলেন, “রাস্তার যা অবস্থা তাতে গাড়ির যাতে ক্ষতি না-হয়, সেই ব্যাপারে চালকদের প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হয়। না-হলে মালিকরা ছেড়ে কথা বলেন না। বেহাল রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে চালক অসুস্থ হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। খালাসিরা ভয়ে অন্য কাজে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে অনেক অনুরোধ করেও চালক মিলছে না। এ ভাবে কতদিন বাস রাস্তায় নামানো সম্ভব হবে জানি না।” নর্থ বেঙ্গল বাস অ্যান্ড ট্রন্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজ আহমেদ জানান, বেহাল রাস্তার জন্য ইতিমধ্যে অন্তত ১৫ জন বাসকর্মী অসুস্থ হয়েছেন। ভয়ে ময়নাগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটের বাসে কাজ করতে যাচ্ছে না এমন কর্মীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সিরাজবাবু বলেন, “এমন কর্মীও আছেন যিনি বাস ছেড়ে রিকশা টানছেন। চাউমিনের দোকান খুলেছেন।” বাসকর্মীদের সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে বাস চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন চালক গৌরাঙ্গ অধিকারী। এ দিন সন্ধ্যা নাগাদ জাতীয় সড়ক দিয়ে শিলিগুড়িতে বাস পৌছে অস্বস্তি বোধ করেন ওই চালক। কিছু সময় জিরিয়ে সুস্থ মনে হলে ময়নাগুড়িতে ফেরার জন্য ফের উঠে বসেন আসনে। খানাখন্দের হ্যাপা এড়াতে যাত্রী বোঝাই বাস নিয়ে তিস্তা-মহানন্দা ক্যানেলের পাশ দিয়ে গণ্ডার মোড়ে পৌছনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুটা এগিয়ে আর সম্ভব হয়নি। বাস থামিয়ে নেমে রাস্তার পাশে বসে পড়েন গৌরাঙ্গ অধিকারী। সহকর্মীদের জানান মাথা ঘুরছে। চোখে অন্ধকার দেখছেন। বৃষ্টিতে অন্ধকার রাস্তায় প্রায় আধ ঘন্টা অপেক্ষার পরে বাসের কর্মীরা বিকল্প চালকের ব্যবস্থা করে ফের যাত্রা শুরু করেন। বাসকর্মীরা জানান, বেহাল জাতীয় সড়কে বাস চালাতে গিয়ে এ ভাবে প্রতিদিন পরিবহণ কর্মীরা অসুস্থ হচ্ছেন। দিনে একবার নয়। ময়নাগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটে ৬২ কিলোমিটার রাস্তায় তাঁদের দিনে কমপক্ষে ছয়বার যাতায়াত করতে হচ্ছে। ওই দীর্ঘ রাস্তায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ কিমি এলাকা। বিপজ্জনক খানাখন্দ পার করে নিরাপদে যাত্রী পৌছে দেওয়ার চাপ অনেকে সামাল দিতে পারছেন না। গৌরাঙ্গবাবু বলেন, “একে খারাপ রাস্তা। তার উপরে যানজট। সময় মতো গন্তব্যে পৌছনোর চিন্তা। মাথা ঠিক থাকে না। যে কোনও ভাবে বাস চলালে তো চলবে না। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হয়। পরিবারের কথা ভেবে খুব অসহায় মনে হয় নিজেকে। কেন যে রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।” |
|
|
|
|
|