লাল টি শার্ট পরা চেহারাটা যখন ইডেনের ড্রেসিংরুম থেকে বেরোল, তখন ঘড়িতে সাতটা দশ। পরিচিত ভঙ্গিতে লঘু পায়ে উইকেটের দিকে হেঁটে যাওয়া। ভারত-অধিনায়ক থাকার সময় যে ভাবে যেতেন। কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাল্কা কুশল বিনিময়। তার পরেই উইকেটের সামনে বাইশ গজে গিয়ে ক্রিজের সামনে ব্যাট হাতে স্টান্স নিয়ে দাঁড়ানো। একাকী মিনিট দুয়েকের শ্যাডো প্র্যাক্টিস। ঠিক তখনই ডান দিকে নাইটদের নেটে ব্যাটিং সেরে বেরোচ্ছেন গম্ভীর। রয়্যালস অধিনায়ককে দেখে হাত তুললেন নাইট অধিনায়ক। অনেকটা কুর্নিশের ভঙ্গিতে। আর হাত মেলালেন নাইটদের অনেকেই। বালাজি, উনাদকট, ইকবাল আবদুল্লা।
হাঁটতে হাঁটতে রাহুল তখন নিজেদের নেটে। শুরু মিনিট দশেকের নকিং। ইডেনের প্র্যাক্টিস উইকেটে হয়তো শেষ বার। এমনিতে আইপিলে কোনও নির্দিষ্ট কেন্দ্রে কারও বিদায়ী ম্যাচকে ঘিরে আবেগ ঘনীভূত হওয়ার জায়গা নেই। এটা ‘ফ্যালো কড়ি, মাখো তেল’-এর ক্রিকেট। কিন্তু আর পাঁচ জন আর রাহুল দ্রাবিড় তো ঠিক এক নন। ইডেনে সম্ভবত শেষ বার আজ শুক্রবার ব্যাট হাতে দেখা যাবে তাঁকে। যে মাঠে লক্ষ্মণের সঙ্গে ঐতিহাসিক জুটি আছে, আছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দু’ইনিংসে সেঞ্চুরি। তবু সিএবি আশ্চর্যজনক ভাবে উদাসীন। ক’দিন আগেই সিএবি যুগ্মসচিব জানিয়েছিলেন, সিএবি-র মিউজিয়ামে হবে ‘রাহুলস কর্নার’, তার উদ্বোধনও হবে কেকেআর-রাজস্থান ম্যাচের আগে। প্রতিশ্রুতিই সার, আজ শুক্রবার ইডেনে ম্যাচের আগে রাহুলকে সম্মান জানানো দূরের কথা, স্কোরবোর্ডেও কিছু ফুটে ওঠার সম্ভাবনা নেই। উল্টে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া বলছেন, “আগে তো সচিনকে সংবর্ধনা দিই। তারপর দ্রাবিড়ের কথা ভাবা যাবে। আর আইপিএলের মাঝে এ সব হয় নাকি?” |
অকাট্য যুক্তি! এতে অবশ্য রাহুল শরদ দ্রাবিড়ের কিছু এসে যায় না। আগের রাতে ম্যাচ খেলে এ দিনই দুপুরে উড়ে এসেছেন শহরে, ঐচ্ছিক প্র্যাক্টিসে না আসার সুযোগ ছিল। কিন্তু রাহুল সেই ঝুঁকিই নেবেন না। অবসরের পরে আইপিএল-এও নয়। রয়্যালস টিমের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত, সবটাই তিনি। বাংলার ছেলে শ্রীবৎস গোস্বামী আগে ছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে, এ বার রাজস্থানে। রাহুলের টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বলছিলেন, “অনেকে বলে, রাহুল ভাইয়ের সঙ্গে সহজে মেশা খুব কঠিন। একদম ভুল। আমাদের টিমের যে কেউ যখন তখন ওর রুমে যেতে পারে। এবং যে কোনও সময়ে।”
কাগজ-কলমে ধারে ও ভারে নাইটদের অনেক এগিয়ে থেকে আজ ইডেনে শুরু করার কথা। ‘রাজস্থানে রক্তপাত’ হলেও। আইপিএল ফাইভে শুরুতেই হারের হ্যাটট্রিক বেঙ্গালুরুতে আটকানো গিয়েছে, ব্যাটে রান এসেছে অধিনায়কের। ইডেনের নেটেও ব্যাটে-বলে ভালই হচ্ছিল গম্ভীরের। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ম্যাচে যে টিম খেলেছিল, সেটাই খেলানোর কথা ইডেনে। অর্থাৎ ম্যাকালাম বাইরে, শুরুতে কালিস আর গম্ভীর। তিনে বিসলা। দুশ্চিন্তার কাঁটা শুধু লক্ষ্মী। নেটে বল করতে গিয়ে কুঁচকিতে লেগেছে, আজ সকালে ফিজিও অ্যান্ড্রু লিপাস দেখে ঠিক করবেন খেলার মতো অবস্থায় আছেন কি না।
রাহুল ছাড়া এই রাজস্থানে ভারী নাম নেই। অশোক মেনেরিয়া, অঙ্কিত চহ্বাণ, অমিত সিংহ, সিদ্ধার্থ ত্রিবেদীরাই টিমটার মেরুদণ্ড। ওয়ার্ন জমানার রীতিনীতি খুব একটা বদলাননি রাহুল। উদাহরণ ‘পিঙ্কি’। গোলাপি রঙের পুতুলের বিশেষত্ব বলতে টিমে কেউ কোনওরকম বেগড়বাঁই করলেই পিঙ্কির সঙ্গী হয়ে কাটাতে হবে টানা চব্বিশ ঘণ্টা। এক মুহূর্ত পিঙ্কিতে ছেড়ে থাকার উপায় নেই। টিম মিটিংয়ে দেরি, প্র্যাক্টিসে দেরি বা ব্রেকফাস্ট টেবলে দেরির জন্য পিঙ্কির সঙ্গী হতে হয়েছে রয়্যালসদের অনেককেই। এখন যেমন পিঙ্কিকে ঘাড়ে করে ঘুরছেন টিমের মিডিয়া ম্যানেজার। ‘পিঙ্কি’-কে মূলত সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেই আমদানি করেছিলেন ওয়ার্ন। আইপিএল ফাইভে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে পিঙ্কির টিম জিতেছে দুই, হার এক। দুইয়ের মধ্যে নাইটদের কপালে ক’দিন আগেই জুটেছিল হার। পিঙ্কি হেসেছিল। ইডেনে কী হবে? |