তিন দিন ধরে রাস্তা কেটে অবরোধ চললেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। যানবাহনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হলেও প্রশাসনের তরফে সমস্যার সমাদানে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। রাস্তা সারানো নিয়ে অবশ্য বার বার চেষ্টা সত্ত্বেও পূর্ত দফতরের কোনও আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
বসিরহাট শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ইটিন্ডা রোডের সংস্কার নিয়ে বিক্ষোভ, অবরোধ এই প্রথম নয়। কয়েক বার প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাপ্পি দেওয়া হলেও রাস্তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়েছে। যার অন্যতম প্রধান কারণ রাস্তার নীচে দিয়ে যাওয়ার জলের লাইন। ভারী যানবাহন, বিশেষত বড় বড় ট্রাকের যাতায়াতের ফলে চাকার চাপে মাটির তলায় ওই পাইপ ফেটে বিপত্তি ঘটছে। ঘোজাডাঙা সীমান্তে পণ্য পরিবহণের জন্য ইছামতীর উপরে সেতুর সঙ্গে এই রাস্তার যোগ রয়েছে। ফলে পণ্যবাহী ট্রাকগুলি এই পথেই চলাচল করে। ভারী ভারী ট্রাকের যাতায়াতের কারণে হাস্তার এমন অবস্থা বলে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হলেও, স্থানীয় মানুষের পাল্টা বক্তব্য, ইছামতী সেতুর সঙ্গে এই রাস্তার যোগ থাকায় ঘোজাডাঙা সীমান্তে যাওয়ার জন্য পণ্যবাহী ট্রাক যে এ পথে চলাচল করবে সেটাই স্বাভাবিক। সে কথা মাথায় রেখেই রাস্তার আমূল এবং উপযুক্ত সংস্কার করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে বার বার সামান্য তাপ্পি দিয়েই কাজ সারা হচ্ছে। আবার কিছু জায়গায় একেবারেই সংস্কার হয়নি। |
এ দিকে তিন দিন ধরে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ চললেও পুলিশের বক্তব্য তাঁরা ঘটনার কথা জানেনই না। যদিও ঘটনাস্থলের দূরত্ব থানা থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার। বৃহস্পতিবার ঘটনা জানার পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় মানুষ ও ব্যবসায়ীদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও বিক্ষোভকারীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকায় সমস্যার সমাধান হয়নি। পুলিশের দাবি, পূর্ত দফতর থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে রাস্তা মেরামতির টাকার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রাস্তার নীচে দিয়ে যাওয়া পাইপের ফাটল মেরামতির জন্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে বলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাইপ লাইনের মেরামতির জন্য কোটি টাকার উপর খরচ হবে। এত টাকার সংস্থান করা এখনও সম্ভব নয়। বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “পূর্ত দফতর জানিয়েছে, রাস্তার নীচে পাইপ ফাটার কারণে জল বের হওয়ায় মেরামতির কাজ করা যাচ্ছে না। তাই সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ভেবে পুরসভা, পূর্ত দফতর ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি এই তিন দফতরের সমন্বয়ের মাধ্যমে পাইপ লাইন ঠিক করে রাস্তা মেরামতির কাজ যাতে করা যায় তার চেষ্টা চলছে।”
মহকুমা পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার তপন নস্কর বলেন, “ওই রাস্তার সংস্কার নিয়ে টেন্ডারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে কাজ শুরু হতে আরও দিন পনেরো লাগবে।” তবে রাস্তায় যাতায়েতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুলিশ সহযোগিতা করতে ওই অংশে তাপ্পি দিয়ে আপাতত চলাচলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”
যেখানে রাস্তা কাটা হয়েছে সেই ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার বিভু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক দিন ধরেই রাস্তা মেরামতির জন্য আমরা পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা করছি। এলাকার সাংসদকেও সম্যসার কথা জানানো হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতররে সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ওরা রাস্তার নীচে পাইপের ফাটল মেরামতি করে দেবেন বলেছেন।
কংগ্রেস নেতা বাবলি বসু বলেন, “মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে বিফল হয়ে বাধ্য হয়ে এ ভাবে প্রতিবাদে নেমেছেন। প্রশাসনের উচিত মানুষের সেই দাবিকে মর্যাদা দিয়ে অবিলম্বে রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা করা।” ওই রাস্তায় নিত্য যাতয়াত করতে হয় দশম শ্রেণির ছাত্র কাজল মণ্ডল, বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী চন্দ্রা ঘোষকে। তাদের কথায়, “রাস্তার যা অবস্থা তাতে যাতায়াত করাই দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে। তার উপর তিন দিন ধরে রাস্তা কেটে অবরোধ, বিক্ষোভের জেরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ রাস্তা মেরামতি নিয়ে প্রশাসনের কারও কোনও উচ্চবাচ্য নেই। বোঝাই যাচ্ছে না যে প্রশাসন বলে কিছু আছে।”
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য ও বসিরহাটের বাসিন্দা নিরঞ্জন সাহা বলেন, “প্রশাসন যে কোনও কাজ করছে মানুষের এমন বেপরোয়া মনোভাবই তার প্রমাণ। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার মানুষ রাস্তা সারানোর জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রশাসন কোনও কাজ না করায় তাঁদের এই আন্দোলনের প্রতি আমার সমর্থন রয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও আন্দোলনে নামব।”
বসিরহাটের পুরপ্রধান কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, “রাস্তা বন্ধের জন্য শহরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অথচ বার বার পূর্ত দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোও কথাই শুনছেন না। তাঁদের একটাই বক্তব্য, রাস্তার নীচে পানীয় জলের পাইপ লাইন ঠিক না করা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের কাজ করা সম্ভব নয়।” এই অবস্থায় পুরপ্রধান জানিয়েছেন, আগামী এক দিনের মধ্যে রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু না হলে মানুষের সঙ্গে রাস্তায় নামবেন তিনিও। |