তিনে তিনের স্বপ্নভঙ্গ।
রোদ্দুর নয়, সৌরভের ব্যাট থেকে প্রাপ্তি বলতে এক রাশ মন খারাপ। এমনকী তাঁর বিখ্যাত ক্রিকেটমস্তিষ্কও আজ বাঁচাতে পারল না টিম পুণেকে।
ফুলকি দিয়েও নিভে গেলেন অশোক দিন্দা।
নতুন আমদানি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজকে খেলিয়ে লাভ বলতে ১১ রান। জমার খাতায় শুধু গিলক্রিস্টের উইকেট।
সোজা কথায়, পঞ্চনদের দেশ থেকে দাদা সমর্থকদের জন্য সুখবর নেই। তিনে তিনের মোহভঙ্গ তো হলই, সঙ্গে ব্যাটসম্যান সৌরভকে নিয়েও দুশ্চিন্তার আবহাওয়া তৈরি হয়ে গেল। তিনটে ম্যাচ হয়ে গেল, ব্যাটে তবু রান নেই। পরিসংখ্যান বলছে, আইপিএল ফাইভে তিন ম্যাচে সৌরভের রান ৩, ২০, ১৬। যা নিয়ে ব্যাটসম্যান সৌরভের হয়ে তর্ক করতে পারবেন না তাঁর অতি বড় সমর্থকও। অথচ মোহালির শুরুটা যথেষ্ট আশার আলো দেখিয়েছিল। ম্যাচের প্রথম ওভারের শেষ বলটা প্রবীণ কুমারের মাথার উপর দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন সৌরভ। কিছু পরে স্লিপ আর গালির মাঝামাঝি নিখুঁত নিশানা বেছে নিয়ে এল চার রান। ব্যাস, ওইটুকুই। ছ’নম্বর ওভারে ডিমিট্রি মাসকারেনহাসকে বোলিং আক্রমণে নিয়ে এলেন গিলক্রিস্ট এবং প্রথম বলেই স্বপ্নভঙ্গ। জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল: সৌরভ ক মার্শ বো মাসকারেনহাস ১৬। |
আর সৌরভের ফেরা থেকেই যেন শেষের শুরু। পুণে অধিনায়ক ডাগআউটে ফেরার দু’বল পরে একই রাস্তায় হাঁটলেন মার্লন স্যামুয়েলস। আর বাকিরা? দ্রুত স্কোর বদলাচ্ছে তখন। পুণে ওয়ারিয়র্স ২৯-৩..৫১-৪...৭৭-৫...৯৯-৬। কিংস শিবিরে যত চওড়া হচ্ছে প্রীতি জিন্টার হাসি, যত তিনি চেয়ার ছেড়ে লাফাচ্ছেন, ততটাই অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে পুণের টিম মালিক সুশান্ত রায়ের মুখ। কিন্তু লাল-সাদায় মোড়া স্টেডিয়ামের মাঝে এক চিলতে নীল পৃথিবীর কোনঠাসা হয়ে পড়া তখনও বোধহয় বাকি ছিল।
যে রান আউট দশ বারের মধ্যে দশ বারই হয় গলি ক্রিকেটে, আজ সেটাই ফস্কে বসলেন জেসি রাইডার! খেলার তখন ন’নম্বর ওভার। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজের নিখুঁত ফ্ল্যাট থ্রো এসে পড়ল সোজা বোলার রাইডারের হাতে। শন মার্শ তখন প্রাণপণ দৌড়োচ্ছেন। নিশ্চিত রান আউট। অথচ বল হাত ফস্কে গেল রাইডারের। বলের বদলে উইকেটে হাত লাগালেন রাইডার। ফিরে আসার যাবতীয় স্বপ্নের ওখানেই ইতি। ওই যে কপাল পুড়ল পুণের, আর প্রীতির টিমের কাছ থেকে দু’পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়া গেল না। আইপিএল ফাইভের প্রথম দল হিসেবে টানা তিনটে ম্যাচও জেতা হল না সৌরভের। ফর্মে ফিরে মার্শ শেষ পর্যন্ত করে গেলেন ৫৪ বলে ৬৪। ম্যাচ শেষে পুণে অধিনায়ক সৌরভ বলছিলেন, “খুব হতাশ লাগছে। এই উইকেটে ১৪০ তোলা যেত। খারাপ ব্যাটিংয়ের খেসারত দিতে হল।”
ভুল বলেননি পুণে নেতা। চলতি আইপিএলে মোহালিতে এটাই ছিল প্রথম ম্যাচ। আর সেখানকার উইকেট দেখলে যে কোনও টি-টোয়েন্টি ভক্তের ভুরু কুঁচকে যাবে নিশ্চয়ই। বল পড়ে থমকে আসছে, স্ট্রোক খেলতে অসুবিধায় পড়ছেন ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু এই উইকেটে ১৩০ তুলতে পারলেই লড়াই করার ভাল সুযোগ থাকত। তবে পুণের স্কোরকার্ডে যে সে রানটাও উঠবে না, এক ওভার বাকি থাকতেই যে ১১৫ রানে থমকে যাবে পুণের ঘোড়া, এতটা বোধহয় পঞ্জাবের খুব বড় সমর্থকও আশা করতে পারেননি। এর আগের দুটো ম্যাচে তো গিলক্রিস্টের বোলাররা ১৯১ এবং ১৬৬ রান দিয়ে বসে আছেন! আজ মাসকারেনহাসের হাত ধরে যেন তাঁদের শাপমুক্তি হল। অসাধারণ বল করে চার ওভারে ২৫ রান দিয়ে পাঁচটা উইকেট তুলে নিলেন ইংল্যান্ডের পেসার।
পুণের সামনে তা হলে এ বার অঙ্কটা কী? পঞ্জাবের মতো দুবলা-পাতলা দলের কাছে হারের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে সৌরভদের নেমে পড়তে হচ্ছে টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী টিমের বিরুদ্ধে। চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে দাদা বনাম ধোনি। সেই ধোনি, যাঁরা কিনা বৃহস্পতিবারই ২০৫ তাড়া করে জিতেছেন। পুণের ঘোড়ার সামনে এখন চড়াইয়ের কঠিন রাস্তা। তবে যে দলের সেনাপতির ক্রিকেটজীবনের স্লোগানের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন শব্দটা ওতঃপ্রত ভাবে জড়িত, সেই দলের কাছে ফেরার যুদ্ধ কি খুব কঠিন হবে? |