একটা প্রতীক্ষার অবসান। দ্বিতীয় প্রতীক্ষা এখন আরও জোরদার।
যুবরাজ সিংহ যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার পালা শেষ করে বাড়ি ফিরল। কিন্তু এ বার তার বন্ধু থেকে ভক্ত সবার মনে একটাই জিজ্ঞাসা, আবার কবে যুবরাজকে খেলতে দেখা যাবে?
প্রথমেই বলি, যুবরাজ ফের মাঠে ফিরতে পারবে। তবে সময় লাগবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও অন্তত ছ’মাস তো বটেই। এই অবস্থায় একজন চিকিৎসক হিসাবে একটা পরামর্শ ওকে দিতে পারি, নিজেকে সুস্থ প্রমাণ করতে কোনও তাড়াহুড়ো কোরো না। জোর করে নয়, ও যেন মাঠে ফেরে ওর চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই। |
যুবরাজের যে কেমোথেরাপি হয়েছে তার সাধারণত কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। কিছু থাকে অল্প সময়ের জন্য এবং কিছু দীর্ঘকালের জন্য। অল্প সময়ের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে চুল পড়া, বমি-বমি ভাব। এগুলো বেশি দিন থাকে না। কিন্তু কেমোথেরাপির একটা ওষুধের জন্য কয়েক বছর পর দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। ওই ওষুধ আসলে ফুসফুসে ফাইব্রোসিস তৈরি করে। ফলে বায়ুধারণ ক্ষমতা কমে যায়। যা স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। এ ছাড়া আর একটি সমস্যা অনেক দিন থাকতে পারে। সেটিও খেলাধুলোর ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেক সময় কেমোথেরাপির পর হাত ও পায়ের স্নায়ুগুলো ঝিনঝিন করে। যা বেশ কয়েক মাস ভোগাতে পারে। তাই যুবরাজের পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াটা চলতে পারে বেশ কয়েক মাস ধরে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত।
যুবরাজের যে জার্ম সেল ক্যানসার হয়েছিল সেই ধরনের রোগের ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার হার ৭০-৮০ শতাংশ। এর মানে প্রতি ১০০ জনে ৮০ জন পুরো সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে ২০ জন পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে না। এই ২০ জনের দলে কারা পড়বে সেটা আগে থেকে বলা যায় না। হলেও পাঁচ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আর যুবরাজকেও ধৈর্য ধরতে হবে।
আমার মনে হয়, ওর পক্ষে টি-টোয়েন্টি বা একদিনের ম্যাচে ফেরা সহজ। টেস্ট ম্যাচের পাঁচদিনের পরিশ্রম ওর পক্ষে কঠিন হবে। যুবরাজকে শুধু একটাই অনুরোধ, “আমি সুস্থ আছি” প্রমাণ করতে যেও না। অনেকে নিজেকে সুস্থ দেখাতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে ফেলে। সে রকম ক্ষেত্রে কিন্তু ক্রীড়াজীবন আরও সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। যুবরাজের বন্ধু ও আশপাশের লোকের কাছে অনুরোধ, ওকে প্রত্যাশার চাপে ডুবিয়ে দেবেন না। ওকে ওর মতো থাকতে দিন।
(লেখক প্রখ্যাত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ) |