হাতিদের ঠেকাতে দু’দিনের কর্মশালা
ভারত-নেপাল সীমান্ত নকশালবাড়ি এলাকায় উত্তরোত্তর বেড়ে চলা মানুষ-হাতি সঙ্ঘাত রোধ করতে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির কাজে নামল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড বা ডব্লিউডব্লিউএফ। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির অদূরে সুকনায় ওই সংস্থার উদ্যোগে এই ব্যাপারে শুরু হয়েছে দু’দিনের কর্মশালা। নেপাল ও পশ্চিমবঙ্গের বনকর্তাদের উপস্থিতিতে তৈরি করা হচ্ছে ওই অ্যাকশন প্ল্যান। সংস্থার রাজ্য অধিকর্তা সরস্বতী সেন জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত অ্যাকশন প্ল্যান তাঁরা কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকে জমা দেবেন। পাশাপাশি উদ্যোগী হবেন যাতে ওই অ্যাকশন প্ল্যানকে সামনে রেখে মানুষ-হাতি সঙ্ঘাত রোধ করতে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে পদক্ষেপ করা শুরু হয়। রাজ্য অধিকর্তা বলেন, “ইতিমধ্যেই আমরা দু’বার নেপালে এবং একবার শিলিগুড়িতে এই ব্যাপারে সমস্ত স্তরের মানুষের সঙ্গে মত বিনিময় করেছি। এ বার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক পদক্ষেপ করবেন।” ডব্লিউডব্লিউএফের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনও। তিনি বলেন, “নেপালে সীমান্ত এলাকায় মানুষ-হাতি সঙ্ঘাত সত্যিই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি ভাবে আমাদের অফিসাররা নেপালের বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করার চেষ্টা করছেন। অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে কাজ করা গেলে তো ভালই।” নেপাল বন দফতরের পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক অধিকর্তা মনোজ কৈরালাও মনে করেন, অ্যাকশন প্ল্যান ছাড়া এই সমস্যার সমাধানে এগোনো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “ডব্লিফডব্লিউএফের এই উদ্যোগে আমাদের তরফে সাহায্য করা হবে।” বুনো হাতির স্বভাবই হল এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো। ওই স্বভাবের জন্যই হাতির পাল সঙ্কোশ থেকে রওনা হয়ে নকশালবাড়ির মেচি নদী পেরিয়ে নেপালে ঢুকে পড়ে। আবার সেখান থেকে পুরানো পথে ডুয়ার্সে ফিরে যায়। বুনো হাতির এই করিডরে গত এক দশকে জনবসতি যেমন বেড়েছে তেমনই মানুষ-হাতি সঙ্ঘাত বাড়ছে। গত এক দশকে বুনো হাতির হামলায় শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। গত এক বছরে কার্শিয়াং বন বিভাগ লাগোয়া এলাকাতেই মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। জখম হয়েছেন অন্তত ৭ জন। অন্যদিকে, নেপালে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাল্টা হামলায় অন্তত ৭টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বুনো হাতির পাল ফসল, ঘরবাড়ি নষ্ট করছে। অন্যদিকে, বন দফতরের অভিযোগ, বুনো হাতির করিডরে জনবসতি গড়ে তোলা বাসিন্দারা জঙ্গলে তাড়ানোর পরিবর্তে পাল্টা হামলা করছে। এদিনের কর্মশালায় এমনই অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন দার্জিলিঙের বনপাল সন্দীপ সুন্দ্রিয়াল। তিনি জানান, ২০০১ সালে একটি স্ত্রী হাতি নেপাল এবং নকশালবাড়ি এলাকায় এক মাসে ১৩ জনকে মেরে ফেলে। তার মধ্যে নেপালের বাসিন্দা ছিলেন ৩ জন। খোঁজ নিতে গিয়ে বনকর্তারা জানতে পারেন, হামলার শিকার হয়ে নেপালে ওই স্ত্রী হাতির শাবকের মৃত্যু হয়। ওই বনপালের মতে, “হাতির পাল লক্ষ করে গুলি ছোঁড়া বন্ধ না-হলে সঙ্ঘাত থামবে না।” নেপালে হাতির পালের উপরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে কার্শিয়াং বন বিভাগের পানিঘাটার রেঞ্জ অফিসার ভূপেন বিশ্বকর্মা জানান, ধান ও ভুট্টার মরসুমে বুনো হাতি নেপালে ঢুকে পড়লে যেভাবে নির্বিচারে গুলি চলে তাতে জখম হওয়ার ভয়ে তাঁরা মেচি নদীর চরে নামতেই ভয় পান। অ্যাকশন প্ল্যানে কী কী প্রস্তাব থাকবে এ দিন তার একটা আঁচ মিলেছে। প্রাক্তন বনকর্তা মনোজ নন্দীর মতে, জঙ্গলে হাতির খাবার বানাতে হবে। বাঁশ, কাঁঠাল, চালতা, খয়েরের মতো গাছের সংখ্যা বাড়াতে হবে। জলপাইগুড়ির ডিএফও কল্যাণ দাস এবং বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও সুমিতা ঘটক জানান, তাঁরা নিজেদের এলাকায় ইতিমধ্যেই এ কাজ শুরু করেছেন। কার্শিয়াঙের ডিএফও ওয়াইটি এডেন জানান, খাবার আছে বলেই বুনো হাতির পাল বছরের ছয় মাস এখন তাঁদের এলাকাতেই থাকছে। পাশাপাশি, সন্ধ্যা নামলেই বুনো হাতির পাল নেপালে ঢুকে পড়ছে। অনুষ্ঠানে বন্যপ্রাণ বিভাগের বনপাল বিপিন সুদ, দার্জিলিঙের ডিএফও সিদ্ধার্থ রায়, বৈকুণ্ঠপুরের ডিএফও ধর্মদেব রাই-সহ অন্যান্যরা অংশ নেন। আজ, শুক্রবার কর্মশালা শেষ হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.