বক্সার জঙ্গলে বাইসনের পর জলদাপাড়ায় এ বার হরিণ মেরে মহাভোজের ঘটনা ঘটল। বুধবার জলদাপাড়া পশ্চিম রেঞ্জের জঙ্গল লাগোয়া বংশীধরপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। এক মাসের মধ্যে দুটি বন্য জন্তুর শিকার এবং মহাভোজের ঘটনার জেরে পরিবেশীপ্রেমীদের মধ্যে বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হরিণটি মেরে শুরু ভাগবাটোয়ারা নয়, ৩৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রিও হয়। ঘটনার খবর পেয়ে বংশীধরপুর গ্রামের এক বাড়িতে হানা দিয়ে রান্না করা হরিণের মাংস-সহ এক বৃদ্ধকে গ্রেফতার করে বন দফতর। এই ঘটনার জড়িত সন্দেহে ছয় জনকে খোঁজা হচ্ছে। বুধবার ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দুপুর দুটা পর্যন্ত বিষয়টি জানেন না রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। তিনি বলেন। “আমাকে তো কেউ কিছু জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” বন দফতরের কোচবিহারের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখর বলেন, “গ্রামে ঢুকে পড়া হরিণটিকে পিটিয়ে বা খুঁচিয়ে মারা হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। সেই মাংস ভাগাভাগির পাশাপাশি বিক্রিও হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।” বন দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়া জঙ্গল লাগোয়া আটিয়াবাড়ি চা বাগানে ঢুকে পড়া একটি বাইসনকে খুঁচিয়ে মেরে মহাভোজের পাশাপাশি মাংসও বিক্রি করে কয়েকজন বাগানের বাসিন্দারা। জঙ্গল লাগোয়া বংশীধরপুর গ্রামের খেতগুলিতে জঙ্গল থেকে নিয়মিত হরিণের পাল ঢোকে। একইভাবে ওই দিন বিকালে এক দল সম্বর হরিণ গ্রামের ভুট্টা খেতে হানা দেয়। কয়েকজন বাসিন্দা বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে একটি হরিণকে মেরে ফেলেন বলে অভিযোগ। তার পরে খেতের মধ্যে হরিণটির চামড়া ছাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কয়েক কেজি মাংস ভাগ বাটোয়ারা করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সন্ধ্যায় বাকি মাংস ওই গ্রাম আশেপাশের গ্রামে বিক্রি করা হয়। মাংস না পেয়েই সম্ভবত কেউ বন দফতরে খবর দেন। বন দফতর এর পরে এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। বন দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুটা মাংস একটি ভুট্টা খেতে পুঁতে রাখা হয়। সেই মাংস উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া বংশীধরপুর গ্রামের বাসিন্দা মনীন্দ্র মণ্ডলের বাড়ি থেকে রান্না করা মাংস উদ্ধার হয়। ৭০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মনীন্দ্রবাবুর পুত্রবধূ রীতা দেবী বলেন, “শ্বশুরমশাই পাশের গ্রামের একজনের থেকে ২৫০ গ্রাম মাংস কেনেন। সন্ধ্যাবেলায় রান্না করছিলাম। সেই সময় মাংস-সহ বৃদ্ধ মানুষটাকে তুলে নিয়ে যান বনকর্মীরা। এর বাইরে কিছু জানি না।” আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, “বন দফতরের কর্মীদের নজরদারি গাফিলতিতে ঘটনাগুলি ঘটেছে। এখনই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না গেলে ভবিষ্যতে এই রকম আরও হবে।” রাজ্যের প্রাক্তন বন মন্ত্রী অনন্ত রায়ের মতে, “সচেতনা বাড়াতে প্রচার অভিযান হচ্ছে না। কর্মীদের মধ্যে কাজে সমন্বয় নেই।” |