|
|
|
|
সুবর্ণরেখা ব্যারাজ প্রকল্প |
কর্মীদের বঞ্চনার অভিযোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সরকারি নির্দেশ মেনে নিয়োগ হয়েছিল। নিয়মিত বেতন-বৃদ্ধিরও উল্লেখ ছিল নির্দেশিকায়। তা সত্ত্বেও স্থায়ী-কর্মীর মর্যাদা দেওয়া তো দূর-অস্ৎ, সরকারি নিয়মে বেতন-বৃদ্ধিও হয়নি! এনভিএফ (ন্যাশনাল ভলেন্টারি ফোর্স) থেকে সুবর্ণরেখা ব্যারাজ প্রকল্পে কাজ করতে আসা ‘কন্টিজেন্ট গার্ড’দের এ ভাবেই বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে এ বার আন্দোলন শুরু করতে চলেছে স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন। সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুব্রত সরকার বলেন, “সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বছরের পর বছর এই সব কর্মীদের বঞ্চনা করেছে বাম সরকার। এখনও সেই একই পদ্ধতিতে হাঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে সেচ-দফতর। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী ও সেচমন্ত্রীকে জানাব। যাতে ওই কর্মীরা বেতন-কাঠামোর সুবিধে পান ও অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা পান, সেই দাবিই জানাব।” এ বিষয়ে সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়র চিত্তরঞ্জন মাঝি বলেন, “কর্মীদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যেই ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার অবশ্য বক্তব্য, “কোনও কর্মী বঞ্চিত হোন, তা আমরা চাই না। তবে সবটা আমার হাতে নেই। বিষয়টি নিয়ে অর্থ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সুবর্ণরেখা ব্যারাজ-প্রকল্পের কাজ থমকে দীর্ঘ দিন। মেদিনীপুরের খাসজঙ্গল ও কেশিয়াড়ির কাছে নেপোয় প্রকল্পের অফিস তৈরি, ব্যারাজের জায়গা ভসরাঘাটে জমির উন্নীতকরণ, রাজ্য বন ও কৃষি দফতরের সহায়তায় ঝোড়বাঁধ তৈরির মাধ্যমে আংশিক ভূমিক্ষয় রোধ, বেলদা রেল-স্টেশন থেকে নির্মাণ-সামগ্রী প্রকল্প এলাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কুকাই থেকে হাসিমপুর পর্যন্ত রাস্তা তৈরি হয়েছে মাত্র। কিন্তু সেচ-প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়নি দু’-দশকেও। পুরো প্রকল্পটি নিয়েই তৈরি হয়েছে সংশয়। ১৯৯৭ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩৭ জনকে ‘কন্টিজেন্ট গার্ড’ হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল সুবর্ণরেখা ব্যারাজ প্রকল্পে। মূলত প্রকল্প-অফিসেই তাঁদের কাজ। তাঁদের বেতন নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল সরকার। এই কর্মীদের আবার ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে মাস-প্রতি নির্দিষ্ট বেতন। যাঁরা সর্বক্ষণের কর্মী অথচ বছরভর কাজ করেন না, যাঁরা পার্ট-টাইম করেন অথচ বছরভর কাজ করেন, আবার যাঁরা পার্ট-টাইম করেন কিন্তু বছরভর কাজ করেন না--এমন কর্মীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাসিক বেতন। কিন্তু যাঁরা সর্বক্ষণ কাজ করেন ও বছরভরই করেন--তাঁদের জন্য পে-স্কেলের সংস্থান ছিল। বেতন সরকারি নিয়ম মেনেই স্থির হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি বলেই অভিযোগ।
এই সব কর্মীদের বক্তব্য, তাঁরা এনভিএফে (অস্থায়ী পুলিশকর্মী) কাজ করতেন। সেখান থেকেই ‘কন্টিজেন্ট গার্ড’ হিসাবে সুবর্ণরেখা প্রকল্পে যোগ দেন স্থায়ী সরকারি কর্মীর মর্যাদা পাওয়ার আশায়। কিন্তু পরে দেখেন, তাঁদের অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধে অর্থাৎ টিএ, ডিএ দেওয়া হলেও বেতনক্রম অনুযায়ী বেতন-বৃদ্ধি হচ্ছে না। এমনকী অবসরের সময়ে অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে না। কর্মরত অবস্থায় মৃতের পোষ্যকে চাকরি দেওয়া তো দূরের কথা, সরকারি সাহায্য-সহযোগিতাও মেলেনি। এমনকী কারও ‘সার্ভিস-বুক’ পর্যন্ত নেই বলে অভিযোগ! স্বাভাবিক কারণেই কর্মীরা সমস্ত রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই কোরেশ আলি ও কেষ্টপদ বেরা নামে দু’জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি সূর্যকান্ত শীট ও হরেন্দ্রনাথ মাইতি নামে দু’জনকে অবসরের চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রেই কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা মেলেনি বলে অভিযোগ। সরকারি দফতরে কেন এই বঞ্চনা? এই প্রশ্ন তুলেই এ বার আন্দোলনে নামছে ফেডারেশন। কর্মীদের আক্ষেপ, “এনভিএফ ছেড়ে এখানে গিয়েছিলাম সরকারি সুযোগ-সুবিধার আশায়। দীর্ঘ দিন এনভিএফে কাজ করলে যোগ্যতা-অনুযায়ী ভাল কিছুর সুযোগ থাকত। এখানে শুধুই বঞ্চনা!”
|
|
|
|
|
|